আ. লীগ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনতাই করা হয়েছে : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪২ এএম, ১১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০২:৩৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনতাই করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের নামে তামাশা করা হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনতাই করা হয়েছে। ঐসব এলাকার জনগণ ঘৃণাভরে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আমরা গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সীমিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোট উৎসব সৃষ্টি করে নির্বাচনকে সার্থক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, ব্যর্থ, অযোগ্য, ফ্যাসিস্ট সরকার তার আজ্ঞাবহ প্রশাসন ও র্নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে এই নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা নির্বাচনের নামে তামাশা, প্রহসনের তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে পুনঃনির্বাচন দাবি করছি।
তিনি বলেন, দেশের ৬ টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১ টি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উপনির্বাচন, ৪ টি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন এবং ৬ টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বরের প্রেসব্রিফিং করে জাতিকে এসব নির্বাচনের হালহকিকত জানিয়েছিলাম এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলাম। একই বিষয়ে নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে ৮ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনের বরাবরে সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আমরা আশা করেছিলাম, নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের ভোটাধিকারের কথা বিবেচনা করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তারা তা করে নাই। বরং তাদের র্নিলিপ্ততা, অধিকাংশ জায়গায় তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরো বেপরোয়া হয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, গতরাত থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। শ্বেত সন্ত্রাস চালিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে ভীতিকর এবং অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। আজ সারাদিন, বিএনপি কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সারাদেশে এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা : বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা দখল করে নেয়। প্রশাসনের সহযোগিতায় অবাধে নৌকা মার্কায় সিল মারে আওয়ামী নেতাকর্মীরা। এই নির্বাচনে গত ৭ দিন যাবৎ রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা নিজেরাই সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনে আগুন দিয়ে সেই ঘটনার দায় বিএনপির উপর চাপিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করে বিএনপির ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে এলাকা ছাড়া করে।
ফরিদপুর জেলার সদর পৌরসভা : ধানের শীষের সকল এজেন্টদের বের করে দিয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে সাধারণ ভোটারদের এবং ধানের শীষ প্রার্থী ও সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এতে দিনকাল পত্রিকার সাংবাদিক নুরুল ইসলামসহ অসংখ্য সাংবাদিককে আহত করা হয়। ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ভোট কেন্দ্রে সাধারণ ভোটাররা প্রবেশ করা মাত্রই সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কর্মীরা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তাদের ভোট নিজেরাই দিয়ে দেয়। সারাদিনই ভোট কেন্দ্রের সামনে পৌর এলাকার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের এনে জমায়েত করে সাধারণ ভোটার ও বিএনপি’র সমর্থক ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান করা হয়।
মধুখালী পৌরসভা : মধুখালী পৌরসভায় দুপুরের পর থেকে সকল ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সকল ভোট কেন্দ্র নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে।
নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলা : রানীনগর উপনির্বাচনে সকাল ৯ টার মধ্যে ধানের শীষ প্রার্থীর বাড়ির আশপাশের ৩ টি ভোট কেন্দ্র বাদে বাকি সকল কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্ট এবং সমর্থকদের মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা অব্যাহত রয়েছে। এই উপজেলা নির্বাচনে ধানের শীষ প্রার্থীর এজেন্টসহ ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও বেড়া উপজেলা : এই দুটি উপজেলা চেয়ারম্যানের উপনির্বাচনে সকাল ৯ ঘটিকার মধ্যে সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান করা হয়। আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাইরের এলাকা থেকে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের দেখানো হয় ভুয়া ভোটার লাইন।
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা : চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ভোট কেন্দ্রই দখলে নিয়ে উৎসব মুখর পরিবেশে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলে। গতকাল দিনের বেলা থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা ফাটিয়ে নৈরাজ্য ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয় নাই। সারাদিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে রাখে।
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা : দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন, বন্ধবেড় ইউনিয়ন ও চর শৈলমারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের আগের দিন রাতেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা সকল ভোট কেন্দ্রগুলো তাদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করে।
নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলা : আজ গোতাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষ এজেন্টদের বের করে দেয় এবং নৌকা প্রতীকের লোকজনদেরকে দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে লাইন ধরিয়ে রাখে কিন্তুু ভিতরে নিজেরাই নৌকা প্রতীকে ভোট দিচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ওয়ারেস আলী মামুন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য- মশিউর রহমান বিপ্লব, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলালসহ প্রমুখ।