দেশে খালেদা জিয়ার থেকে গরিব আর কেউ নেই-গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩১ এএম, ৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:২১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামফলক পরিবর্তনের পরিণতি শুভ হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার থেকে গরিব আর কেউ নেই বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়াউর রহমানের কিছু নেই, কিছু রেখে যাননি। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার থেকে গরিব এখন আর কেউ নেই। তাঁর নিজের একটা বাড়ি নাই, ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রায়ই ভাড়া পরিশোধের নোটিশ আসে। বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বৈধ ঘোষণা করা হলেও তিনি ব্যাংক থেকে একসঙ্গে ৫০ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারে না। বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন ব্যক্তির কীভাবে ৫০ হাজার টাকায় চলে? এ সামান্য টাকায় কীভাবে তাঁর চিকিৎসা হয়?
আজ বুধবার (২রা ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। পুরনো ঢাকার মোগলটুলিতে জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জিয়াউর রহমান একটি ইতিহাস। এ দেশ একটি যুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে, এই দেশ রক্ত বিসর্জন দিয়ে, এই দেশ বাংলা ভাষা, জীবন ও রক্ত দিয়ে। যাদের রক্তে লেখা এই স্বাধীনতা, তাদেরকে রক্তকে অপমান করার দুঃসাহস দেখাবেন না। আমি বলব, এবাউট টার্ন। আবারও বলব, ভ্রাতুষ্পুত্রকে বলেন- তিনি যেন নিজ হাতে মাহুতটুলিতে জিয়াউর রহমানের নামের সাইনবোর্ডটা লাগিয়ে দিয়ে আসেন। তা নাহলে যেদিন ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশে ভাঙাচুরা যে শুরু হবে সেটা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তখন আপনার থাকবে না-এই কথাটা ভাবেন।
শেখ হাসিনার উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিহিংসা বাদ দেন। কম তো খান নাই, অনেক খাইছেন। এগুলো শেষ করতে যতটুক হায়াত দরকার, আল্লাহ তো এতো হায়াত দেয় নাই। বাংলাদেশকে তো আপনি শেষ করে দিয়েছেন। এসব খেতেও পারবেন না, কবরে নিয়েও যেতে পারবেন না। সেই কারণে বলব, স্বেচ্ছায় মানে মানে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। আপনি যদি স্বেচ্ছায় জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে দেন তাহলে মান ইজ্জত বাঁচবে। আর জনগণ যদি ক্ষমতা থেকে নামায় মান-ইজ্জত-অর্থ-বিত্ত সবই হারাবেন।
তিনি বলেন, আদর্শ-চেতনা-দেশপ্রেমে জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে জিয়াউর রহমান, গণতন্ত্রে জিয়াউর রহমান, উৎপাদনে জিয়াউর রহমান। তাঁকে সহ্য করতে আপনারা (আওয়ামী লীগ) পারবেন না। তাঁকে ইচ্ছা করলে আড়াল করা যায় না। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে যত স্মৃতিসৌধ, কত কিছু বানাচ্ছেন। সেগুলো রক্ষার স্বার্থে হলেও ইতিহাসে হাত দেবেন না। যে যেখানে আছেন রাজনৈতিক কারণে, ঐতিহাসিক কারণেই জাতির সামনে তাঁরা এখানে আছেন। তাদেরকে থাকতে দিন, তাদের নাম রাখতে দিন। মানুষের হৃদয়ে আঘাত করলে সেই আঘাতের পাল্টা আঘাত আসবে তখন কোনো ক্ষমতাই টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, জিয়াউর রহমানের আজকে কিছুই নাই, কিছু রেখে যান নাই। বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চেয়ে আর গরিব কেউ নাই। নিজের একটা বাড়ি নাই। ভাড়া বাড়িতে থাকেন। প্রায়ই নোটিশ পান। ভাড়া পরিশোধ করা যায় না। দুর্নীতি দমন কমিশন বেগম খালেদা জিয়ার যা উপার্জন, যা সম্পদ আছে বৈধভাবে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তাহলে তাঁর একাউন্ট সিজ করে কেন? কেন তিনি একাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারেন না। ঢাকা শহরে একজন নেত্রীর ৫০ হাজার টাকায় কীভাবে চলে, কীভাবে তাঁর চিকিৎসা চলে?
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি ইতিহাস। আজ বিজয়ের মাসের দ্বিতীয় দিন। ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের মানুষ বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য যার যার জায়গা থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ৫০ বছর পূর্তি পালন করবেন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অযাচিতভাবে স্বাধীনতার চেতনায় যিনি বিশ্বাস করেন না, যিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তাকে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী খেতাব দেয়ার কোনও সুযোগ নাই। দশ মাস বয়স হলো করোনার। ১০ মাসের মধ্যে ১০ মিনিটের জন্যও প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন থেকে বের হন নাই। তার নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি ঘরের বাইরে হন নাই। কিন্তু ১৮ কোটি মানুষ তো নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে বসে থাকতে পারে নাই। আমাদের অনেক সিনিয়র নেতা করোনায় প্রাণ দিয়েছেন। এখনও করোনায় ভুগছেন অনেকে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমিও যে কোনও সময় আক্রান্ত হতে পারি। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে রাস্তায় নামতে হয় শেখ হাসিনার জন্য। করোনার মৃত্যুর চেয়ে যদি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে মৃত্যু হয় তাহলে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার-আমাদের কোনও অবদান থেকে থাকলে সেটা পরিপূর্ণ হবে।
তিনি বলেন, আজকে মৃত্যুর ভয় করে ঘরে বসে থাকতে পারি না। করোনার থেকেও মারাত্মক ভয়ানক আজকের সরকার। কারণ করোনা দল-মত-জাতি বোঝে না। করোনা নিরপেক্ষ। দল-মত না বুঝে আক্রমণ করে করোনা। কিন্তু শেখ হাসিনা দল বোঝেন, মত বোঝেন, জাত বোঝেন, বংশ বোঝেন। যাকে চান তিনি তাকে আক্রমণ করেন। এ ভয়াবহ করোনার হাত থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ভুপেন হাজারিকার একটা বিখ্যাত গান আছে- ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। কিন্তু আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য না। আওয়ামী লীগ শুধু আওয়ামী লীগের জন্য। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে মানুষের পর্যায়ে ধরা যায় না। আওয়ামী লীগ শুধু আওয়ামী লীগের জন্য কাঁদে। তারা নিজেদেরই শুধু চেনে, সাধারণ মানুষকে চেনে না।
জিয়াউর রহমানের নাম ‘মুছতে পারবেন না’ উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ের মানুষ জিয়াউর রহমান। আত্মার আত্মীয় জিয়াউর রহমান। তাঁর নাম হৃদয়ে লেখা, কালিতে লেখা না। ইচ্ছা করলে মোছা যায় না। ইচ্ছা করলে ছেঁড়াও যায় না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে বিশাল একটি মাঠ আছে, মাঠের নাম এখনও গান্ধী মাঠ। নোয়াখালীতে এখনও একটি আশ্রম আছে, আশ্রমের নাম গান্ধী আশ্রম। দিল্লিতে এখন একটি রোড আছে, রোডে নাম জিন্নাহ রোড। পাকিস্তানিরা যে বর্বর তারাও কিন্তু গান্ধীর নাম মোছে নাই। কারণ ইতিহাসে পাতায় কোথায় কখন কার নাম স্মৃতি হয়ে থাকে এটা মুছে ফেলা মানে ইতিহাস মুছে ফেলা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব- উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সুলতান মো. নাসির উদ্দিন, আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, রফিক হাওলাদার, ইয়াসীন আলী, সাদরেজ জামান প্রমুখ। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ-দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।