সাধারণ মানুষের নয়, সরকারের মদদপুষ্টদের উন্নয়ন হচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৫ এএম, ৪ জুন,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৬ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
এখন সাধারণ মানুষের নয়, সরকারের মদদপুষ্টদের উন্নয়ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপনের এক ঘন্টা আগে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন। ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের অংশগ্রহণের দিবসটি স্মরণে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপন কমিটির উদ্যোগে ‘১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং একদলীয় শাসনের অবসান’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং এমএজি ওসমানী সম্মিলিত বিরোধী দল থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যে বলছে উন্নয়নের কথা। সেই উন্নয়ন কার? সেই উন্নয়ন শুধু যারা এই সরকারের মদদপুষ্ট, যারা সরকারের প্রশ্রয় পেয়েছে, যারা সরকারের আশ্রয়ে রয়েছে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কোনো স্থান নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আজকে আমি বলব, আসুন আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করি। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে, নির্ভয়ে আমাদেরকে কাজ করে বিজয় অর্জন করতে হবে। অবশ্যই আমরা সেখানে সফল হবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আজকে সরকার যে বড় বড় কথা বলে- উন্নয়ন। কোন উন্নয়ন, কাদের উন্নয়ন? এই উন্নয়ন শুধু তাদের যারা এদেশকে শাসন করছে, তাদের পকেট বোঝাই হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ একেবারে গরীব থেকে গরীব হচ্ছে। নতুন বাজেট আজকে দিতে যাচ্ছে। এই বাজেট নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আমরা যেটা দেখলাম, সেখানে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোনো জায়গা নেই। বিরোধী দলের ওপর সরকারের এক দশকের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে আমাদের এই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমাদের দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, এই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৫শর ওপরে নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন। আমাদের ইলিয়াস আলীসহ হাজারো নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। এখনো আমাদের দেশে একইভাবে একটা ভয়াবহ স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে চরমভাবে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের জাতিকে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে না আনা গেলে দেশের মুক্তি নেই। সেজন্য আসুন দলমত নির্বিশেষে সকল গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে এক হতে হবে। আমাদের সকলের এক হয়ে এই ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটাতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সরকার বিকৃত করে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকের যে পরিস্থিতিতে বিএনপির এই উপলব্ধি আমার ভালো লেগেছে যে, গণঅভ্যুত্থান ছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। সেই গণঅভ্যুত্থান কী রকম করে হবে? সেটা কী আরব বসন্ত আমাদের উদাহরণ, সেটা কী মিয়ানমার আমাদের উদাহরণ অথবা দিল্লিতে যে আন্দোলন ছয় মাস হয়েছে সেটা আমাদের উদাহারণ। মিয়ানমার সফল হয়নি, এখন পর্যন্ত দিল্লিতে সফল হয়নি। অতএব সমস্ত দিক বিবেচনা করে আমরা যখন বলব, গণতন্ত্র বিনির্মাণ করছি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করছি। আমি মনে করি সেই লড়াইটা কেবলমাত্র একটা ক্ষমতার পরিবর্তনের লড়াই না। সেটা পরিপূর্ণভাবে জীবনবোধ, মূলবোধ, সমাজ পরিচালনার যে নীতিমালা সব কিছু থাকতে হবে। সেটা মনে করে আজকের দিনে জিয়াউর রহমান সাহেবকে স্মরণ করে আমাদের সেই বিবেচনার দিকে যাওয়া উচিত।
গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জনগণের স্থাপন করার যে কয়টি পদ্ধতি আছে সবগুলো চুরমার করে দিয়েছে। এই যে ১২ বছরের অধিককাল সময়ে এই সরকার দেশে কোনো একটা ভোট সঠিকভাবে করতে দিচ্ছে না। তারা একটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা নির্বাচন করতে দেবে না, অংশগ্রহণও করতে দিচ্ছে না। সরকার পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে তামাশায় পরিণত করেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আসুন আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিকল্পধারা বাংলাদেশের একাংশের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী প্রমুখ।