শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে রেখে জাতিকে মেরুদন্ডহীন করে দিচ্ছে : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ এএম, ২০ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৪ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে রেখে জাতিকে মেরুদন্ডহীন করে দিচ্ছে উল্লেখ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নেবে কিন্তু হল খুলবেন না। এর থেকে বড় ভুল হতে পারে? ছাত্ররা কি মাঠে থাকবে? মাটিতে বসে থাকবে?
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবক ফোরাম’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংসদে পরীমনি নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু শিক্ষা নিয়ে একটা কথাও হয় না। এই লজ্জা আমরা কোথায় রাখি? এই ভুলের সংশোধন কীভাবে হবে? এই ভুলের সংশোধন তারা (সরকার) করবে না। বর্তমান সরকার বিনা ভোটের সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার। এই সরকারের সকল সিদ্ধান্ত ভুল হবে, এটাই স্বাভাবিক। আজ সব কিছু খোলা। বাজার খোলা, ব্যাংক খোলা, অফিস খোলা। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তিনি বলেন, আগে গ্রামের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা পেত। আমাদের আমলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মাত্র ৮ জন ঢাকা শহরের ছিলাম। বাকি সবাই গ্রাম থেকে এসেছিল। তারা আমাদের থেকে পরীক্ষায় ভালো করতেন। আজ সেই সুযোগ নেই।
শিক্ষকরা রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘শিক্ষার চূড়ান্ত অপমান এ রকম করে হচ্ছে। তারা (সরকার) বসে বসে ডুগডুগি বাজায়! আমরা তো উন্নয়নের মহাসড়কেই উঠে গেছি। উন্নয়ন মানেই কি মগবাজার ফ্লাইওভার?’ মান্না বলেন, ‘পত্রিকায় পড়েছি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিন্ডারগার্টেনও বন্ধ; কিন্ডারগার্টেন মানে একটি বিশেষ মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর একজন প্রিন্সিপাল নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ার-টেবিল বিক্রি করে ভাড়া পরিশোধ করেছেন, এরপর গ্রামে গেছেন। গ্রামের বাজারে চা বিক্রি করছেন। লজ্জা করে না এই শিক্ষামন্ত্রীর? লজ্জা করে না এই প্রধানমন্ত্রীর?’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা এমন কী ভ্যানগাড়ি চালায়, রিকশা চালায়Ñ শিক্ষিত মানুষ যারা চাকরি হারিয়েছেন যাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গ্রাম-গ্রামান্তরে অনেক মানুষ এমন। বাংলাদেশে শিক্ষার চূড়ান্ত অপমান এ রকম করে হচ্ছে।’ মুরুব্বি, গার্ডিয়ান পিতা-মাতা তাদের অনেকে ফেসবুকে লিখেছেনÑ ‘কচি কিশোর কেবল যৌবনে পা দিয়েছে তারা অনলাইন ক্লাসের নামে, অনলাইন কাজের নামে ইন্টারনেটে ঢুকে আজ সমস্ত অশ্লীলতার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা কি প্রজন্ম তৈরি করছি!’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘যারা এতদিন ধরে বললেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছি এগুলো সবই ফোর-টুয়েন্টি কথাবার্তা ছিল। তার প্রমাণÑ অনলাইন পরীক্ষায় কোনো গার্ড নেই। কোনো পরিদর্শক নেই। যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি বই খুলে দেখে দেখে লিখছেন, তাকে চেক দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।’ আমরা বহুবার বলেছি- এই সরকার দেশের ভোট নষ্ট করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দেড় শ-দুই শ পর্যন্ত মামলা আছে জানিয়ে মান্না বলেন, ‘পরিশ্রম করে করে মামলা দিয়েছে না? তাদের অবশ্য মামলা দেয়ার জন্য বুদ্ধি খাটানোর দরকার লাগে না। আমাকে যখন গ্রেফতার করল। ইন্টারোগেশন করে, জিজ্ঞেস করে খালি উল্টাপাল্টা কথা। আমি বললাম, ভাই, যা জানতে চান সেটা বলেন। বলে মামলা তো সাজাতে হবে কিছু পয়েন্ট দেন। আমি বললাম- আমি যদি পয়েন্ট দেই তবে আপনারা কি মামলা সাজাবেন?’ মান্না বলেন, ‘তাদের যে প্রধান প্রশ্নকর্তা তিনি আমাকে একদিন বললেন, আপনাকে আমরা একটা মামলা দিয়েছি সেটা বিদ্রোহের, কিন্তু সেনাবাহিনীর কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন সেটা বের করতে পারিনি। আরও কঠিন একটা মামলা দেয়ার চেষ্টা করবো। পুলিশ জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি পুলিশের দোষ দেই না। পুলিশের সরদার তারে যদি বলে মিথ্যা কথা না লিখলে চাকরি থাকবে না, তো সে কি করবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় একজন বক্তা আছেন না ত্ব-হা (আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান)। তাকে অনেকদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর এখন কোথায় পেলেন?’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা জানি একটি রাষ্ট্রকে যদি ধ্বংস করতে হয়, তবে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশের পথ রুদ্ধ করতে হবে। তাহলে আর সেই জাতি সামনে এগোতে পারবে না। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। আমি মনে করি আজকে যে কাজটা হচ্ছে সেটা আত্মঘাতী। রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলছে, ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, শিক্ষা নিয়ে করোনার এই দীর্ঘ সময়ে কোনো সঠিক পরিকল্পনাই করা হয়নি। আমরা বলেছিলাম যেভাবেই শিক্ষা চালু রাখা হোক না কেন শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে করা হবে। টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের কোনো উন্নতি হয়নি। অনলাইন গতানুগতিক। আর অটোপাস দেয়া হচেছ৷ ফলে এই শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। আমরা যদি শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিকল্পনা করতাম তাহলে হয়তো এখন স্কুল খোলা যেত। অটোপাস দিতে হত না। সব খাতে প্রণোদনা দেয়া হল। এই খাতে নাই।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয়। জনগণের সরকার হলে জনগণের কথা ভাবত। এক সময়ে অত্যাচারী রাজারা চাইত না তার রাজ্যের লোকেরা শিক্ষিত হোক। তারা মনে করত জনগণ শিক্ষিত হলে তারা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। শেখ হাসিনা ভাবছেন জনগণ শিক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধেও জনগণ বিদ্রোহ করবে। এই কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হলেও যারা ‘শিক্ষার মা-বাপ’ বলে পরিচিত, তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেলেও ক্লাসে যেতে পারেনি। বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু থেকে নির্বিকার।
শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবক ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক সংসদ সদস্য ও ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলম, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণমাধ্যম উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, কৃষক দলের মিয়া মো. আনোয়ার, মানুষ বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।