বয়সের কারণে মির্জা ফখরুলের মতিভ্রম ঘটেছে - তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫২ এএম, ২১ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৮ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্ত অর্জন জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। যেখানে সবাই প্রশংসা করছে সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বলেন? দেশের ৫০ বছরের অর্জন নিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে বয়সের কারণে ওনার মতিভ্রম ঘটেছে। বিএনপির ডাক্তারদের সংগঠন ‘ড্যাব’কে অনুরোধ জানাবো মির্জা ফখরুলের মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করাতে।
তিনি বলেন, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪১ শতাংশ ছিল সেখান থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আজকে বিশ্বের পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে এক সময়ের ঋণ গ্রহীতা বাংলাদেশ এখন অন্য দেশকে ঋণ দেয়। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা এই সমস্ত উন্নয়ন দেখতে পায় না। প্রতিদিন মিথ্যা কথা অব্যাহত রেখেছে। তাদের রাজনীতির মূল বিষয় হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য এবং তারেক রহমানের শাস্তি।
আজ রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী বহলপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপকারভোগীদের মাঝে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দুই শতক জমিসহ ঘরের কবুলিয়তনামা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। বক্তব্য শেষে দেশের ৫০ বছরের অর্জন আওয়ামী লীগ নষ্ট করে দিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে গণবভন থেকে রাঙ্গুনিয়ায় অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর দেয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গুনিয়া প্রান্ত থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুর রহমান ও উপকারভোগী জাহানারা বেগম প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ইউএনও এ সময় দুই দফায় রাঙ্গুনিয়ার ১৬৫টি গৃহহীন অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘরনির্মাণ করে হস্তান্তর এবং দলীয়ভাবেও আরো কিছু ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগে অনেক মানুষের মানসম্মত গৃহ ছিল না, বঙ্গবন্ধু কন্যার ঘোষণা অনুযায়ী এখন গৃহের সমস্যারও সমাধান হয়েছে। এখন যারা ঘর পেয়েছে তারা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি এভাবে জমিসহ ঘর পাবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলবেন। স্বপ্নকেও হার মানিয়েছে তাদের প্রাপ্তি। এই ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে কখনো ঘটেনি, অন্য কোনো দেশে ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দুইশ বিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি। আমরা অন্যান্য দেশকেও ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব, জার্মান প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. অর্মত্য সেন প্রশংসা করেন। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা প্রশংসা করতে পারে না।
বেগম জিয়ার সুস্বাস্থ্যের সাথে দীর্ঘায়ু কামনা করে তথ্যও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, কিন্তু আপনারা দেখেছেন খালেদা জিয়া হাসপাতালে থাকাকালীন প্রতিদিনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব এবং তাদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তার চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেছেন। এবং দাবি দিয়েছেন তাকে সুস্থ করার জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বাড়ি ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশে তিনি ভাল সুচিকিৎসা পেয়েছেন এবং ভাল চিকিৎসা পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তারা যে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি করেছিল সেটি যে অমূলক তা প্রমাণ হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে পাকিস্তানের হা-হুতাশ হয় আর ভারতের টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় বিতর্কের ঝড় ওঠে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রায় সমস্ত মানব উন্নয়ন সূচক, সামাজিক সূচক, অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তান আমাদের পেছনে। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে আমরা ভারতকে পেছনে ফেলেছি, ভারতে মানুষের মাথাপিছু আয় যেখানে দুই হাজার ডলার, সেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে, জুন মাসে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমরা মানব উন্নয়ন সূচক এবং সামাজিক সূচকে ভারতকে বহু আগেই পেছনে ফেলেছি। মহামারির মধ্যে প্রায় সবদেশে মাইনাস জিডিপি গ্রোথ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে পজিটিভ জিডিপি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে কোনো গৃহহীন মানুষ থাকবে না। মানুষের তিনটি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। অন্ন সমস্যার সমাধান বহু আগে হয়েছে। এক সময় বাংলাদেশকে কেউ কেউ বলতো তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ, সেই বাংলাদেশ এখন উপচে পড়া খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। দুর্যোগ দুর্বিপাকে আগে আমরা অন্য দেশ থেকে সাহায্য নিতাম, এখন আমরা বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করি। নেপালের ভূমিকম্পে আমরা ৩০ হাজার মেট্রিক টন চাল সহায়তা দয়েছি। শ্রীলঙ্কা-ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য দেশকেও আমরা সহায়তা দিয়েছি।
তিনি বলেন, এক সময় পুরানো কাপড় বস্তাভরে এদেশে আসতো, সেই ধোলাই করা পুরনো কাপড় আমরা বিভিন্ন বাজার থেকে কিনে পরতাম। আর এখন আমাদের দেশে সেলাই করা কাপড় বিদেশে যায়, তারা সেই কাপড় পরে এখন তাদের সাহেবগিরি বজায় রাখে। এভাবে বস্ত্রের সমস্যার সমাধানও হয়েছে। এখন বাসস্থানের সমাধানও করছেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, মেয়র শাহজাহান সিকদার, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মোনাফ সিকদার, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোহাম্মদ সেলিম, গিয়াস উদ্দিন খান স্বপন, ইউপি চেয়ারম্যান নুর কুতুবুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।