সরকার দেশকে অস্থিতিশীল করার নতুন ষড়যন্ত্র করেছে-মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩০ এএম, ৭ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:০৯ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার দেশকে অস্থিতিশীল করার নতুন ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি’ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। নব্বই সালের ৬ ডিসেম্বর সামরিক শাসক এইচএম এরশাদ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেন। এ দিনটিকে বিএনপি ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বাংলাদেশকে শেষ করে দিয়েছে, ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন দেখেন নতুন করে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গতকাল কুষ্টিয়াতে আমাদের বিএনপির অফিস ভাঙচুর করে আবার সন্ধ্যার পরে আমাদের সাধারণ সম্পাদক তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এটা একটা গভীর চক্রান্তের নীল নকশার অংশ। বাংলাদেশে তারা আবার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, বাংলাদেশে তারা আজকে আবারো উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে গণতন্ত্রের সৈনিকদেরকে তারা পিছনে ফেলে দিতে চায়, নির্যাতন করতে চায়। এখন এই সময়ে যত অপকর্ম এটা আপনারা ছাড়া কে করতে পারে-আপনারাই করতে পারেন। সেটা আপনারা তৈরি করছেন আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের জাতিকে ত্রাণ করতে হবে, বের করে আনতে হবে। আমি অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই, আমাদের গ্রামের মানুষেরাও কিন্তু শক্তি হারায়নি, সাহস হারায়নি। আপনি গ্রামে যাবেন, তাদের জিজ্ঞাসা করবেন। সবাই বলছে যে, কবে পরিবর্তন হবে, কবে ডাক আসবে? সেই ডাক আসছে। আমাদেরকে তৈরি হতে হবে। এই আবদ্ধ ঘরের মধ্যে নয়, উন্মুক্ত আকাশের মধ্যে, রাজপথে আমাদের বীর সৈনিকেরা যেভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন, যেভাবে সমস্ত অন্যায়কে পরাজিত করে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, অসুন্দরকে পরাজিত করে সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকে আমাদের তরুণ জেনারেশনকে সেভাবে এগুতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী কারাগারে, আমাদের নেতা তিনি অনেক দূরে। আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের নেতা (তারেক রহমান) দূরে থেকেও সারাক্ষণ দলকে গড়ে তুলবার জন্য, দলকে সংগঠিত করবার জন্য কাজ করছেন। আর আমাদের নেত্রী এই নীরবে থেকেও, এই নীরবতাই আমাদেরকে শক্তি যোগাচ্ছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, তরুণরাই বদলায়, যুবকরাই বদলায়, সমাজ পরিবর্তন করে। আজকে মানুষ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন আপনাদেরকেই আনতে হবে। এই ৬ ডিসেম্বর আমাদের আমান উল্লাহ আমান সাহেবরা যে সাহস ও মেধা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরাও মেধা ও সাহস দিয়ে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করবেন।
হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নয় বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের এগুতে হবে। আপনারা কখনোই হতাশ হবেন না আর কখনো হঠকারী হবেন না। দুটোই মনে রাখতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না আবার হঠকারীও হওয়া যাবে না। ধৈর্র্য ধরে এগুতে হবে। এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। মুহূর্তের মধ্যে গণতন্ত্র হয়ে যাবে না, মুহূর্তের মধ্যে নব্বই সালে যে বিজয় এসছিলো সেই বিজয় আসতে দীর্ঘকাল সময় লেগেছে। এই পথ খুব বন্ধুর পথ, এই পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। কোনো উপায় নেই।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে আগামী মাসে। ফিফটি ইয়ার্স- সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে এই সরকার। আমরাও করছি। আমাদের করা আর তাদের করার মধ্যে পার্থক্য কি? তারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সেই মূল চেতনা গণতন্ত্র, তাকে যে তারা হত্যা করেছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে পরে। তারা আজকে আবার ক্ষমতায় বসে আছে। কিন্তু তারা আজকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। কোন স্বাধীনতা, কোন গণতন্ত্র? অন্যের গলা টিপে ধরার গণতন্ত্র, অন্যের কথা বলতে না দেয়ার স্বাধীনতা, অন্যকে হত্যা করবার স্বাধীনতা, বিনা বিচারে হত্যা করবার স্বাধীনতা। আজকে দুঃখ হয়, লজ্জা হয় যখন দেখি আমেরিকান ১০ জন সিনেটর চিঠি দেন সিনেটে যে, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করছে। যারা হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। যখন দেখি ইউরোপীয় ইউনিয়ন একইরকম চিঠি দিচ্ছে, যখন দেখছি যে, আন্তর্জাতিক টিভি-মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে যে, বাংলাদেশে বিনা বিচারে শত শত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সব খেয়ে ফেলছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার একে একে সবকিছুকে ধ্বংস করেছে। আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং রাষ্ট্রকে এখন তারা বিপন্ন করে ফেলেছে। রাষ্ট্র তো এখন নেই। এখানে দুর্ভাগ্য আমাদের যে, কৃষকরা তার ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না, আমাদের শ্রমিক তার মজুরি পায় না, আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা করতে পারছে না। এই কোভিডের যে তথাকথিত প্রণোদনা শুভংকরের ফাঁকি- সব কিছু তারা একেবারে খেয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের এখন ‘সেই মুনতাসির-ফ্যান্টাসি’র নাটকের মতো সব খেয়ে ফেলছে।
তিনি বলেন, একাত্তর সালে যুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগ দুঃস্থ মা-শিশুদের দুধ চুরি করে বিক্রি করে দিতো কালো বাজারে। এমন চুরি শুরু হলো যে, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনি বললেন যে, আওয়ামী লীগের নাম এখন আর আওয়ামী লীগ নেই, এর নাম নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি। এই একই অবস্থায় আছে। এখন তো আওয়ামী লীগের কাছে যাওয়া যায় না। টাকার এতো গরম। ক্যাসিনো-ফ্যাসিনো কী সমস্ত হচ্ছে। আপনার এক জায়গা থেকে কত হাজার হাজার কোটি, একটা সিন্দুক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বেরুচ্ছে। আজকের পত্রিকায়ও আছে আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুর্নীতির বিষয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পার্টি। কোনোদিনই গণতান্ত্রিক পার্টি ছিলো না। ওদের রক্তের মধ্যে নেই, ডিএনএর মধ্যে নেই। ওদের ডিএনএর মধ্যে একটা নির্যাতনকারী, নিপীড়নকারী। গণতন্ত্র ও আওয়ামী লীগ এক সাথে চলে না। কোনোদিন এক সাথে যায় না। আজকে আওয়ামী লীগ কিভাবে টিকে আছে সেটা আপনারা জানেন, আমি রিপিট করতে চাই না। আজকে দেশনেত্রী কারাগারে, গোটা জাতি আজকে কারাগারে। আমরা এখন যে লড়াইটা লড়ছি সেটা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছি না, আমরা একটা দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়ছি না, আমরা কোভিডের বিরুদ্ধেও লড়ছি। এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের এগুতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নব্বইয়ের ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, আজকে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই। আজকে এরশাদের পতন দিবস, স্বৈরাচারের পতন দিবসে আরেকটি শপথ আমাদের নিতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেমনি আমরা নববইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজকে আমাদের নেত্রী কারারুদ্ধ। তাঁর মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য, ওই নির্বাচনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করব, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার কববো, রাজপথে থেকে আমরা আন্দোলন করবো।
সাবেক ছাত্র নেতা আমিরুল ইসলাম আলীম ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুদ্দিন মনি, খন্দকার লুতফর রহমান, আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু। পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির হোসেন আলী খান হাসান, জাসাসের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক ও মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম।