চিনিকল বন্ধ সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তে কৃষক দিশেহারা : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৯ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০৯ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার বিরোধী দল ও মতের মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দীর্ঘকাল ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার চিন্তায় বিভোর থাকার কারণেই জনগণের ভালো-মন্দ দেখার সময় তাদের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার (৭ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ এবং ৩টি বন্ধের নোটিশ প্রদান করায় তিনি এ তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে চিনিকলগুলোকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে। চিনিকলসমূহে পরিচালনা পরিষদে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতাকর্মীদের সংযুক্ত করে তাদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লুটপাট ও দুর্নীতি করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এই সকল চিনিকলে চিনি, চিটা গুড় এবং যন্ত্রপাতি বিক্রির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কম মূল্যে তারা নিজেরাই ক্রয় করে নিচ্ছে। চিনিকলগুলোতে ইচ্ছেমতো দলীয় লোকদের মাষ্টাররোলে চাকরির নামে কোনো কাজ না করিয়ে বেতন-ভাতা দিচ্ছে। যার ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভারত থেকে নিম্নমানের চিনি আমদানি করে বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জনগণ। আখ চাষীরা আখ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে। এই চিনিকল কেন্দ্রিক অঞ্চলগুলোতে সাধারণ মানুষসহ কৃষকের প্রধান শস্য আখ। আখ চাষের এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এই চিনিকলগুলোকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হয়ে থাকে। সরকারের এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত তৃণমূলের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। আখ চাষের এলাকাগুলোতে বর্তমানে লাখ লাখ একর জমিতে আখ দন্ডায়মান। ঠিক যেই মুহূর্তে কৃষকরা আখ কাটবে, সেই মুহূর্তে সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তে কৃষকরা দিশেহারা। উৎপাদিত আখ নিয়ে কৃষকরা কি করবে, তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত পার করছে। যদিও সরকার বলছে, এই আখগুলো পাশর্^বর্তী চিনিকলে ক্রয় করা হবে, কিন্তু সেই চিনিকলগুলো অনেক দূরে হওয়ায় পরিবহনে যে খরচ লাগবে তা আখের মূল্য থেকে অনেক বেশি। এই চিনিকলগুলো সুনামের সাথে যুগ যুগ ধরে চিনি উৎপাদন করে আসলেও বর্তমানে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণ- চিনিকলগুলোর সকল স্তরে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর একক নিয়ন্ত্রণ, লুটপাট, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা। এসব কারণে অন্যান্য কলকারখানার মতো চিনিকলগুলোরও বেহাল অবস্থা।
তিনি বলেন, চিনিকল বন্ধে সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে লাখ লাখ আখচাষী এবং হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চরম বিপাকে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে হতাশা এবং অনিশ্চয়তা। বেকার হবে শ্রমিক কর্মচারীরা। সরকারের এই অমানবিক ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে একদিকে আখচাষীসহ চিনি কলে খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে বাজারে চিনির সংকটও সৃষ্টি হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার বিরোধী দল ও মতের মানুষদের নিশ্চিহ্ন করে দীর্ঘকাল ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার চিন্তায় বিভোর থাকার কারণেই জনগণের ভালো-মন্দ দেখার সময় তাদের নেই। কিছুদিন আগেও সরকার ২৫টি পাটকল আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে বেকার করে দিয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা ঘরে ঘরে চাকরির পরিবর্তে ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করছে। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চিনিকলগুলো খুলে দিয়ে আখমাড়াই শুরু করার জোর দাবি জানান।