শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৮ পিএম, ৩০ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি, দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই শোকাবহ দিন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে’র এই কালো রাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেশি বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।
জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁর অনবদ্য অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে সামিল হয়। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে এদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন না। জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দুঃশাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। একের পর এক দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র বীভৎস অরাজকতা নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অবস্থা থেকে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। আধুনিক ও স্বনির্ভর দেশ গঠনের পদক্ষেপ নেন। বর্তমান সরকার তাঁর নাম পাঠ্যপুস্তকসহ সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলেছে। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর নাম কোনো দিন মুছে ফেলা যাবে না। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভাসহ ১৫ দিনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন। আজ প্রাণপ্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। এ উপলক্ষে শেরে বাংলানগরের জিয়া উদ্যানে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত, কোনআন খানি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা, কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অংগ সহযোগী সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সংগে গাঁথা। আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহা বিপ্লব হেতু... আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রন্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রন্তিকালে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীতে ফিরে যাওয়া, ক্রান্তিকালে দেশের দায়িত্বগ্রহণ, সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তার দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। একজন সাধারণ মেজর হয়েও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজো দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন।
মহান এই দেশদরদী নেতা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর করাচি শহরে চলে যাওয়ায় সেখানেই তাঁর লেখাপড়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও ১টি বিশেষ উপহার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার পাকবাহিনী মারণাস্ত্র নিয়ে হঠাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের করে নিয়ে যায় পাকিস্তান বাহিনী। হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এ রাতেই ষোলশহরে সেনাবাহিনীর ৮ম ব্যাটালিয়নের সব বাংলাভাষী অফিসার ও জওয়ানকে ডেকে একত্র করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার এই আহবানে গোটা অষ্টম ব্যাটালিয়ন ব্যাপক সাড়া দিয়ে সৈনিক ও অফিসাররা উল্লসিত হয়ে ওঠে। পাকবাহিনীর আক্রমণে নিরস্ত্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে ২৬ মার্চ মেজর জিয়া চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি...বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’Ñতাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে।
জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন। বীরত্বের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর আবার ফিরে যান ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। সে সময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই তলাবিহীন ঝুড়ির বদনামমুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁর অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তাঁর সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথ-প্রদর্শক। তিনি বাংলাদেশকে অধিকতর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে দেশের সম্ভাবনার প্রতিটি দিককে উন্মোচনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎগুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়ার ১৯-দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি, দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ও তাঁর অবিনাশী আদর্শ এদেশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষা এবং উৎপাদন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার।
জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁর অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে সামিল হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দুঃশাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। একের পর এক দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র বীভৎস অরাজকতা নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অবস্থা থেকে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। আধুনিক ও স্বনির্ভর দেশ গঠনের পদক্ষেপ নেন।
এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে যতই চেষ্টা করুক না কেন, তিনি বিস্মৃত হন নাই। বরং দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে আছেন, থাকবেন। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্মমতা চারদিকে বিদ্যমান। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সেজন্য গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। এখনও তিনি কার্যত বন্দি। অসুস্থ হয়ে তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। তাঁর মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চলছে অজ্ঞাত দানব করোনা মহামারির তান্ডব। আমাদের সকলকে এ সম্পর্কে সচেতন থেকে করোনার হাত থেকে বাঁচতে আজ শহীদ জিয়ার শাহাদতবার্ষিকীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট পানাহ চাই।
রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক, নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তাঁর অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করতে দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি :
২৯ মে : গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর কর্মময় জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ। উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত ছিলেন সারাদেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
৩০ মে : আজ ৩০ মে ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। ঐদিন সকাল ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন। বেলা ১২টার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবে।
ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সগযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অসহায়-দুঃস্থ মানুষের খাদ্য দ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
৩১ মে : ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্য দ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক দল (জাসাস)-এর উদ্যোগে শহীদ জিয়ার জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
০১ জুন : জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা, সকাল : ১১ টা।
০২ জুন : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা, সময় : বেলা ২:৩০টা।
০৩ জুন : জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা, সময় : সকাল ১১টা
০৪ জুন : জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল, সময় : বাদ আসর গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়।
০৫ জুন : জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা।
০৬ জুন : জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভা, সময় : সকাল ১০টা।
০৭ জুন : জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর উদ্যোগে আলোচনা সভা, সয়ম : সকাল ১০টা।
০৮ জুন : জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা।
০৯ জুন : জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার ওপর প্রকাশিত বই প্রদর্শনী।
০১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত : দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরীতে সংশ্লিষ্ট ইউনিট বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরাসরি অথবা ভার্চুয়ালী জেলা ও মহানগরের এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
এছাড়াও অনুরূপভাবে সারাদেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা ও পৌরসহ সকল ইউনিট কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ মে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এছাড়া স্ব স্ব ইউনিটসমূহ সুবিধামতো সময়ানুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে ৩০ মে দোয়া মাহফিল এবং দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী/বস্ত্র বিতরণ করবে।
বিএনপির অঙ্গসংগঠনসমূহ জেলা ও মহানগরী পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে। শহীদ জিয়ার ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে পৃথক পৃথক পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে এবং ৩০ মে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।