‘প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৬ এএম, ২ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
প্রতিহিংসার কারণেই সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে এখনো অসুস্থ অবস্থায় আছেন। এই সরকার কত বড় প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বাইরে নিয়ে যাও। তারা (সরকার) বাইরে যেতে দিচ্ছে না। এটা হচ্ছে তাদের দুবর্লতা, তাদের রাজনীতির যে দেউলিয়াপনা এবং জনগণ থেকে যে বিচ্ছন্নতা তারই প্রমাণ। এই সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা দুর্নীতিপরায়ণ সরকারে পরিণত হয়েছে। এ সরকার জনগণের উপরে অত্যাচারী একটা সরকারে পরিণত হয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারে পরিণত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নানা দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পরে সবাই ভেবেছিল যে, বিএনপি শেষ হয়ে যাবে, বিএনপিকে আর দেখা যাবে না। কারণ আসল নেতাই চলে গেছেন। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি একজন গৃহবধূ ছিলেন তিনি পতাকাকে তুলে ধরেছেন। কিসের পতাকা? স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকা যেটাকে ধারণ করে এদেশের মানুষ বেঁচে আছে। তার যে মূলমন্ত্র, তার যে আত্মা বাংলাদেশের যে আত্মা সেটা হচ্ছে ওইটা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, সেই আত্মা হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের আকাক্সক্ষা, সেই আত্মা হচ্ছে গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা। দীর্ঘ ৯ বছর পতাকাকে তুলে ধরে স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছেন। এখন অবধি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমি তো মনে করি, এই দেশে জীবিত আছেন যেসব রাজনীতিবিদ তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহীয়সী নেত্রী হচ্ছেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর অবদান আমি মনে করি কারো চেয়ে খাটো নয়।
বিএনপিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। তিনি কারাগারে বলেই গণতন্ত্র এখন কারাগারে, গণতন্ত্র বন্দি হয়ে আছে। আমাদের অসংখ্য নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, গুম হয়ে গেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা, ৩৫ লাখের বিরুদ্ধে মামলা। তারপরও কিন্তু বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বিএনপি আছে, চলছে এবং অত্যন্ত সোচ্চার হয়েই আছে।
তিনি বলেন, আসুন আমরা সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ তাকে সামনে নিয়ে, তার সেই যুদ্ধ করার যে মানসিকতা তাকে সামনে নিয়ে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে আপসহীন মনোভাব গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। তাকে পুঁজি করে তাঁর নেতৃত্বে এবং ১৩ হাজার মাইল দূরে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, যাকে আমরা সবাই তারুণ্যের অহংকার বলি, যার নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি তাকে নিয়েই আমাদের হারিয়ে যাওয়া যে গণতন্ত্র তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবো। আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে পারবো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে পারবোÑ এই আহবান আমি জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কখনো পিছু ফিরে তাকাবেন না। আর কখনো এই কথা মনে করবেন না যে, আমরা পারবো না। আমরাই পারবো এবং অবশ্যই ইনশাল্লাহ আমরা জয়ী হবো। যে দানব আমাদের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে, যে দানব শুধুমাত্র লুন্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, সেই দানবকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সরকার আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন-কর্মের ওপর মরহুম সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর লেখা গ্রন্থ দুটি সব নেতাকর্মীকে পড়ার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসীন আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিথীকা বিনতে হোসাইনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক কিংবা অন্যান্য রাজনীতিবিদ চিকিৎসার যে সুযোগ পায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়েও সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে তাঁর মুক্তি ও সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। তিনি আরো বলেন, আপোস করে ক্ষমতায় যাওয়ার দল বিএনপি নয়। বিএনপি যদি ১/১১’র সরকারের সাথে আপোস করতো, তাহলে ২০০৮ সালেই ক্ষমতায় থাকতে পারতো। তারা সর্ব প্রথম বেগম খালেদা জিয়ার কাছেই আপোসের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনগণের স্বার্থ নিয়ে আপোস করেননি বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চায়নি। কিন্তু প্রহসন করে নির্বাচন ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৫ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা বিএনপির ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম ও নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. আনোয়ারুল হক স্ব-স্ব জেলায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভার্চুয়াল। নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়া অসাধারণ মানুষ ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষক, দেশের সর্বোত্তম মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে সবচেয়ে মর্যাদার আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার ছিলেন। যারা শহীদ হন, তাঁদের মৃত্যু নেই। তাঁরা অমর। জিয়াউর রহমান অমর। মানুষের আবেগের বিষয় তাদের আত্মপরিচয়। জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন। পরিচয় দিয়েছেন আমরা বাংলাদেশি। এসব কারণে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি গণতন্ত্র আইনের শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। যেটা ছিল যথার্থ গণতন্ত্র। তাঁর আমলে রাষ্ট্রপতি, সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। শহীদ জিয়ার খেতাব কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। যা অত্যান্ত গর্হিত এবং সরকারের ভ্রষ্টাচার নীতির অংশ। এটা করে সরকার সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করছে। জিয়াউর রহমান যদি বীর উত্তম না হন, তাহলে কে বীর উত্তম। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদান জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে শহীদ জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন করা সরকারের হীন মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া সম্পর্কে নেতাকর্মীদেরকে আরো বেশি করে জানতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা তাদের মিত্ররা জিয়াউর রহমানকে সমালোচনা করেন। করবেই, কারণ আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ, জিয়াউর রহমান ও বিএনপি সেখানে সফল। আওয়ামী লীগের একদলীয় বাকশালী শাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, দুর্ভিক্ষ, সন্ত্রাসের পরিবর্তে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিসহ উন্নয়ন-উৎপাদন-সমৃদ্ধি-সুখ-শান্তির পরিবেশ কায়েম করেছিলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, জিয়াউর রহমান একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অতি স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, দেশকে আগ্রাসী শক্তির কবল থেকে রক্ষা করেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করেছেন। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ জাতীয়তাবাদী। জাতীয়তাবাদের মৃত্যু হয়। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতেও তাই হয়েছে। কারণ তিনি কারো কাছে মাথা নত করেন নাই।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশে আজকে যা কিছু সুন্দর, শুভ- তার সূচনা হয়েছিল শহীদ জিয়ার হাত ধরে। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কিংবা বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে কেউ তাঁকে মুছে ফেলতে পারবেন না।