পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ না করেই গণটিকার নামে সরকার গণ প্রতারণা করছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৬ এএম, ৯ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫২ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
গণটিকার কর্মসূচিও সরকার দলীয়করণ করেছে অভিযোগ করে ‘সর্বজনীন’ টিকা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ গিয়ে আজ রবিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকালে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মহাসচিব। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে, সরকার পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ না করেই গণটিকার নামে গণ প্রতারণা শুরু করেছে। চরম অব্যবস্থাপনা এবং দলীয় করণের কারণে এই লোক দেখানো গণটিকা অভিযান গণ-সংক্রমণ অভিযানে পরিণত হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সভায় সরকারকে সকল প্রকার দলীয়করণের প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন টিকা প্রদানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। গণটিকা প্রদানের কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত করবার উদ্দেশ্যে দলীয় কর্মীদের সম্পৃক্ত করার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গতকাল সারা দেশে সরকার গণটিকার নামে গণ তামাশা শুরু করেছে। তাদের (সরকার) হাতে টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ। অথচ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে ২৬ কোটি টিকা। প্রথম এক সপ্তাহে ১ কোটি টিকা প্রদানের কথা বলে একদিনে ৩০ লাখ তিন দিনে দেয়ার কথা বলেছে। সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রমাণিত হয়েছে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। টিকা প্রদানে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে উপস্থাপনের দাবি আবারো জানিয়েছে বিএনপি।
করোনা টিকার বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য প্রদান ও পরে প্রত্যাহারের বিষয়গুলো তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বহীতার পরিচয় জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। করোনাকালে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া, দারিদ্র্যের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্র্ধ্বগতিতে স্থায়ী কমিটির সভার উদ্বেগ প্রকাশের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় :
১। সভায় বিগত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় করোনা বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমান করোনা পরিস্থিতি এবং বিএনপি গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। ৭০টি হেল্প সেন্টার খোলায় এবং কাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যারা বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য আবেদন করেছিলেন এবং প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের সকলকে করোনা হেল্প সেন্টারের কর্মকান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সভায় করোনা টিকা প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সর্ব নিম্নে হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মন্ত্রী ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে জনগণকে চরম বিভ্রান্তি ও হতাশার কবলে ফেলায় নিন্দা জানানো হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য প্রদান ও পরে প্রত্যাহার সরকারের সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে। সভা মনে করে, পর্যাপ্ত টিকা সংগ্রহ না করেই গণটিকার নামে গণ প্রতারণা শুরু করেছে। একই সঙ্গে চরম অব্যবস্থাপনা এবং দলীয়করণের কারণে এই লোক দেখানো গণটিকা অভিযান গণ সংক্রমণ অভিযানে পরিণত হয়েছে। গতকাল সারা দেশে এই গণটিকার নামে একটা গণতামাশা শুরু করেছে। সরকারের হাতে টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লক্ষ, অথচ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টীকা দিতে হলে প্রয়োজন হবে ২৬ কোটি টিকা। এছাড়া প্রথম ১ সপ্তাহে ১ কোটি টিকা প্রদানের কথা বলে এখন এক দিনে ৩০ লাখ তিন দিনে দেয়ার কথা বলছে। সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রমাণিত হয়েছে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনও রোড ম্যাপ সরকার জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্যদিকে এই গণটিকা প্রদানের কর্মসূচি সম্পূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত করবার উদ্দ্যেশে দলীয় কর্মীদের সম্পৃক্ত করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং প্রতিবাদ করছে। স্থানীয় সমাজকর্মী, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন, জন প্রতিনিধি ও এনজিওদের সম্পৃক্ত করলে এই ধরনের দলীয়করণের সম্ভাবনা কম থাকতো। টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে দলীয় বৈষম্য সৃষ্টির একটা অবৈধ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং সকল প্রকার দলীয়করণের প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে সর্বজনীন টিকা প্রদানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায় এবং অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য সংকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
৩। সভায় ন্যূনতম সময়ে টিকা প্রদান করার জন্য দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়। তবে তা অবশ্যই হতে হবে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
৪। সভা কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে। গত দুই অর্থ বৎসরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার ৬.৬২ কম শতাংশ অর্জন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধি ৩.৫১ শতাংশ অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮.২ শতাংশ অর্থাৎ ৪.৬৯ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৪৭ শতাংশ; লক্ষ মাত্র ছিল ৭.৪ শতাংশ, ১.৯৩ শতাংশ কম। উল্লেখ্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র শতকরা ৪৯.০৯ হলে শেষ দুই সালে খরচ হয় ৬৯ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। বিএনপি করোনা শুরু হওয়ার সময় থেকেই এই বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছে। রাজনৈতিক ফায়দা নেবার কারণে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে বাস্তবতা বিবর্জিত উচ্চাভিলাসী পরিসংখ্যান দিয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। বিএনপি করোনাকালীন অর্থনীতিকে সচল রাখতে যে প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছিলো সরকার সেটা কার্যকর না করে জনগণকে বোকা বানিয়ে শুভংকরের ফাঁকির প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে। বিএনপি মনে করে এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় এবং চরম দুর্নীতিগস্ত হওয়ায় একদিকে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষ কর্মহীন হয়েছে, অন্যদিকে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারের লোকদের লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। সভা সরকারের এই ধরনের গণবিরোধী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদের মতামত নিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখবার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করবার আহ্বান জানায়।
৫। সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রায় ৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং অবিলম্বে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাসে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
৬। সভায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টি-২০ সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়বৃন্দকে অভিনন্দন জানানো হয়।
৭। সভা শেষে সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতি সভা মুলতবি করেন।