আমলা নির্ভরতার কারণে করোনা মোকাবিলায় সরকার ব্যর্থ হচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৪ এএম, ১০ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
শুধুমাত্র আমলা নির্ভরতার কারণেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার সকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের মরহুম সদস্য ফজলুর রহমান পটলের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে তার পরিবার। এই আলোচনা সভার পর মরহুম নেতার সহধর্মিনী কামরুন্নাহার শিরিনসহ তার সন্তানদের তত্ত্বাবধায়নে নাটোরের লালপুর-বাগাতিপাড়ায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং সত্যিকার অর্থেই জনগণের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে। আমরা প্রথম থেকে সরকারকে সর্তক করেছিলাম যে, একটা জাতীয় কনভেনশন করে অথবা সমস্ত রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, সকল সামাজিক সংগঠন-এনজিও তাদের সমন্বয়ে একটা কমিটি গঠন করা হোক প্রত্যেকটি লেভেলে যাতে করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই সংক্রমণকে মোকাবিলা করা যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, এই সরকার এটাকে কর্ণপাতই করেননি। তারা শুধুমাত্র আমলাদের ওপর নির্ভর করে আজকে করোনা পরিস্থিতিকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন যেই জায়গায় এককথা বলা চলে যে, সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনা, একেবারে দলীয় সংকীর্ণতা, দলীয়করণ এবং দুর্নীতি আজকে সমস্ত ব্যবস্থাটাকে গ্রাস করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, এই সরকার হচ্ছে যে- তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। অর্থাৎ তাদের টাকা চাই। আর সেই সঙ্গে যেটা দরকার হয় তারা পিঠে কুলো দিয়েছে যেখানে কোনো রকমের পরিস্থিতি তারা আঁচই করতে পারে না। এই সরকার একদিকে যেমন করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, আরেকদিকে তারা মানুষের স্বাস্থ্য যে ব্যবস্থা তাকে সুরক্ষা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। লকডাউনের নামে তামাশা চলছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার লকডাউন দেন। কিসের লকডাউন কেউ বুঝতে পারি না আমরা? কখনো বলে লকডাউন, কখনো বলে সরকারি ছুটি, কখনো বলে কঠোর লকডাউন, কখনো বলে আরো কঠোর লকডাউন। এই যে একটা অবস্থা তৈরি করেছে-তামাশা। তাদের কাছে মানুষের জীবন-জীবিকা একটা তামাশা। এভাবে জনগণ এগুলো কখনো মেনে নিতে পারে না। যদিও একটা ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্য দিয়ে, ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে জনগনকে দমন করে রাখা হচ্ছে। তারপরেও জনগণ একদিন জেগে উঠবেই। আমরা বিশ্বাস করি, ফজলুর রহমান পটল সাহেবের যে আদর্শ, যে সাহস ছিলো সেই নিয়ে আমরা সবাই যদি কাজ করি তাহলে অবশ্যই এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে পারবো। এখন এটা দায়িত্ব হয়ে পড়েছে আমাদের যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ পরাজিত করতে হবে মানুষকে বাঁচনোর জন্য, দেশকে বাঁচানোর জন্য, দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য। রাজপখ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা তরুন আছেন, যুবক আছেন তাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে, তাদেরকে সাহস নিয়ে রাজপথে আসতে হবে। রাজপথ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেই রাজপথে আসার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে আমাদেরকে সামনের দিকে এগুতে হবে। আর নিজের মধ্যে দলাদলিটা একেবারে বন্ধ করুণ, নিজেদের মধ্যে কোন্দলটা বন্ধ করতে হবে। ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। ঐক্য ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে যেতে হবে। আমাদের বাম-ডান, দক্ষিণ-পশ্চিম সকলকে একসাথে করতে হবে এবং সকলকে একসাথে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমছে বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাট করা ছাড়া আর কোনো কিছুই তারা করেনি। আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছি যে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি-জিডিপি ক্রমশই নেমে গেছে। সরকার মিথ্যা কথা বলছে। তারা জোর করে জিডিপি বেশি দেখাতে চায়। অথচ প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে যেখানে জিডিপি কমছে, ব্যবসা বাণিজ্য কমছে, আমদানি কমছে, উৎপাদন কমছে- সেদিকে তাদের কোনো লক্ষ্যই নেই। আজকে প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। আজকে যারা দিন আনে দিন খায় মানুষ, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ক্ষেত মজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, হকার, ছোট ছোট দোকান যারা করেন তাদের শ্রমিকেরা সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে পড়েছে। যার ফলে এই মানুষগুলো না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনতিপাত করছে। মরহুম ফজলুর রহমান পটলের কন্যা দলের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, নাটোরের আমিনুল হক, রহিম নেওয়াজ, লালপুরের ইয়াসীর আরশাদ রাজন, হারুনুর রশিদ পাপ্পু, গোপালপুরের নজরুল ইসলাম মোল্লা, বাগাতিপাড়ার জামাল হোসেন, মোশাররফ হোসেন ও হাফিজুর রহমান।