ক্ষমতাসীনদের প্রতিবন্ধকতার কারণেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ নেই-বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৪ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০১:২৩ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
স্থানীয় সরকারের আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের প্রতিবন্ধকতার কারণেই ভোটের পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
আজ সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশের ১০টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি বরাবরের মতই এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। যদিও বর্তমান সরকার এবং তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে জনগণের স্বাধীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পথ সংকুচিত করে দিয়েছে। তথাপি গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে এবং যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায় তা যথাসম্ভব কাজে লাগিয়ে জনগণের কাছে দলের বক্তব্য নিয়ে উপস্থিত হওয়া এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কারসাজির ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিএনপি এসব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনি প্রচারণা ও রাজনীতির সীমিত সুযোগেও সরকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।
কয়েকটি উপজেলা ও পৌর নির্বাচনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার জন্য বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান ঝালুকে অনৈতিকভাবে চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়মিত হুমকি-ধামকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন চলছে। গত ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুর পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নায়াব ইউসুফের খাবাসপুরস্থ নির্বাচনি ক্যাম্প রাতের অন্ধকারে আওয়ামী লীগের কর্মীরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়-ভীতি এবং প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। ৬ ডিসেম্বর জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হয়েছে।
এদিকে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সিরাজগঞ্জের শাহজাতপুর পৌরসভা নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসানকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী হুমকি প্রদান করেছে এমনকি তাকে হত্যা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও বসত ঘর জ¦ালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বাধা প্রদান করা হলেও কৌশলে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের দিন বিএনপি প্রার্থীর প্রস্তাবক ও সমর্থককে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জোর করে তুলে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে নিয়ে এসে তাদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আইনি বাধ্য বাধকতার কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নাই।
তিনি আরো জানান, ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও তার সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলা ও হয়রানি চলছে। অন্যান্য নির্বাচনের মতই এখানে গত ৫ ডিসেম্বর নির্বাচনি এলাকায় একটি পুরাতন সিএনজি অটো রিকশায় নিজেরা আগুন দিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। এই মিথ্যা মামলার অজুহাতে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদের হুমকি দিচ্ছে এবং নির্বাচনের আগে এলাকায় না আসার জন্য বলছে। এই গায়েবি মামলায় চৌমুহনী পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি এস রুবেল, মির ওয়ারিসপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল হাই তপন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাশেদ সুমন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মৌচাক সুমন, ৪ নং আলাইয়ারপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফরহাদ রাজু, মির ওয়ারিসপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতিসহ দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীর উঠান বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা করছে, প্যান্ডেল ও চেয়ার-টেবিল পুড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও গ্রেফতার করতে বাসা বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আলীয়ারপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা করিম, ছয়ানী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সোহেল আহমেদ, ৬ নং রাজগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আবুল বাশারকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদেরকে পুরোনো মামলায় অজ্ঞাত আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রেফতার দেখানো হয়। বিএনপির কর্মীরা যাতে নির্বাচনি প্রচারণায় এবং নির্বাচনের দিন এজেন্ট না হয় সে জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। জনগণ যেন ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারে, সেজন্য এলাকায় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। তাদের এই কর্মকান্ডে বেগমগঞ্জ এখন যেন এক ভয়ার্ত জনপদে পরিনত হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও বেড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তাদের প্রচার প্রচারণায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং আগের দিন পোস্টার লাগালে পরের দিনই তা ছিঁড়ে প্রকাশ্যে অগ্নিসংযোগ করে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। প্রচারণার মাইক ও অটো রিকশা ভাঙচুর করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্রাসের রাজত্য কায়েম করেছে। প্রচার প্রচারণায় বের হলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হচেছ। তাদের হামলায় জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন বুলেট, বেতাগী উপজেলা ছাত্রদলে আহবায়ক সৈয়ব কবির, যুবদল নেতা নাসির উদ্দিন, অয়ন শিকদার, মামুন মল্লিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, এইসব নির্বাচনে নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নাই। নাই কোন লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড। ক্ষমতার দাপটে প্রশাসনকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাদের নেতাকর্মীরা বেপরোয়াভাবে নির্বাচনি কর্মকান্ডের নামে বিএনপি প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে ও প্রশাসনকে দিয়ে অন্যায়ভাবে বিএনপির নির্বাচনীি কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ক্রমাগত লংঘন করে চলছে। বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। কোনো কোনো জায়গায় পোস্টার ঝুলাতেও দিচ্ছে না। এমনকি কর্মীদের হাত থেকে প্রচার পত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদেরকে পথসভা করতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপি নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ ভোটারদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। গতরাত থেকে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর সম্ভাব্য এজেন্টদেরকে হুমকি দেয়া শুরু হয়েছে, তারা যেন পোলিং এজেন্ট না হয়। তাদের পরিবার পরিজনকেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি কর্মকর্তার কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে আবারও আহবান জানাচ্ছি। নির্বাচন নির্বিঘেœ সকল প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচনি কর্মকান্ড পরিচালনার সমান সুযোগ, নির্ভয়ে সাধারণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিজ বিবেচনায় ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণের মধ্যে বিরাজমান ভোট আতঙ্ক নয়, ভোট উৎসব সৃষ্টি করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। নির্বাচন কমিশনকে সরকার ও আওয়ামী লীগের অনুগত ও আজ্ঞাবহ না হয়ে সমতল মাঠে যোগ্য রেফারির ভূমিকা পালন করতে অনুরোধ করছি। অন্যথায় বর্তমান ব্যর্থ, অযোগ্য সরকারের মত তাদেরকেও ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স বলেন, সম্প্রতি কুষ্টিয়া, মাগুরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়ে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, মাগুরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আখতার হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকাল কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাবলুর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বিএনপি এসব হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বলতে চায়, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যার্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার ও জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায়। আমরা সরকারকে এহেন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং কুষ্টি ও মাগুরা জেলা বিএনপি কার্যালয় হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আগামী বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ওবায়দুর রহমান চন্দন, এম এ খালেক, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, উলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক প্রমুখ।