হঠাৎ রফতানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি আত্মঘাতি - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৮ এএম, ২ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ২৫ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
লকডাউনের মধ্যে হঠাৎ করেই রফতানিমুখী কলকারখানা খুলে দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘পুরোপুরি আত্মঘাতি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা আজকের পত্রিকাগুলোতে দেখেছেন কী ভয়াবহ অবস্থা? কি রকম তুঘলগি কারবার- আগে বলা হলো যে, করখানা খোলা হবে না, ৫ তারিখ পর্যন্তই বন্ধ থাকবে। আবার হঠাৎ করেই বলা হলো কলকারখানা খোলা হবে। কি করে লোকগুলো আসবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার দেখা যাচ্ছে, রাত্রি বেলা বলছে যে, না, দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন খোলা থাকবে। আমি কি এমনি বলেছিলাম যে, এগুলো আসতেছে সব হেমায়েতপুর থেকে। আসলেই তো! সব হেমায়েতপুরের অবস্থা। এটা বদ্ধ উন্মাদনা ছাড়া আমি কিছু দেখতে পাই না। বিএনপি স্থায়ী কমিটি মনে করে যে, অযোগ্যতা, দুর্নীতি পরায়ণতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এসব আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। দিস ইজ টোটালি সুইসাইডাল।
তিনি বলেন, আজকের পত্রিকা দেখে তো আপনার সন্ত্রস্ত হয়ে যেতে হয়। যেভাবে মানুষ আসছে একেবারে গাদাগাদি করে, ঘাড়ের ওপরে চড়ে এবং সেভাবে আসে কিভাবে। একবার তাদের ছুটি দিলো সব চলে গেলো। আবার ফিরছে তারা মফস্কল থেকে। এখন তো মফস্বলেই সংক্রমণ সবচেয়ে বেড়েছে। ওইগুলো নিয়ে তারা আবার ফিরে আসছে। সো উই আন্ডারস্ট্যান্ড কি হতে যাচ্ছে ঢাকাতে। আমরা মনে করি, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সভায় নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় করোনা পরিস্থিতি এবং বিএনপি গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির অগ্রগতি সম্পর্কে করোনা বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবার হাসান মাহমুদ টুকু সভাকে অবহিত করেন। সভায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
৩। সভায় কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা পর্যবেক্ষণ করে যে, ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সারা দেশে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ পরীক্ষার জন্য জেলা হাসপাতাল ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে কিন্তু সরকারের নীতি ও অব্যপস্থাপনার কারণে বেশির ভাগ আক্রান্ত মানুষ টেস্ট করতে পারছে না। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হচ্ছে যার ফলে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। অন্যদিকে সংক্রমিত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কোনো বেড পাচ্ছে না। অক্সিজেন পাচ্ছে না। করোনা সংক্রান্ত জটিল রোগী ও শ^াস কষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ অক্সিজেন-আইসিইউ বেড পাচ্ছে না। ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে করোনা সংক্রমিত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মৃত্যু বরণ করছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি উন্নত করবার কোনও প্রচেষ্টা সরকারের নেই। অন্যদিকে ঢাকায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপে চরম অব্যবস্থপনা দেখা দিয়েছে। সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংক্রমণের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যার প্রকৃত অবস্থার চিত্র না দিয়ে জনগণকে প্রতারণা করবার জন্য অসত্য তথ্য দিচ্ছে। হাসপাতালে সংবাদ কর্মীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা নিষেধ আরোপ করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট মামলার ভয়ে সংবাদ কর্মীগণ প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। সভা অবিলম্বে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
৪। সকল নাগরিককে টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাক টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ সরকার এখন পর্যন্ত জনগণের সামনে দিতে পারেনি। সরকার অবলীলায় জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করছে। একদিকে সরকার বলছে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে অথচ গত ৭ মাসেও ৬০ লাখ টিকা দিতে পারেনি। টিকা প্রাপ্তির কোনও নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার, যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়। প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা প্রদানের জন্য টিকা প্রাপ্তির উৎস সরকার এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই সব উক্তি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি এটা বুঝতে আর জনগণের বাকি নেই। সভায় ফাঁকা বুলি না আউরিয়ে অবিলম্বে আবারও টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।
৫। অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি ইতিপূর্বে অনেক বারই বলেছে যে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, মাঝি, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিকসহ সকল প্রকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনই কার্যকর হবে না। সেই জন্যেই বিএনপি এই সব মানুষের জন্য এককালীন ১৫,০০০ টাকা অনুদান হিসাবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিলো। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের ২,৫০০ টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃত দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না। উপরন্তু হঠাৎ রফতানিমুখী কল কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে কল কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা আরও মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে গণপরিবহন বন্ধ অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশে তারা হতবিহ্বল হয়ে উঠেছে এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রায় সব বিশেষজ্ঞরাই বলছেন এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেল্টা ভেরিয়েন্টের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হবার সম্ভাবনা বাড়ছে। সভা মনে করে অযোগ্যতা, দূর্নীতি পরায়নতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এই সব আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায় দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আরো ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বাস্ত্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ দফতর বিষয়ক সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের(ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।