হামলা, মামলাসহ অনিয়ম তুলে ধরে সিইসির কাছে বিএনপির স্মারকলিপি প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৫ এএম, ৯ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০২:১৭ এএম, ২১ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪
আগামী ১০ ও ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন/উপনির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা, হামলা, মামলার বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
আজ মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও কেন্দ্রীয় দফতরের চলতি দায়িত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দলের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপিটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আলমগীর হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন।
স্মারকলিপি সংযুক্ত : শুভেচ্ছা রইল। আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশের ১০টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেয়র পদে সাধারণ নির্বাচন/উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এছাড়াও আগামী ২৮ ডিসেম্বর ২৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি বরাবরের মতই এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। যদিও বর্তমান সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পথ সংকুচিত করে দিয়েছে। তথাপি গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, নিয়ন্ত্রিত রাজনীতির সীমিত সুযোগেও সরকার নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ সকল নির্বাচনে সরকার ও সরকার দলীয় প্রার্থীরা বেপরোয়াভাবে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণা, সাধারণ মানুষের ভোটদানে বাধা, সরকার দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার সকল অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমরা বার বার স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ করার পরও তারা অজ্ঞাত কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসছে। বিগত দিনেও আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করার পরও কোনো রূপ প্রতিকার পাওয়া যায় নাই।
নিম্নে কয়েকটি উপজেলা ও পৌর নির্বাচনের বর্তমান বাস্তব সংক্ষিপ্ত চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এ ধরনের ঘটনা প্রায় সব নির্বাচনি এলাকাতেই বিরাজ করছে।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার জন্য বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান ঝালুকে জিম্মি করে অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে।
ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরু থেকেই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা হুমকি প্রদান করছে এবং গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নায়াব ইউসুফের খাবাসপুরস্থ নির্বাচনি ক্যাম্প রাতের অন্ধকারে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়-ভীতি এবং প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার জন্য বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুমকি প্রদান করেছে এমনকি তাকে হত্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও বসতঘর জ¦ালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বাধা প্রদান করা হলেও কৌশলে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের দিন বিএনপি প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থককে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জোর করে তুলে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে নিয়ে এসে তাদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আইনি বাধ্য বাধকতার কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নাই। এরপরেও পুলিশের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন বাহিনী বিএনপি প্রার্থীকে নির্বাচনি প্রচারণা ও কর্মকান্ড চালাতে দিচ্ছে না। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি।
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা ও হয়রানি চলছে। অন্যান্য নির্বাচনের মতই এখানে গত ৫ ডিসেম্বর নির্বাচনি এলাকায় একটি পুরাতন সিএনজি অটো রিকশায় নিজেরা আগুন দিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। এই মিথ্যা মামলার অজুহাতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদের হুমকি দিচ্ছে এবং নির্বাচনের আগে এলাকায় না আসার জন্য বলছে। এই গায়েবি মামলায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি ও এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে এবং ৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর উঠান বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা করছে, প্যান্ডেল ও চেয়ার-টেবিল পুড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও গ্রেফতার করতে বাসা বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। বিএনপির কর্মীরা যাতে নির্বাচনি প্রচারণায় এবং নির্বাচনের দিন এজেন্ট না হয় সে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। জনগণ যেন ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারে, সেজন্য এলাকায় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। তাদের এই কর্মকান্ডে বেগমগঞ্জ এখন যেন এক ভয়ার্ত জনপদে পরিণত হয়েছে।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও বেড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তাদের প্রচার প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং আগের দিন পোস্টার লাগালে পরের দিনই তা ছিঁড়ে প্রকাশ্যে অগ্নিসংযোগ করে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। প্রচারণার মাইক ও অটো রিকশা ভাঙচুর করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে।
বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। প্রচার প্রচারণায় বের হলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হচেছ। তাদের হামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাচনে গত কয়েকদিন যাবত বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীর বাড়িতে বাড়িতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যেতে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। যথারীতি তারা রাতের আঁধারে “ধানের শীষের” পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। সশস্ত্র যুবকেরা মাইক্রোবাসে চড়ে উপজেলাব্যাপী মহড়া দিয়ে আতঙ্ক ও জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে। গত ৩/৪ দিন যাবত রাতে সমগ্র উপজেলায় পটকা ফুটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী যে গাড়ি (ভাড়া করা) ব্যবহার করছেন, তার ড্রাইভারকে ডিউটি না করতে গতকাল আওয়ামী লীগ কর্মীরা হুমকি দিয়েছে।
নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণা শুরু থেকে অদ্যাবধি মাইক ভাঙচুর, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, রাতের বেলা নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলে হামলা মামলা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গত ১৭-১০-২০২০ তারিখে নওগাঁ-৬ আসনের এমপি হেলাল সাহেবের প্রকাশ্য ঘোষণা গত সংসদ নির্বাচনের মত ভোট হবে। এসব প্রকাশ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন ২৮-১১-২০২০ হতে অদ্যাবধি রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু দৃশ্যমান কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। সর্বশেষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া এজেন্টদের ঢুকতে না দেয়া, ভোটকেন্দ্রে বিএনপি ভোটারদের না যেতে দেয়া বিষয়গুলো নিয়ে ভোটার ও প্রার্থী আতঙ্কে আছেন।
এ ধরনের অস্বাভাবিক অবস্থা প্রায় সব কয়টি নির্বাচনি এলাকায় বিরাজ করছে। এইসব নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। ক্ষমতার দাপটে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়াভাবে নির্বাচনি কর্মকান্ডের নামে বিএনপি প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, প্রশাসনকে দিয়ে অন্যায়ভাবে বিএনপির নির্বাচনি কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ক্রমাগত লংঘন করে চলছে।
বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। কোনো কোনো জায়গায় পোস্টার ঝুলাতেও দিচ্ছে না। এমনকি কর্মীদের হাত থেকে প্রচারপত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদেরকে পথসভা করতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনি ক্যাম্প ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনি আইনের তোয়াক্কা না করে অসংখ্য নির্বাচনি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। বিএনপি নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ ভোটারদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। গতরাত থেকে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্টদেরকে হুমকি দেয়া শুরু হয়েছে, তারা যেন পোলিং এজেন্ট না হয়। তাদের পরিবার পরিজনকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি কর্মকর্তার কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি, নির্বাচন নির্বিঘেœ সকল প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারনাসহ নির্বাচনি কর্মকান্ড পরিচালনার সমান সুযোগ দিয়ে নির্ভয়ে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিজ বিবেচনায় ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, জনগণের মধ্যে বিরাজমান ভোট আতঙ্ক নয়, ভোট উৎসব সৃষ্টি করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। নির্বাচন কমিশনকে সমতল মাঠে যোগ্য রেফারির ভূমিকা পালন করনে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আশা করে নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনি ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। উল্লেখিত বিষয়ে আপনার ও নির্বাচন কমিশনের সুদৃষ্টি এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।