জনগণের উত্তাল আন্দোলনে আ.লীগ ভেসে যাবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৪ এএম, ১৩ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার পতনের আন্দোলন শুরুর আগে অতিদ্রুত দলের মধ্যকার ‘বিভেদ-গ্রুপিং’ দূর করার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ কি করছে-করুক। জনগণের কাছে তাদের অন্যায় টিকে থাকতে পারবে না, তারা ভেসে যাবে। জনগণের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) ভেসে যাবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আসুন অতি দ্রুত আগামীতে আমরা নিজেদেরকে পুরোপুরি সংগঠিত করে ফেলি, নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি, বিভেদগুলো দূর করি এবং একত্রিত হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে একত্রিত করে আমরা এই যে দানব আমাদের বুকে ওপর চেপে বসেছে তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটি নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে মধ্য দিয়ে আমরা যেন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি সেজন্য কাজ করি।
আজ শনিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি সকল পর্যায়ের নেতাদের প্রতি এই আহবান জানান। টঙ্গিতে সালাহ উদ্দিন সরকারের বাসভবন মিলনায়তনে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আগেই মুক্ত করতে হবে। তাছাড়া এখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হবে না। দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন দিয়েই শুরু করতে হবে আমাদেরকে গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের অতিদ্রুত এগুতে হবে।
বর্তমান অবস্থাকে ‘সংকটময়’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে আমাদেরকে করে দিয়ে যাবে না। আমাদেরকে বিএনপিকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যার প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন শহীদ জিয়াউর রহমান যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যার চেয়ারপারসন হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি গণতন্ত্রকে মুক্তি দিয়েছিলেন। আজকে আবার যখন ক্রাইসিস, রাজনৈতিক সংকট, আমাদের সব কিছু নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন আমাদেরকেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে, আমাদেরকেই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে।
গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন, গাজীপুর ফাইটার একটা জায়গা জেলা ও মহানগরে। আপনাদেরকে অনেক বেশি সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা জিয়াউর রহমানের দল করি, বেগম খালেদা জিয়ার দল করি। যখন সংগঠন নিজেরা তৈরি করতে যাই, তখন গ্রুপিং-গ্রুপিং। আমার লোক কে, আমার লোক কে- এটা খুঁজি। এটা খোঁজা যাবে না। আপনাকে জিয়াউর রহমানের লোক খুঁজতে হবে, বেগম খালেদা জিয়ার লোক খুঁজতে হবে। এটা যদি না করতে পারেন আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ভবিষ্যৎ থাকবে তখনই যখন আপনি সবাইকে নিয়ে এক সাথে রাজপথে নামতে পারবেন, একসাথে সোচ্চার হতে পারবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হচ্ছে ন্যায়সঙ্গত। এটা আমাদের ধর্মের মধ্যেও বলা আছে। আমাদের এক হতে হবে-এর কোনো বিকল্প নাই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা দলের মধ্যে নেতার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি করতে পেরেছি, আমরা কর্মীর সংখ্যা সেই হারে বৃদ্ধি করতে পারি নাই। সেজন্য আজকে সবাইকে কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। নেতা সামনে আছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। আর বাকিরা আমরা কর্মী- এই কথা যদি ভাবতে পারি তাহলে দেশনেত্রী মুক্তি পাবেন, তারেক রহমান দেশে ফেরতও আসবেন, জাতির নেতৃত্বও তিনি দেবেন। তার নেতৃত্ব অত্যন্ত অনিবার্য এই রাষ্ট্রের জন্য বিশেষ করে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনি সেøøাগান দিয়েছেন- যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ। সেই সেøাগান বুকে ধারণ করে আমরা নব্বইয়ের চেতনায় আরেকটি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ছাত্র-যুবকদের সংগঠিত করে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে নেমে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করব ইনশাল্লাহ। নব্বইয়ে যেমন বলেছিলাম, স্বৈরাচার এরশাদের পতন ছাড়া ঘরে ফিরবো না, আজকেও বলতে চাই, যখন আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন সেদিন থেকে আমার নেতার ওই সেøাগান বুকে ধারণ করে আবারো রাজপথে দাঁড়াব। যতক্ষণ হাসিনার পতন না হবে, যতক্ষণ এই সরকারের পদত্যাগ না হবে, যতক্ষণ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেবে ততক্ষণ রাজপথ থেকে আমরা সরে দাঁড়াব না।
গাজীপুর জেলা সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং নির্বাহী কমিটির ওমর ফারুক শাফিনের সঞ্চালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আবদুস সালাম আজাদ, সালাহ উদ্দিন সরকার, কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, সোহরাব উদ্দিন, মজিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির খান, মীর হালিমুজ্জামান ননি, খন্দকার আজিজুর রহমান পেয়ারা, হুমায়ুন কবীর মাস্টার, শওকত হোসেন সরকার, মাহবুব আলম শুক্কুর, ফিরোজ আহমেদ, শ্রীপুরের শাহজাহান ফকির, কাপাসিয়ার খলিলুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিমসহ জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।