শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ‘জাতীয় মানদন্ড আইন’ প্রণয়নের দাবি বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৭ এএম, ১৬ জুলাই,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২২ পিএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
কল-কারখানার দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে ‘জাতীয় মানদন্ড আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কোম্পানির ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহত-আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, একটা ঘটনা ঘটবে, আমরা কয়েকদিন হৈচৈ করব তারপর সবাই আবার চুপ করে যাবো। সেটা না, এটার একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি যে, একটা জাতীয় মানদন্ড আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার যে, এই ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে, আহতরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে, নিহতরা কি ক্ষতিপূরণ পাবে, মালিকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা হবে এবং যারা এটার পরিদর্শনের দায়িত্বে তাদের কোনো অবহেলা থাকলে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা হবে- সব কিছু সেটার মধ্যে থাকা দরকার। যাতে করে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও কনভেনশন ১২১, তার প্রাসঙ্গিক রেকমেন্ডেশন, ১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং রানা প্লাজার (সাভার) দৃষ্টান্ত অনুযায়ী এই জাতীয় মানদন্ড প্রণয়ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের বাঁচার অধিকার, কাজ করলে ন্যায্য মজুরির অধিকার এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মস্থলের অধিকার শুধু মৌলিক মানবাধিকার নয়, আমাদের রক্তে স্বাধীন রাষ্ট্রে সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার। এসব অধিকার বাস্তবায়নের তদারকির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু গত ৮ জুলাই পুড়ে কয়লা হওয়া ৪৯টি লাশের স্তূপে সারা বিশ^ আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলা, অক্ষমতা ও ব্যর্থতার স্তূপ হিসাবেই দেখছে। অকালে ঝরে যাওয়া এসব নিষ্পাপ প্রাণের একটা বড় অংশই ছিল শিশু ও কিশোর-কিশোরী। আইন অগ্রাহ্য করে যারা এদের কাজে নিয়েছে তাদের অপরাধের পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রের যারা তা রোধ করতে পারেনি তাদের অপরাধও কম নয়। যে দারিদ্র্য এই শিশু-কিশোরদের দৈহিক শ্রমে আসতে বাধ্য করেছে তা নিবারণে ব্যর্থতার দায়ও রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের। উন্নয়নের ঢেঁকুর তোলা মুখগুলোতে এই শিশু-কিশোরদের পুড়ে কয়লা হওয়া ছাই কালিমা লেপন করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই জাতির যে, বছরের পর বছর ধরে ঘটে যাওয়া এমন অপমান রাষ্ট্রযন্ত্রকে সক্ষম কিম্বা দায়িত্বশীল করতে পারেনি। বরং, ধনবানদের তোষণ ক্ষমতাবানদের নীতিতে পরিণত হওয়ায় রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়ছে। শুধু গত কয়েক বছরে বিভিন্ন শিল্পে সংঘটিত অগ্নিকান্ডে নিহতদের হিসাব নিলে আমরা দেখবো ২০১০ সালে গরীব এন্ড গরীব সুয়েটার ফ্যাক্টরীতে ২১ জন এবং স্পোর্টস ওয়ার ফ্যাক্টরীতে ২৯ জন; হামীম গ্রুপে ২৯ জন ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে ১১২ জন, ২০১৩ সালে স্মার্ট এক্সপোর্টে ১২ জন, সুংহাই সুয়েটারে ৭ জন এবং আসওয়াক কম্পোজিটে ৭ জন; ২০১৫ সালে স্টাইরোফোম প্যাকেজ ফ্যাক্টরীতে ১৩ জন; ২০১৬ সালে টাম্পাকো ফয়েলে ৩৪ জন, ২০১৭ সালে মাল্টি ফ্যাবস গার্মেন্টসে ১৩ জন ২০১৯ সালে প্রাইম প্লেট এন্ড প্লাস্টিক ইন্ডা: লি:তে ১৩ জন এবং ২০২১ সালে হাশেম ফুড কোম্পানী লিমিটেডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এছাড়াও ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় ভবন ধসে নিহত হয়েছেন ১১৩৬ জন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসংখ্যা শ্রমিক আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন অনেক। এর প্রধান কারণ, বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র কিম্বা পরিচিতিপত্র না দেয়ায় প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায় না। এসব নিহতের মধ্যে রয়েছেন অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরী শ্রমিকও। একমাত্র রানা প্লাজা হত্যাকান্ডে নিহত ও আহতগণ এবং তাজরীন ফ্যাসনের কিছু শ্রমিক ছাড়া পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেউ পায়নি। দেশে প্রচলিত আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বিশ^মানের করার জন্য দেশের শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহের দাবি এখনও উপেক্ষিত। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী গত ৬ বছরে দেশে শুধু শিল্প-করখানায় ৬০৮১টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। সৌভাগ্যক্রমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেউ নিহত হয়নি। কিন্তু ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা এবং বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়েছে হাজারো শ্রমিক। এসব বাস্তবতা আমাদের শিল্পাঙ্গনে ভবন নির্মাণ, অগ্নিনিরাপত্তা এবং নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্ম পরিবেশের ভঙ্গুরতা ও তা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্বলতা ও উদাসীনতা স্পষ্ট করে দেয়। ঘটনা পরম্পরা এটাও প্রমাণ করে যে, এত কিছুর পরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মস্থল নিরাপদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বে¡ও বাস্তবে তা অর্জনে আন্তরিকতার অভাব প্রকট। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিবরণে দেখা যায় যে, কারখানার ভবন নির্মাণ ত্রুটি, পর্যায়াপ্ত সিঁড়ি না থাকা, অগ্নি নির্বাপণে অব্যবস্থা এবং ফায়ার ড্রিল না করা, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি এবং কর্মরত শ্রমিকদের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ না করা এসব অগ্নিকান্ডে এত বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির অন্যতম কারণ। এজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আগেই প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হলে, উপযুক্ত তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক রীতির আলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণে বাধ্য করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতো। কিন্তু এর কিছুই করা হয়নি-করা হয় না। উল্লেখ্য যে, তাজরীন ফ্যাশন ও ট্যাম্পকো কয়েলসহ দেশের ৫টি আলোচিত অগ্নিকান্ড নিয়ে আদালতে ৯টি রিট করা হলেও এখনও সেসব চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসেস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) হাসেম ফুড কারখানা পরিদর্শন শেষে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটির উল্লেখ করেছেন তার অন্যতম হলো- জাতীয় ভবন নীতিমালা অনুযায়ী এই আয়তনের ভবনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা জরুরি ছিল। অথচ ছিল মাত্র ২টি। অন্য তথ্যটি হলো- পুড়ে নিহত হওয়া ৪৯টি লাশই পাওয়া গেছে ভবনের চতুর্থ তলায়। সেখানে কর্মরতদের কাছে জানা যায় যে, চতুর্থ তলার গেট বন্ধ ছিল বলে কেউ বের হতে পারেনি। বিষয়টির উপযুক্ত তদন্ত আমরা দাবি করছি। ১১ বছর ৪ মাস বয়সের হাসনাইন, ১২ বছর বয়সের শান্তা, ১৪ বছর বয়সের মুন্না, ১৫ বছর বয়সের শাহানা ও নাজমুল, ১৬ বছর বয়সের ফয়সাল, ১৭ বছর বয়সের ইউসুফ ও আল আমিনের মত শিশু-কিশোরসহ ১৬ জন নারী ও ২৩ জন পুরুষ শ্রমিকের অগ্নিদগ্ধ হয়ে এমন মর্মান্তিক ও অকাল মৃত্যুতে এবং ১২ বছরের রুমা ও ১৫ বছরের নদিয়ার মত অসংখ্য আহতদের শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡Íনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। গত পরশু ঐ কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের আহাজারি এবং এখনও বেতন না পাওয়া কর্মহীন শ্রমিকদের দুরবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ইতিমধ্যে আমাদের দল বিএনপিসহ দেশের বহু রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন নিহতদের জন্য শোক এবং সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ মালিকপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও অবহেলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা দেশের সবগুলো শিল্প বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে কিনা এবং আইন অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর কিনা তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ১২ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট কারখানা পরিদর্শন শেষে নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসাসহ পুনর্বাসন এবং কারখানা মালিক ও পরিদর্শকদের বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, অন্যদিকে ১৪ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিমের একক ভার্চুয়াল বেঞ্চে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাষ্ট, বেলা ও সেফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি কর্তৃক প্রত্যেক নিহত শ্রমিক পরিবারকে ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে মাননীয় বিচারপতি নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, কারখানার পরিবেশ ও মান উন্নয়নে ব্যবসায়ী সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রেখে বলেছেন- ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা আছে কিভাবে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা নেবে আর কিভাবে ব্যাংকের ঋণের টাকা মাফ পাওয়া যাবে। তাদের শিল্প-কারখানাগুলো যথাযথভাবে চলছে কি না, কোথায় কি দুর্বলতা ও ঘাটতি, তা দেখা উচিত। ঈদের ছুটির পর আবেদন বিবেচনার আশ^াসও দেন তিনি। কিন্তু সবাই জানে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহের প্রায় সবই সরকারি প্রভাবাধীন এবং সরকারের বশংবদ হিসাবে মনোনীতগণ নেতৃত্বে আসীন। তারা ধনবান, ক্ষমতাবান এবং বেপরোয়া বলেই এতগুলো প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার পরেও একটা শোক বার্তাও দেয়নি বলে মাননীয় বিচারপতিকে মন্তব্য করতে হয়েছে। কাজেই আইনের ইতিবাচক সংশোধন কিম্বা বিচারিক সিদ্ধান্ত ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের সুবিচার পাওয়া অসম্ভব। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সজীব গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড কোম্পানী পাকিস্তানি সেজান, নসিলা ও কুলসনসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের পণ্য উৎপাদন করতো। সজীব গ্রুপের বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয় মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেপাল, ভুটান, মালায়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। বিদেশি ব্রান্ডের পণ্য উৎপাদনকারী ও বিদেশে রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান রানা প্লাজা হত্যাযজ্ঞের পর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আইটিইউসি, ইন্ডাস্ট্রি অল, বাংলাদেশের কিছু শ্রমিক সংগঠন, সরকার, বিজিএমইএ এবং ব্রান্ড ও বায়ারদের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি ফান্ড গঠন করে নিহত ও আহত শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই মানদন্ড নির্ধারণে সরকার পক্ষ ছিল বিধায় তা জাতীয় মানদন্ড হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, কাজেই বিদেশি ব্রান্ডের পণ্য উৎপাদনকারী ও বিদেশে রফতানিকারী হিসাবে হাসেম ফুড কোম্পানীর নিহত ও আহত শ্রমিকদেরকে আমরা একই হিসাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায়িত্ব শিল্প মালিকের এবং মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করার দায়িত্ব সরকারের। এই দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়- মানবিক। এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর কিছুদিন সবাই সোচ্চার থাকলেও এক সময় তা থেমে যায় এবং পুনরায় এমন ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এমন প্রহসন বন্ধ হওয়া জরুরি। সেই লক্ষ্যে দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতি পূরণের একটি জাতীয় মানদন্ড আইন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। আইএলও কনভেনশন ১২১, তার প্রাসঙ্গিক রিকমেন্ডেশন, ১৯৫৮ সালের মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন এবং রানা প্লাজার দৃষ্টান্ত অনুযায়ী এই জাতীয় মানদন্ড প্রণয়ন করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাসেম ফুড কোম্পানীর ৯৯৩ কোটি টাকাসহ পুরো সজীব গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই কারখানার শ্রমিকেরা গত ২ মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম ভাতা না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেছে এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় গত ৫ তারিখে আংশিক পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও তা করা হয়নি বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই অবস্থায় শ্রমিকেরা অকালে নিহত হলেন এবং গতকাল পত্রিকায় এসেছে তাদের স্বজনরাও খালি হাতে ফিরে গেছেন। এমন অমানবিক ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং বিচারযোগ্য অপরাধ।
জানা গেছে, চাপের মুখে গতকাল কিছু শ্রমিক জুন মাসের বেতন পেয়েছেন। অন্যদের প্রাপ্যতা অনিশ্চিত। এখনও ওভার টাইম এবং বোনাস দেয়া হয়নি। অবিলম্বে সকল শ্রমিকের বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাস প্রদানের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা গত পরশু কারখানাটি পরিদর্শনকালে কর্মহীন শ্রমিকদের কাজের প্রত্যাশায় দাবি জানাতে দেখেছি। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন বেতনহীন এসব শ্রমিকের অবিলম্বে প্রাপ্য পরিশোধ করা জরুরি। একই সাথে আমরা মনে করি, সজীব গ্রুপের প্রত্যেকটি কারখানা যথাযথ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কর্মোপযোগী করে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের কাজে ফেরার পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার, যাতে তারা পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করতে পারে। হাসেম ফুডের মর্মান্তিক ঘটনার যাতে আর কোথাও পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দায় রাষ্ট্রের। আমরা আশা করবো, রাষ্ট্র জনগণের প্রতি দায়বোধের ব্যাপারে অবহেলা দেখানোর অবস্থান থেকে সরে এসে জনগণের জান-মাল রক্ষায় সচেষ্ট হবে। মনে রাখতে হবে, যে সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে কিম্বা ব্যর্থ হয়- সেই সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না।