জাতিসংঘ গুম হওয়াদের তথ্য চাওয়ায় বিএনপির দাবির সত্যতা প্রমাণিত - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫০ এএম, ১৫ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
এক ডোজ টিকা নেয়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন আপাতত স্থিতিশীল, ডেটোরেট করেনি। তার কোনো খারাপ কিছু হয়নি। তিনি টিকা একডোজ নিয়েছেন। আবার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকার নির্ধারিত সময় রয়েছে ১৯ আগস্ট। গত ১৯ জুলাই শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানার টিকা নেন। গত ১০ এপ্রিল খালেদা জিয়া নিজের গুলশানের বাসা ‘ফিরাজায়’ করোনায় আক্রান্ত হয় বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্তাবধায়নে তার চিকিৎসা চলে। পোস্ট কোবিড জটিলতার চিকিৎসার জন্য গত ২৭ এপ্রিল তিনি বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ৫৪দিন চিকিৎসা শেষে ১৯ জুন আবার গুলশানের বাসায় ফেরেন আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে বিভিন্ন সময়ে দেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসংঘ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণে বিএনপির দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, সভা বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলর ওয়াকিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভল্যান্টারি ডিসএ্যাপিয়ারেন্স কতৃক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণে গুম এর বিষয়ে বিএনপি’র দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। প্রকৃতপক্ষে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ৫০০ এর অধিক। সরকার তাদের খুজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে সকল গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবী জানানো হয়।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভাল সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্ম সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়:
১। সভায় বিগত ৭ আগষ্ট অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায়, ডেল্টা করোনা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্বেও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে লকডাউন শিথিল এবং ২ দিন পরেই ১৯ তারিখ হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। করোনা সংক্রমণের এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস না পাওয়ার পরেও এই সিদ্ধান্ত এই জনবহুল দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির আরো বেশী আশংকা দেখা দিয়েছে। বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে ‘দিন আনে দিন খায়’ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে Cash transfer করা, সব চেয়ে জরুরী ছিল। সরকার কর্ণপাত করেনি। সেই কারনেই অপরিকল্পিত লকডাউন ফলপ্রসূ হয়নি। অন্যদিকে টীকা সংগ্রহ সংরক্ষণ ও বিতরণের কোনও বিজ্ঞান সম্মত বাস্তব সম্মত ব্যবস্থাপনা তৈরী করতে পারেনি, উপরন্ত দূর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে অন্যান্য উৎস থেকে টীকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছে। বিএনপি মনে করে টীকা নিয়ে বিএনপি কোনও রাজনীতি করছেনা। অপরাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে একদিকে জনগণকে প্রতারণা করছে অন্যদিকে জনগণকে চরম দূর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। সরকারের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে ২ ডোজ টীকা পেয়েছে মাত্র ৫২ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। গতকাল পর্যন্ত সরকার সুনির্দিষ্ট কোনও রোড ম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। টীকা নিয়ে এই প্রতারণা অপরাধের সামিল। জনগণের জীবন বিপন্ন করার সকল দায় এই সরকারকেই বহণ করতে হবে। অবিলম্বে টীকা সংগ্রহে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীকে টীকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনে মেগাপ্রজেষ্ট স্থগিত করে হলেও সাম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টীকা সংগ্রহ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মান অক্ষুন্ন রেখে দেশে টীকা উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায় বিএনপি।
৩। সভা, খুলনার রূপসায় মন্দির, দোকান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, সাম্প্রতিক সময়ে মৌলভীবাজার কুলাউড়ায় খাসিয়াদের উপর হামলা, পটুয়াখালির রাখাইন গ্রামে উচ্ছেদের হুমকির তীব্র নিন্দা জানায়। এই সকল সাম্প্রদায়িক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের নির্লিপ্ততার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সভা অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানায়।
৪। সভা, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশে কর্মরত এবং দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রবাসী চাকুরী হারিয়েছে; অনেকে বিদেশে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে কর্মচ্যুতির কারনে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার আশংকা অন্যদিকে পাসপোর্ট না পাওয়াতে ব্যবসা বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক কর্মকান্ডে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা তৈরী হয়েছে। অবিলম্বে পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানানো হয়।
৫। “রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক টেলিটক লাইফ সাপোর্টে আছে” পরিকল্পনা মন্ত্রীর এই মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বেসরকারী মোবাইল কোম্পানী গুলো যখন মুনাফা করছে সেই সময় টেলিটক সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির কারনে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে এবং সেই লোকসানী প্রতিষ্ঠানে দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করা সরকারের অযোগ্যতা ও দূর্নীতির চিত্রই তুলে ধরে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারী দলের কোন ব্যক্তির মালিকানায় দেওয়ার চক্রান্ত কিনা সেই প্রশ্ন জনগণের সামনে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জনগণের সামনে উপস্থাপন করবার আহ্বান জানানো হয়।
৬। সভায়, সাম্প্রতিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সরকার ও সিটি কর্পোরেশন গুলোর ব্যর্থতার কারনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ: ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন গুলো এডিস মশা নিধনের বাস্তব সম্মত কোন উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এডিস মশা নিধনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।
৭. সভা বিএনপি নেতা ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলর ওয়াকিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভল্যান্টারি ডিসএ্যাপিয়ারেন্স (ডড়ৎশরহম মৎড়ঁঢ় ড়হ বহভড়ৎপবফ ড়ৎ রহাড়ষঁহঃধৎু ফরংধঢ়ঢ়বধৎধহপব) কতৃক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে এই পত্র প্রেরণে গুম এর বিষয়ে বিএনপি’র দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। প্রকৃতপক্ষে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ৫০০ এর অধিক। সরকার তাদের খুজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে সকল গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবী জানানো হয়।
৮. সভা আগামী ১ সেপ্টেম্বর’ ২০২১ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কেন্দ্রীয় কর্যালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।
৯. সভায় আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের ১৫ই আগষ্টের হত্যাকান্ডে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে জড়িত করবার হীন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে ইতিহাসকে বিকৃত ও নিকৃষ্ট মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এই ধরনের অপপ্রচার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করবার একটা অপচেষ্টা মাত্র। সভায় এই ধরনের নিকৃষ্ট মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবার আহ্বান জানানো হয়।