সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনগুলোতে বিরাজনীতিকরণের আলামত দেখা যাচ্ছে : সুজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৬ এএম, ৩০ নভেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০১:১৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনগুলোতে বিরাজনীতিকরণের আলামত দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
আজ রবিবার (২৯ নভেম্বর) সুজন-এর উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র, নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক অনলাইন বৈঠকে বক্তরা এসব কথা বলেন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, গণতন্ত্র হল জনগণের সম্মতির শাসন, যে সম্মতি প্রতিষ্ঠা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনের মাধ্যমে এক বা একাধিক বিকল্পের মধ্য থেকে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যে বেছে নেয়। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষমতা জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে ব্যবহার করে। তবে বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ ক্ষমতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর অপব্যবহার ও কুক্ষিগতকরণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কতগুলো প্রতিষ্ঠান- সাংবিধানিক, বিধিবদ্ধ ও রাষ্ট্র-বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি ‘চেকস এন্ড ব্যালেন্সেস’ বা নজরদারিত্বের কাঠামো গড়ে তোলা হয়। এই নজরদারিত্বের কাঠামো কার্যকারিতা প্রদর্শন করলেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও কার্যকর হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে কয়েকটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের সংবিধানে কমিশনকে আইন ও বিধি-বিধানের সঙ্গে প্রয়োজনে সংযোজন করারও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যে ক্ষমতা মূলত নির্বাচিত সংসদের। উপরন্তু নির্বাচনের সময়ে কোনোরূপ কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতাও আমাদের উচ্চ আদালত কমিশনকে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও আমাদের নির্বাচন কমিশন ছিল সম্পূর্ণ নির্বিকার- অনেকগুলো গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে তারা তদন্ত করেছে বলেও আমরা শুনিনি। এটি অনস্বীকার্য যে, সরকার ও রাজনৈতিক দল, বিশেষত ক্ষমতাসীন দল না চাইলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব, এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও। তবে এ ক্ষেত্রে কমিশনের হতে একটি বড় অস্ত্র রয়েছে, যা হল নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া। যদি কমিশন মনে করে যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ অনপস্থিত, তাহলে নির্বাচন কমিশন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করতে পারে। নির্বাচনের দিনেও যদি নির্বাচনকে অযাচিতভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়, তাহলেও কমিশন নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। অনেকের ধারণা যে, একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন সাহসী ভূমিকা নিলে, আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসই হয়ত ভিন্ন হত।
পরিশেষে তিনি বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নূরুল হুদা কমিশনের সকল ক্ষমতা থাকলেও সে ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে খুলনা, গাজীপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অসততা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আমাদের অসংখ্য নাগরিকের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, তারা ভোট দিতে চাইলেও ভোট দিতে পারবে না। আর ভোট দিলেও তারা ‘ফলাফল’ প্রভাবিত করতে পারবে না- যারা জয়ী হবার তারাই জয়ী হবেন। কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনি ফলাফলের বিশ্লেষণ থেকে আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ফলাফল বহুলাংশে বানোয়াট। তাই এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাই আজ ভেঙ্গে পড়েছে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই অকার্যকর করে ফেলেছে। এছাড়াও আমাদের রাজনীতি আজ বহুলাংশে বিরোধী দল শূন্য হয়ে পড়েছে, যার দায় অবশ্য আমাদের প্রধান বিরাধী দলও এড়াতে পারে না। ফলে বহু নাগরিকের মধ্যে আজ চরম অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সূচনা বক্তব্য রাখেন সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, তোফায়েল আহমেদ, বিচারপতি এম এ মতিন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, বিখ্যাত ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুল