আরাফাত রহমান কোকোর ৫২তম জন্মদিন আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৭ পিএম, ১২ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪৯ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
আজ ১২ আগস্ট মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর ৫২তম জন্মদিন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘর আলোকিত করে ১৯৭০ সালের এইদিনে আরাফাত রহমান কোকো জন্মগ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও আরাফাত রহমান কোকো রাজনীতিক হিসেবে নয়, একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ব্যবসা, ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেই নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান হয়েও তার মধ্যে কোনো অহঙ্কার ছিল না। একজন সাধারণ মানুষের মতো তিনি জীবনযাপন করতেন।
মিতবাক, সজ্জন এবং সাদাসিধে এ মানুষটির খুব ঘনিষ্ঠজনরা জানেন তার জীবন সম্পর্কে। একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হয়েও নব্বইর দশকে তিনি বাকিতে মোটরসাইকেলের তেল কিনতেন। অবিশ্বাস্য মনে হতেই পারে। এছাড়া তিনি মাঝেমধ্যেই খেলনা আর চকোলেট নিয়ে পথশিশুদের কাছে ‘সারপ্রাইজ’ হিসেবে হাজির হতেন। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলতেন।
মালয়েশিয়াতে অবস্থানকালেও তিনি খুবই সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। একটি দুই বেডের ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। নিজেই প্রতিদিন দুই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ে আসতেন। বিনয়ী ও প্রচারবিমুখ কোকোর চরম শত্রুরাও তার ব্যক্তি চরিত্রের কোনো ত্রুটির কথা বলতে পারবেন না।
ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন শহর থেকে গ্রামে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। সেই সাথে বিসিবির একজন সদস্যও ছিলেন তিনি। ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যে কর্মসূচি শুরু করেছিলেন তিনি বর্তমানে তার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য ক্রিকেটকে জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা-গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া তিনি মোহামেডান ক্লাবের এক্সিকিউটিভ কমিটির কালচারাল সেক্রেটারি ছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাথে যুক্ত হওয়ার পর ক্রিকেটের অনেক উন্নয়ন করেছেন তিনি। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য যা যা করার তাই করেছেন মরহুম এই ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি ক্রীড়া সংগঠক ও শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), মোহামেডান স্পোর্টং ক্লাব ও সিটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
দেশের মানুষ রাজনীতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের নাম জানলেও আরাফাত রহমান কোকোর নাম খুব বেশি জানতো না। কোকোকে মানুষ জানতে পারলো ১/১১-এর সেনাসমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীন সরকার কর্তৃক মা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর গ্রেফতারের পর থেকেই।
রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড নির্যাতন করে তাঁকে পঙ্গু করা হয়। নির্যাতনের ফলে কোকোর হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সে সময় সংবাদপত্রের ছবি এবং টিভির ভিডিওগুলোর কথা যাদের মনে আছে তারা হয়তো স্মরণ করতে পারবেন যে, কোকোকে সব সময় বুক চেপে ধরে থাকতে দেখা যেতো। সেই সময় থেকেই তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন।
২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে থাইল্যান্ডে যান কোকো। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি স্ত্রী ও দু কন্যাসহ মালয়েশিয়াতেই অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি।
একদিকে বিদেশে তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, অন্যদিকে দেশে মা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের খবরে তিনি ছিলেন চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। মানসিক যন্ত্রণায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ মালয়েশিয়ায়।