রোজিনার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের মুখোমুখি হতে হবে - পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০০ এএম, ২১ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেফতারের ঘটনা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টির মুখোমুখি হতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষন্ন হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল মোমেন বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। কারণ শেখ হাসিনার সরকার সংবাদবান্ধব সরকার। আমরা কখনোই আপনাদের নিষেধ করি না। আমাদের লুকানোর কিছু নেই। যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি খুব দুঃখজনক। সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজ করা উচিত ছিল। গুটিকয় লোকের জন্য এই বদনামটা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসেবে আমাদের এটি ফেস করতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করবে। আমরা এ ধরনের ঘটনা চাই না। যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয়, সে জন্য বিস্তারিত কথা বলতে চাই না এটি আমার বিষয় না। কিন্তু এটি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা। আমি আশা করব, এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। রোজিনা ইসলামের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যথার্থ মন্তব্য করেছেন। আমার সহকর্মীরা বলেছেন, রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন। তারা বলেছেন এটি দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সংবাদমাধ্যম দেশের বিরাট কাজ করছে। তাদের কারণে আমরা বালিশ-কান্ড শুনেছি। আপনাদের কারণে আমরা লাখ টাকার সুপারিগাছের কথা শুনেছি। আপনাদের কারণে সেই সাহেদ করিমের তথ্য পেয়েছি। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব করে আপনারা সরকারকে খুব সাহায্য করছেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছিলাম। ভারত কখনোই বলেনি যে, টিকা দেবে না। তবে তারা দিতে পারছে না। আমি এর আগে চিঠিও দিয়েছি। আমি ওই দিন বলেছি যে, আমরা ঝামেলায় পড়েছি। আমাদের ১৫ লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য আটকে গেছে। টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলে প্রয়োজন হলে আমাদের উপহার হিসেবে দিন। কারণ এর আগে আপনারা আমাদের উপহার দিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জয়শঙ্কর বললেন, ‘আমি আপনাদের অবস্থা জানি। আপনিও আমাদের অবস্থা জানেন। দিনে চার হাজারের বেশি লোক মারা যাচ্ছে। চার লাখের বেশি লোক সংক্রমিত হচ্ছে। সেরামের উৎপাদন করার ক্ষমতা ছিল ২০ কোটি। কিন্তু ১০ কোটিও উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের অবস্থা শোচনীয়।’ আমি বললাম, আমাদের অবস্থা আরও খারাপ। কারণ, ১৫ লাখ লোক টিকা না পেলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। যেকোনোভাবে টিকা সরবরাহ করার কথা বলেছি।
আব্দুল মোমেন বলেন, জয়শঙ্কর আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, অন্য জায়গা থেকে আমরা টিকা আনার চেষ্টা করছি কি না। আমি বললাম, আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি। কোভ্যাক্সকে আপনারা দিচ্ছেন না বলে সেখান থেকে পাচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের প্রভাব রয়েছে। আমি জয়শঙ্করকে অনুরোধ করেছি তাদেরকে আমাদের টিকা দেয়ার জন্য বলতে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে এসব টিকা আসার কথা ছিল। তবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দুই চালানে মোট ৭০ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত মার্চে টিকা রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত। এতে বাংলাদেশ টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ইতিমধ্যে যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।