এমপি শিমুলের বাবা রাজাকার ছিলেন : নাটোর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫২ এএম, ২৬ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৪ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবা রাজাকার ছিলেন বলে দাবি করেছেন নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নব-গঠিত জেলা কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলার। গত শনিবার ইশতিয়াক আহমেদ ডলারের বাবাকে ‘রাজাকার’ বলার প্রতিক্রিয়ায় আজ রবিবার সকালে নাটোর জেলা শহরের এক কমিউনিটি সেন্টারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ইশতিয়াক আহমেদ ডলার বলেন, আমার বাবা সম্পর্কে যা বলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বাবা রাজাকার ছিলেন তা প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। আমার বাবা রাজাকার হলে তো ডিসি অফিসে তালিকা থাকতো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সুজিত সরকারের ‘নাটোর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের ৬০০ নম্বর পাতায় ২১ নম্বর তালিকায় এমপি শিমুলের বাবা হাসান আলী সরদারের নাম রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমার ও আমার বাবার বিরুদ্ধে যে নোংরা ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। রবিবার বিকেলেই নাটোর সদর থানায় মামলা করব। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নব-গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন বলেন, শনিবার দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাটোর জেলার নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে যে সংবাদ সম্মেলন করেছে তা মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য সম্বলিত ও ষড়যন্ত্রমূলক।
তিনি আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে তার ১১ জন আত্মীয়কে পদ দেয়া হয়েছে। এতে করে নাটোরের রাজনীতি তাদের পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় গতি হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও নতুন কমিটি করতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে নাটোরের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে গত ২০ জুলাই ২১ সদস্য বিশিষ্ট নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে। আমাকে মাদকের পৃষ্ঠপোষক বলেছে এটা মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে স্বপন বলেন, এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের ছত্রছায়ায় নাটোরে মাদকের ব্যবসা চলে।
তিনি আরও বলেন, করোনার সময়ে নিজ তহবিল থেকে ত্রাণ বিতরণের কথা বললেও এমপি শিমুল ছয় কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন এবং মাত্র ৭০ লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করেছেন। বাকি টাকা এমপি কানাডায় পাঠিয়েছেন। এমপির চাঁদাবাজির তালিকা তার কাছে আছে দাবি করে স্বপন বলেন, এমপি শিমুল প্রাণ কোম্পানি থেকে ৪০ লাখ টাকা, কিশোয়ান থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকা, ঠিকাদার সমিতি থেকে ২২ লাখ টাকা, স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকাসহ আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, আমার বাবা রাজাকার ছিলেন এ তথ্য সঠিক নয়। যে বইয়ে বাবার নাম লেখা হয়েছে সেই লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়ে এমপি আরও বলেন, সাবেক এমপি আহাদ আলী সরকার ও নাটোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান মিলে লেখককে টাকা-পয়সা দিয়ে বাবার নাম লিখিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া ওই বইয়ে সবার নাম-ঠিকানা বড় অক্ষরে থাকলেও আমার বাবার ঠিকানা ছোট অক্ষরে লেখা। এতেই প্রমাণ হয় ওটা বানোয়াট।
শিমুল আরও বলেন, কারো কাছ থেকে কোন চাঁদাবাজি করিনি। প্রাণ কোম্পানিসহ কিছু প্রতিষ্ঠান আমাকে সহযোগিতা করেছিল সেসব দলীয় অফিস থেকে বিতরণ হয়েছে। লেখকের সঙ্গে যোগসাজশের বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক এমপি আহাদ আলী সরকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি লিখেছেন তিনি একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। যা লিখেছেন তা তিনি গবেষণা করেই লিখেছেন।
এদিকে শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, আমি ওই লেখককে চিনিও না ওনার সঙ্গে যোগসাজশের কোনো প্রশ্নও আসে না। বইটির লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আমার বিপক্ষে কথা বলা ছাড়া এমপি শিমুলের আর কিছুই বলার নাই, সে জন্যই সব ব্যাপারে আমার নাম তিনি বলেন।