অত্যন্ত অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবি ফখরুলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৫ এএম, ১৮ জুন,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পুরোনা রোগের জটিলতায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘অত্যন্ত অসুস্থ’ উল্লেখ করে তাঁর উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি এই কথা জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডে বেরাইদ এলাকায় বিএনপি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। বেরাইদে একটি নিম গাছের চারা রোপণ এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে নিম গাছের চারা বিতরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মহাসচিব। বিএনপি এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে ৫ লাখ নিম গাছের চারা রোপণ করবে। ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতবৃন্দ জানান, তারা উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ১০ হাজার নিম গাছ রোপণ করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, তাঁর (খালেদা জিয়া) করোনা হওয়ার পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো। আল্লাহর রহমতে কোভিডের যে আক্রমণ সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছর তাঁর চিকিৎসা না হওয়ার কারণে, কারাগারে রাখার কারণে তিনি অনেকগুলো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর মধ্যে প্রথম তাঁর হার্টে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাঁর কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাঁর লিভারে সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং তাঁর একটা পুরনো অসুখ যেটা তাঁকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়- আর্থারাইটিসও রয়েছে। এই সবগুলো মিলিয়ে উনি অত্যন্ত অসুস্থ আছেন। ডাক্তাররা বলছেন, তিনি অত্যন্ত ভালনারেবল আছেন।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, ওনার পরিবার আবেদন করেছেন সরকারের কাছে যে, তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হোক। এই সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। সরকারকে আহবান জানাব যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে এই মহান নেত্রীকে যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং দেশকে উন্নত করার জন্য তাঁর বহু অবদান রয়েছে সেই নেত্রীকে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, তাঁকে মুক্তি দেয়া হোক। তাঁকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে তাঁর আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
পোস্ট কোভিড নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়া বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তিনি চিকিৎসায় নিচ্ছেন। এই হাসপাতালে ভর্তির ৬ দিন পরে (৩ মে) শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাঁকে সিসিইউতে থাকতে হয়েছে এক মাস। পরে অবস্থার উন্নতি হলে গত ৩ জুন কেবিন ফিরিয়ে আনা হয় তাঁকে। গত ১৪ এপ্রিল গুলশানের বাসা ‘ফিরোজ’য় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনামুক্ত হন ৯ মে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য অন্যতম প্রধান হচ্ছে গাছ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য এই বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলন মনে করে মানুষকে উদ্বুব্ধ করতে হবে। আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব সারাদেশে বৃক্ষরোপণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরপর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সর্বত্র সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয়েছিলো। সেজন্য আমরা আবারও নতুন করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে সারাদেশে এই বৃক্ষায়নের কর্মসূচি শুরু করেছি। এটাকে আমরা একটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে চাই।
পরিবেশ ও জলাবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাজেটে সরকারের বরাদ্দের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা একটু খবরের কাগজ বা বইপত্রের দিকে খেয়াল রাখেন পরিবেশ উন্নয়নের জন্য এই সরকার কত পারসেন্ট জিডিপির বরাদ্দ রেখেছে সেটা কী আপনারা বলতে পারবেন? খুব সামান্য। অথচ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবেশ উন্নয়নের অনেক বেশি বরাদ্দ করেছিলেন। সমস্ত উপকূলবর্তী এলাকায় গাছ লাগানোর জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন সেখানে গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছিলো। সব জায়গায় সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয়েছিলো। বৃক্ষরোপণের কর্মসূচির আওতায় এবার সারাদেশে ৫ লাখ নিম গাছের চারা রোপণের ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন এই বৃক্ষরোপণের মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন যুদ্ধ শুরু করি। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য, পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরকে বাঁচানোর জন্য আমার মনে হয় যে, আমরা সবাই যদি ৫টা করে গাছ লাগাই তাহলে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পারবো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে একদিকে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে অন্যদিকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। তারা ক্ষমতায় আসার পরে বড় বড় রাস্তার দুই ধারে যে পুরনো গাছগুলো ছিলো সেগুলোর একটাও নাই। আপনি ঢাকার বাইরে গিয়ে দেখবেন জেলা পরিষদের যত গাছ ছিলো সব নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে কেটে নিয়ে গেছে। এখানে বুলবুল (রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল) আছেন তিনি বলতে পারবেন। আমাদের ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতেই একটা সেগুন বাগান ছিলো। একটা খালের পাশ দিয়ে অনেক সেগুনের গাছ লাগিয়েছিলেন একজন ডিএফও পাকিস্তান আমলে। এখন প্রায় সাফ করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ আসার পর থেকে। সত্যিকথা বলতে কী ওই জায়গাটা এখন দেখলে এতো খারাপ লাগে। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, পরিবেশ ধবংস করেছে এবং একই সঙ্গে রাজনীতির পরিবেশকেও ধ্বংস করছে। সত্যিকার অর্থে তারা মানুষকে চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
ঢাকার আশপাশের নদীগুলো ভরাট করে দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদেরও দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা খবরের কাগজ দেখেন, টেলিভিশনের দেখেন, এই যে আপনারাদের তুরাগ নদী সব দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন খবরের কাগজে আমরা দেখি। কারা দখল করছে? সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করছে। কারা সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে, কারা পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছে? কারা ক্লাব তৈরি করছে? সব আওয়ামী লীগের লোকজন, এমপি। কারা সিমেন্ট কারখানা তৈরি করছে? এপাশে চারদিকে (বালু নদী) তাকিয়ে দেখবেন এখান থেকে সেই রুপগঞ্জ পর্যন্ত সব দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা। এভাবে দখল করে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে একটা বিরূপ প্রকৃতি তৈরি করেছে যেটা নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকা বড় কষ্টকর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। গত ৫/৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতির তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন সময়টা খুব খারাপ। আমাদেরকে দুইটা দানবের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। একটা হচ্ছে অদৃশ্য দানব করোনাভাইরাস। সারাদেশে এই সংক্রামণ পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দেখেন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা কিভাবে উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলেছে। আমরা দেখছি, এই করোনা নিয়েও তারা ব্যবসা করে। টেস্ট নিয়ে ব্যবসা করে, হাসপাতালের বেড নিয়ে ব্যবসা করে, হাসপাতাল নিয়ে ব্যবসা করে, এখানে তিনশ ফিটের কাছে একটা হাসপাতালই তারা উধাও করে দিয়েছে। এভাবে আজকে তারা (সরকার) দেশে দুর্নীতির মহোতসব শুরু করেছে, সেই মহোৎসবে মানুষের যে ন্যায়সঙ্গত অধিকার তাকে তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এএফএম আবদুল আলীম নকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সহ-সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।