করোনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের শত্রু - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ১০ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
করোনা এবং আওয়ামী লীগ দেশের শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগার ও জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বই মেলার এই অনুষ্ঠান হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ৬তলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগার রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এখন দুই শত্রু। একদিকে আওয়ামী লীগ শত্রু আরেক দিকে করোনা শত্রু। এই শত্রু, এই দুই দানব তছনছ করে দিচ্ছে আমাদের সব কিছু। সেজন্য আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু এটাকে আমাদের জয় করতে হবে তো। শোনেন, পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় বিজয়, বড় বড় বিপ্লব, বড় বড় অর্জন কিন্তু একটা স্লোগানে- ‘আমরা করব জয়’। এই স্লোগান দিয়েই আমাদেরকে জয় করতে হবে। নেতা-কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেন, ভাই শটকাট কোনো রাস্তা নেই। একটা যুদ্ধ যখন করতে হবে সেই যুদ্ধে আপনাকে পুরোপুরিভাবে ইকুইপ্ট হতে হবে। যুদ্ধ করতেই হবে। এরা আপনাদের এমনি এমনি ক্ষমতা দিয়ে দেবে না। এরা একেবারে ডিক্টেটর বনে গেছে, কর্তৃত্ববাদী বনে গেছে এবং জানে যে, নির্বাচন করে তারা কোনো দিন জিততে পারবে না। সুতরাং নির্বাচন নির্বাচন খেলা করবে, নির্বাচনের নাটক করবে, তামাশা করবে কিন্তু সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে ওরা নিজেদেরকে জয়ী করবে। যেমন ২০১৮ তে করেছে, যেমন ২০১৪ তে করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি ওদের কথার কী উত্তর দেবো, ওদের কথায় ঘোড়াও হাসে। আগের কথা বলছি-পুরনো ঢাকার ঘোড়ার গাড়ি আছে না। ট্রেন থেকে নেমেই আমরা ওইসব ঘোড়ার গাড়িতে হলে যাইতাম। ফুলবাড়ীয়া ট্রেন স্টেশন থেকে এসএম হলে ঘোড়া গাড়ির ভাড়ার ছিলো ৪ আনা। আমরা বলতাম দুই আনা- বারগেইন করতাম। গাড়ির চালক ঘোড়ার লাগামটা টান মারতো। আর ঘোড়াটা হু হু করে উঠতো, ঘোড়া একটা শব্দ করতো। তখন চালক বলতো, আপনার কথায় তো ঘোড়াও হাইসা উঠে। আসলে ব্যাপারটা এমন যে, ওবায়দুল কাদের সাহেবদের কথায় এখন ঘোড়াও হাসে। কি বলে না বলে ওরা জানে না। আর মিথ্যা বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় চলে গেছে ওই যে গোয়েবলসীয় প্রচারের মতো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গোয়েবলস ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানের নাৎসীবাদী ফ্যাসিস্ট হিটলারের প্রচারমন্ত্রী। আপনাদের হাসান মাহমুদদের মতো। অনর্গল মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন, অবলীলায় খুব শান্ত মেজাজে বলে কিন্তু। জোরে বলে না, রাগ করে বলে মনে হয় না, যেন ঠিকই বলছে। এটাকেই বলে যে, গোয়েবলসীয় প্রচার। মিথ্যা প্রচার করতে করতে ওরা জিয়াউর রহমানকে এখন মুক্তিযোদ্ধা দূরের কথা, স্বাধীনতার ঘোষক দূরের কথা, পাকিস্তানের চর ছিলো। এটাতে সবাই হাসে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে ওরা ইতিহাসকে এভাবে বিকৃত করছে। সেজন্য আমি সবাইকে বলব, প্রকৃত ও সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে বার বার বলতে হবে। আমরা সুর্বণ জয়ন্তী পালন করছি, অনেক অনুষ্ঠান করেছি। আরো করবো। সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আজকে জিয়াউর রহমানকে যত চেষ্টা করুক মুছে ফেলতে, মুছে ফেলা যাবে না কখনো। তিনি আমাদের রক্তে, মজ্জায় চলে গেছেন। তাঁর জন্য আমাদের কোনো সাইন লাগে না, সংবিধান লাগে না। আমাদের মানুষের মাথায়, মাথায়, মগজে, মগজে, হৃদয়ে হৃদয়ে, রক্ত কণিকায় চলে গেছে- জিয়াউর রহমান এদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন, জিয়াউর রহমান এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং বটমলেস বাসকেটটাকে তিনি ওপরে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব বললে ওদের (আওয়ামী লীগ) মেজাজ খারাপ হয়।
দলের নেতা-কর্মীদের জিয়াউর রহমানের জীবনকর্মের ওপর লেখা বইগুলো বেশি করে পড়ার পরামর্শ দেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আমাদের বেশি করে বই পড়তে হবে। জিয়াউর রহমানকে জানতে হলে তাঁর ওপর লেখা বই পড়তে হবে। আমাদের স্বাধীনতাকে জানতে হলে বই পড়তে হবে। ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান’, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’, ‘প্রতি নায়ক’, ‘কাগমারী সম্মেলন স্মারক গ্রস্থ’, ‘আমার পতাকা ফেলানীর লাশ হয়’, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘জনগণের মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান মওলানা ভাসানী’ ইত্যাদি গ্রস্থ পড়ার জন্য বলেন তিনি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাও পড়ার পরামর্শ দেন মহাসচিব।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মো. জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল। অনুষ্ঠানে জিয়া স্মৃতি পরিষদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।