করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পদত্যাগের দাবি টুকুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০১ এএম, ২ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪১ এএম, ২৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির পদত্যাগ চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
আজ রবিবার দুপুরে এই অনুষ্ঠানে দলের করোনা পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য এই দাবি জানান। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে দলের হেল্প সেন্টারে ঔষধ সামগ্রি প্রেরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে নরসিংদীর সভাপতি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মানিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এসএ জিন্নাহ ও নারায়নগঞ্জের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর হাতে ঔষধ সামগ্রি তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, দেশে সরকার নেই। উচ্চ পর্যায়ে কমিটি মিটিং করে গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সেই পর্যায়ে সিনিয়র সেক্রেটারি বা সিনিয়র গর্ভামেন্ট অফিসিয়ালসরা আছেন।। তাদের মাথায় এটুকু ঢুকলো না যে, আমরা যে খুলে দিচ্ছি এই লোকগুলো কিভাবে আসবে? এই যে উদাসীনতা। কারণ মানুষ নিয়ে তারা তো ইন্টারেস্টেড না, তারা ভোট করে ক্ষমতায় আসবে না, ভবিষ্যতে আসবে যে তারাও কোনো চিহ্ন নাই। সেজন্য জনগণইজ নট ফ্যাক্টর। আমি মনে করি এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি যে মিটিং করলো তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
টুকু বলেন, তারা (সরকার) যেভাবে এই ধরনের অতিমহামারিকে হেন্ডেল করছে তাদের আর এক মিনিট ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই। যারা মানুষের জানমাল রক্ষা করে না, তারা সরকার চালাতে পারে না। আমি তো মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর সুবুদ্ধির উদয় হোক। ক্ষমতা হস্তান্তর করুক, ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশের মানুষকে সেবা পথ সুগম করে দিক।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা প্রতিদিন সারাদেশে স্থাপিত দলের হেল্প সেন্টার থেকে মানুষের কী আহজারি তার খবর পাচ্ছি। হসপিটালে ভর্তি হতে পারে না আমাদের কাছে আসে। আমরা তো হসপিটাল না, আমরা হেল্প সেন্টার। প্রতিদিন শত শত লোক আসছে যে, আমাদেরকে এখানে রাখেন। জেলা হসপিটালগুলোতে অক্সিজেন নেই। প্রতিটি জেলা সদরে কি পরিমাণে ক্সিজেনের অভাব চলছে আপনারা যদি খোঁজ নেন পাবেন। তাই আমরা জনগণের দল হিসেবে আমরা যার যা আছে তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, এই প্রথম আমরা কেন্দ্র থেকে ঔষধ দিচ্ছি। এতো দিন আমাদের দলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের পয়সা দিয়ে মানুষকে সেবা করেছে।
মানুষের পাশে দাঁড়ালেও গ্রেফতার করা হয় এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের যে ত্রাণ বিতরণ যারা খেতে পারছে না, যারা দিন আনে দিন খায় মানুষ তাদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করবার জন্য। এটা করতে গিয়ে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জুলফিকার আলী জুয়েলকে ত্রাণ বিতরণ করা অবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই হচ্ছে বর্তমান সরকারের চেহারা। ত্রাণ বিতরণ করতে গেলেও তাকে গ্রেফতার করছে তারা। এতো ভয় পায় তারা বিএনপিকে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের তৃণমূল কর্মীরা অমানবেতর জীবন যাপন করছে, না খেয়ে থাকছে, মামলা মোকাদ্দমায় জর্জরিত। এখনও বিএনপির করোনা হেল্প সেন্টার থেকে আমাদের দলের কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, তাদের নাকি ওয়ারেন্ট আছে। আমার প্রশ্ন-তাদের কাছে এখন মুখ্য উদ্দেশ্যটা কী? মানুষকে বাঁচানো নাকি বিরোধী দলকে নিপীড়ন করার জন্য।
রফতানিমুখী শ্রমিকদের গত দুইদিনের দুর্ভোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেল, গত দুইদিন যা দেখেছি আমরা, চোখের পানি রাখতে পারিনি। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে, যমুনার পাড়ে। লাখো মানুষের ভিড় হয়েছে। মানুষ যারা খেতে পারে না তারাও খাবার নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেছে। কোনো প্রশাসনের কোনো লোক আসে নাই। এই হলো জনগণের প্রতি এই সরকারের কমিটমেন্ট। কমিটমেন্ট হচ্ছে যারা রাতের বেলা ভোট করে তাদের প্রতি, আর কারো প্রতি না। আমরা কাজ করছি, মানুষের পাশে আছি, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন। ম্যাডাম অসুস্থ। যখনই আমাদের মহাসচিব দেখা করতে যান তিনি জিজ্ঞাসা করেন-আমরা কী কাজ করছি, কীভাবে মানুষকে সহযোগিতা করছি।
টুকু জানান, এখন পর্যন্ত বিএনপি সারা দেশে প্রায় ৬০টা জেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৬শ অক্সিজেন সিলিন্ডার হেল্প সেন্টারের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে, ৯৫০০ জন করোনা রোগীকে ঔষধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে, প্রায় ২০ লক্ষ মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রি সাধারণ জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২৫ হাজার ২৫০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে টেলিফোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে দলের সকল পর্য়ায়ের কর্মকর্তারা। হেল্প সেন্টার থেকে ঔষধ, মাস্ক, স্যানিটাইজার, অক্সিজেন সরবারহ, অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে। গ্রাম-ইউনিয়ন পর্যায়ে মানুষজনের নিবন্ধনে টিকা প্রক্রিয়ায়ও দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করছে বলে জানান টুকু। এই অনুষ্ঠানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।