সরকার হটাতে ‘জনগণের অভ্যুত্থান’ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৮ এএম, ২৩ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২১ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার হটাতে ‘জনগণের অভ্যুত্থান’ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার দুপুরে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কারাবন্দি সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে ‘রুহুল আমিন গাজী মুক্তি পরিষদের’ উদ্যোগে এই নাগরিক সমাবেশ হয়। গত বছরের ২১ অক্টোরের ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটা অভ্যুত্থান, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উঠে আসা-এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমাদের হাতে অস্ত্র নেই, আমরা অস্ত্রবাজ নই। আমরা সশ্বস্ত্র সংগ্রামের বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিজয় অর্জন করতে চাই।
তিনি বলেন, এরা রাষ্ট্র ও সরকারকে এক করে ফেলেছে এবং সবকিছুতে দলীয়করণ করে ফেলেছে। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ একটি দল যে দলটি কখনোই গণতন্ত্রের বিশ্বাস করেনি। তারা জন্ম থেকেই করেছে। আওয়ামী লীগই সেই দল যারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো সমস্ত দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে, পত্রিকা সব বন্ধ করে দিয়েছিলো। আমার দুঃখ হয়, কষ্ট হয় যে, এই সংবাদপত্রের কর্মী বা সংবাদপত্রের যারা মালিক তাদের একটা বিরাট অংশ আজকে উচ্ছিষ্ট ভোগী হয়ে গেছে। তারা সরকারের একটু সুন্দর দৃষ্টি দেখলে, সরকার একটু আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চাটুকারিতা করছে। যার ফলে একটা ভিন্নভাবে একটা সংবাদমাধ্যম তৈরি হয়ে গেছে বাংলাদেশে। আপনি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো দেখুন-কী অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে, আপনি প্রিন্টিং মিডিয়াগুলো দেখুন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে। একটা-দুইটা পত্রিকা, যারা একটু লিখতেন তারাও লিখতে সাহস করেন না। আমি তাদেরকে দোষারোপ করি না, আমি বলছি যে, দেশে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যারা সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা আজকে এদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে একটা তাঁবেদার রাষ্ট্র হয়েই গেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার একটা পুতুল সরকার। যার ফলে এদেশে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই, রুহুল আমিন গাজীর মতো একজন বিজ্ঞ সাংবাদিক, একজন দেশপ্রেমিক সাংবাদিকদে আজকে ১০ মাস জেলে আটকিয়ে রেখেছে।
সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোথায় তাকে সফল বলবেন। একমাত্র চুরি ছাড়া, দুর্নীতি ছাড়া আর ডাকাতি ছাড়া কোথাও সফল না। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা বার বার বলেছিলাম যে, গরীব মানুষ যারা, যারা দিন আনে দিন খায়, যারা দিনমজুর, যারা ঘরে কাজ করে তাদের তো একদিন কাজ না করলে তারা বাঁচবে না, তাদেরকে তাদের পরিবার-পরিজনকে খাওয়াতে হয়। তাদেরকে যদি খাদ্য নিরাপত্তা না দাও, তাদেরকে যদি টাকা পয়সা না দাও তাহলে লকডাউন সফল হবে না। এই যে অপরিকল্পিত লকডাউন, কঠোর লকডাউন, আরো কঠোর লকডাউন এই যে, কঠোর কঠোর করলো তাতে দেখা গেলো কেউ লকডাউন মানেই না। মানবে কোত্থেকে আমি খেতে পাই না আমার খাবার যোগাড় করতে হবে। আমরা বলেছিলাম এসব মানুষজনকে ১৫ হাজার টাকার এককালীন প্রণোদনা দেয়া হোক, একই সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে প্রণোদনা দেয়া উচিত। তারপরে লকডাউন দেন। করোনা টিকা সংগ্রহেও সরকারের চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তোলেন তিনি।
রুহুল আমিন গাজীর মুক্তির দাবিতে ঢাকায় একটি কনভেশন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসুন গাজী সাহেবের মুক্তির আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে তুলি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের জন্য আমরা আন্দোলন গড়ে তুলি, আমরা যে সমস্ত নিবর্তনমূলক আইন আছে তা বাতিলের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলি। সবচেয়ে বড় যে দাবিতে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার তা হচ্ছে- এই মুহূর্তে এই ব্যর্থ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপক্ষে সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। ইজরাইল থেকে টেলিফোন হ্যাকিং ডিভাইস এনে সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারোয়ার বলেন, আজকে একটু আগে বক্তারা বলেছেন আমাদের কবি লালটুপি শিকদার ভাই (আবদুল হাই শিকদার) বলেছেন- মাদক, চোর, খুনি, গুন্ডারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর নিরপরাধ সৎ মানুষগুলো তারা কারাবন্দি থাকবে-এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের আজকের বাস্তবচিত্র। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, যুক্তিহীন, আদর্শহীন, নৈতিকতাহীন এই সরকারের পায়ের নিচে আসলে আলটিমেটলি কোনো মাটি নেই। সেজন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি, পুলিশ, র্যাব যারা জনগণের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সায় লালিত-পালিত হয়ে পাবলিককে সার্ভ করার জন্য যাদেরকে চাকরি দেয়া হয়েছে। ওইখানে তো আওয়ামী লীগের লোকদের পয়সা দিয়ে বেতন দেয়া হয় না, আমাদের খাজনা-ট্যাক্সের পয়সায় তাদের বেতন হয় অথচ আজকে তারা সরকারের সমস্ত কিছু অপকর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা ভোটাধিকার হরণ করছে। এর বিরুদ্ধে আজকে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, প্রশাসন এখন অক্টোপাসের মতো বন্দি ফ্যাসিবাদের যন্ত্রণায়। তারা এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, এখনো ভুল বুঝুন। বিবেকের দংশনে আপনি যদি দংশিত হয়ে থাকেন, আপনার ন্যূনতম যদি বিবেক, মানবতা থেকে থাকে আপনার ভুলের প্রতি আপনি অনুতপ্ত হোন, অনুশোচনা প্রকাশ করেন। রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি বলতে চাই, যে যে রকম করে পারেন লড়াইটা ছাড়বেন না। খুব যে বেশিদিন লাগবে এরকম বোধ হয় না। ভবিষ্যদ্বাণী করবার আমি কেউ নই। কিন্তু আমি দেখছি যে, এই সরকার পতনের আগে সারা দুনিয়াতে যে রকম জ্বরে কাঁপতে থাকে অথবা কোনো জ্বর ছাড়াও কাঁপতে থাকে এরা এরকম কাঁপতে শুরু করেছে। ওদের একেক জায়গার দুর্বলতা মানুষের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। সেটা পুলিশের কথা বলেন, সেটা প্রশাসনের কথা বলেন, সেটা মন্ত্রিসভার কথা বলেন, সরকারি যারা লোক আছে তাদের কথা, সরকারি দলের লোকের কথা বলেন সর্বত্র ক্ষোভ। আমি বলছি, পায়ের নিচে থেকে মাটি তাদের চলে যাচ্ছে। এটার পতন হবেই, কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই সরকারকে হটাতে সকলকে একটি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেয়ার আহবানও জানান তিনি।
আয়োজক সংগঠনের আহবায়ক সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজীর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালীন নোমানী, কারাবন্দি নেতা রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আরফান আবরার আমিন প্রমুখ।