

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করায় আমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে : রোজিনা ইসলাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ১৯ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৯ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৩

চুরি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে করা মামলায় গ্রেফতার দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর আদালতে তোলার সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে কথা বলতে বাধা দেন। তারা বলেন, ‘কোনো কথা বলা যাবে না’। কেন কথা বলা যাবে না জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘নিষেধ আছে’। এ সময় সাংবাদিকদের ধমকও দেন তারা। রিমান্ড শুনানিতে আদালতে কোনও সাংবাদিককে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা রোজিনাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার কিছু বলার থাকলে বলেন?’ তখন রোজিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে তারা অনেক অন্যায় করেছে। আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করার কারণে তারা আমার সঙ্গে এমন অনেক করেছে।’
সাংবাদিক রোজিনার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবি : প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে সাংবাদিক সমাজ।
আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান। এ সময় তারা ‘দুনিয়ার সাংবাদিক, এক হও লড়াই কর’; ‘রোজিনা আপা কারাগারে কেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জবাব চাই’- এমন স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে সাংবাদিকরা বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বিষয়ে সব সম্পাদকরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। তাই আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের পক্ষে এবং সহকর্মীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।
তারা আরও বলেন, রোজিনা ইসলামকে সবাই চেনেন, তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। তিনি দীর্ঘদিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে আসছিলেন। সেই আক্রোশ গতকাল মিটিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একজন সাংবাদিকের টুঁটি ধরার সাহস তারা কোথায় পায়। এতে বোঝা যায় এটি পূর্বের আক্রোশ ছিল।
সাংবাদিকরা বলেন, যেসব দুর্নীতির রিপোর্ট বন্ধ করার জন্য গতকালকের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, সেটি কখনই বন্ধ হবে না। দরকার হলে আমরা সবাই অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হব। আমরা অনুসন্ধান করে বের করব সব দুর্নীতি। সরকারের সব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখোশ উন্মোচন করব। সরকারি আমলাদের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনারা চোর-বাটপার সেটা তুলে ধরার সাহস আমাদের আরও বাড়বে। কালকের ঘটনায় মনে করবেন না যে, আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। চোর-ডাকাতদের সাংবাদিকরা একটা সময় উন্মোচন করবেই। সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে সমাবেশে বলা হয়, একজন নারীকর্মী কীভাবে অন্য একজন নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা করতে পারে, এর জবাব সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে। না হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। এ ঘটনার জন্য সরকারকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সাধারণ জনগণ এবং সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
সাংবাদিকরা রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি আমার বোনকে সচিবালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হেনস্তা করেছে তার বিচারের দাবিতে। আমরা তার মুক্তি দাবি করছি এবং তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। রোজিনা ইসলামকে মুক্তি না দিলে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন করা হবে। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সহ-সভাপতি ওসমান গণি, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, এমএ কুদ্দুস, ডিআরইউর সিনিয়র সদস্য নজরুল ইসলাম মিঠু, কার্যকরী নির্বাহী সদস্য রহমান আজিজ, রোমানা জামান, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ক্র্যাবের সভাপতি মিজান মালিক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফ রানা, যুগান্তরের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার মোজ্জাম্মেল হক চঞ্চল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর সংগ্রাম সম্পাদক জেবুন্নেছা খান প্রমুখ।
সাংবাদিক রোজিনাকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি এইচআরডব্লিউর : অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মামলায় গ্রেফতার ও কারান্তরীণ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী।
তিনি বলেন, এ ধরনের গ্রেফতার বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত মত প্রকাশের জন্য ভীতিকর ও উদ্বেগের। মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, সরকার বেশ কিছুদিন ধরে সাংবাদিকদের হয়রানি করছে, আর সেল্ফ সেন্সরে বাধ্য করছে যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। রোজিনা ইসলাম একজন অত্যন্ত সম্মানিত সাংবাদিক যিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছিলেন।
মীনাক্ষী বলেন, রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে কয়েক ঘন্টা অবৈধভাবে আটকে রেখে নির্যাতন ও পরে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ প্রমাণ করে সরকার দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে শুধু সাংবাদিকদেরই শাস্তি দিতে চায়। সরকারের প্রতি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, রোজিনা বলেছেন তিনি স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছিলেন। এ সংক্রান্ত তার কয়েকটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ভাবতে অবাক লাগে যে, সরকার এই কোভিড মহামারির সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে সেই সাংবাদিকের ওপর চড়াও হচ্ছে যিনি জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন। মীনাক্ষী গাঙ্গুলী কোভিডের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য কারাগারে বন্দির সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়ে জাতিসংঘের গাইডলাইনের কথাও সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, শান্তিপূর্ণ সমালোচককে গ্রেফতার বা হয়রানি করা কোনো সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটা সবসময়ই ভুল সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যখন তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। রোজিনা জনজীবনের জন্য ঝুঁকি হতে পারে এমন কিছুই উপস্থাপন করেননি, সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যই তাকে গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। সমালোচকদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ করে মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার যেন নিজেদের কোনো সমালোচনাই সহ্য করতে পারছে না। তিনি বলেন, সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থানে না গিয়ে সরকারের উচিত মানুষের উদ্বেগের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া।
সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তার প্রতিবাদ ১১ বিশিষ্ট নাগরিকের : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য সংগ্রহকালে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে লাঞ্ছনা এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য চুরির অভিযোগ আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
তারা বলেন, করোনার দুর্যোগকালে সঙ্কট মোকাবিলায় সরকার ও জনগণের যে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস পরিচালিত হচ্ছে তা সর্বতোভাবে জোরদার করার লক্ষ্যে আমরা সবাই সমবেত রয়েছি। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যকর্মীরা গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে সরকারও বিভিন্ন সময় বিব্রত হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে রোজিনা ইসলামসহ অন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সহযোগিতার মাধ্যমে সরকার উপকৃত হয়েছেন।
তারা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আক্রান্ত হওয়ার কার্যকারণ আরও তলিয়ে দেখা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের কর্মকান্ড তদন্ত করার দাবি আমরা জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার মুক্তিলাভে সরকার বিবেচকের ভূমিকা পালন করবেন।
বিৃবতিদাতারা আরও বলেন, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার এবং দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা, সরকারের ঘোষিত এই দুই নীতির সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিবৃতিদাতারা হলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক-সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক অনুপম সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সারোয়ার আলী, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যনির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও আবদুস সেলিম।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামকে আদালতে নেয়া হলে আদালত পুলিশের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তার ঘটনায় শাহবাগ থানার সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ : প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা এবং পরে সেখান থেকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তরের ঘটনায় প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সোমবার রাতে শাহবাগ থানার ভেতরে অবস্থান করে সাংবাদিকেরা বিক্ষোভ করেন। সে সময় তারা রোজিনা ইসলামকে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। এ ঘটনায় তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবকে ধিক্কার জানান এবং মন্ত্রী-সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় সাংবাদিকেরা উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি ধারাবাহিক আক্রোশেরই প্রতিফলন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান বলেন, কোনো নিরপরাধ সাংবাদিক যেন কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
রোজিনার জামিন না দেয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কর্মসূচি বয়কট : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিএসআরএফএর সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জরুরি বৈঠক শেষে সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস জানিয়েছেন, রোজিনা ইসলামের জামিন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের ব্রিফিং বর্জন করা হবে। সেই সঙ্গে রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও লাঞ্ছিত করায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বুধবার (১৯ মে) বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে।
তপন বিশ্বাস আরও জানিয়েছেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হেনস্তার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করবে বিএসআরএফ, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য পাঠানো হবে। রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে তথ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হবে। পরে সাংবাদিকদের মূল সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নেয়া হবে বলেও জানান বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং বয়কট করেছেন সাংবাদিকরা : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রেস ব্রিফিং বয়কট করেছেন সাংবাদিকরা। দৈনিক প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সরকারি অফিস থেকে তথ্য চুরির অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও তার বিরুদ্ধে মামলার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। তবে সচিবালয়ভিত্তিক বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে সাংবাদিকরা ব্রিফিং বয়কট করেন। বিএসআরএফের সভাপতি তপন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ মাসুদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তারা জানান, ব্রিফিং বয়কটের পর গণমাধ্যমকর্মীরা সচিবালয়ের ভেতরে গণমাধ্যমকেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সেখানে সাংবাদিকদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বিএসআরএফের জরুরি সভা চলছে। সেখান থেকে আগামী দিনে করণীয় নির্ধারণ হবে বলে জানান তারা।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ মে) পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। পরে খবর পাওয়া যায় তাকে সেখানে কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আটকে রেখেছেন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। এক পর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথি সরানোর অভিযোগ এনে পুলিশ ডাকা হয়েছে। পরে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাখা হয়।
পুলিশ জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় আনা হয়েছে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি, এতে তিনি মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে থাকতে পারেন। এ ঘটনায় পুলিশ রোজিনা ইসলামের নামে তথ্য চুরির অভিযোগে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে তোলা হয়।