করোনার তান্ডবে রাজধানীতে ভিক্ষুক বেড়েছে কয়েক গুণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৬ এএম, ৭ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাস্তায় কিংবা শপিংমলের সামনে দাঁড়ালেই পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। রিকশা বা গাড়ি থেকে নামলেই একঝাঁক ভিক্ষুক এসে ঘিরে ধরছেন ওই ব্যক্তিকে। আকুল হয়ে চাইতে থাকেন টাকা। না দেয়া পর্যন্ত ছাড়তেও চায় না তারা। জনসমাগম আছে এমন প্রায় প্রতিটি স্থানেই দেখা যায় ভিক্ষুকের আধিক্য। অনেকের কাছে রীতিমতো উৎপাত হয়ে দাঁড়িয়েছে এরা। ভিক্ষা চাইতে গিয়ে অনেকেই পিছু ছাড়তে নারাজ। শিশুরাও এ দলে সামিল। কেনাকাটা করে ব্যাগ হাতে বের হলে সেই ব্যাগ ধরেই চলতে থাকে টানাটানি। বাস, রেল স্টেশনে, লঞ্চ টার্মিনাল ও চলন্ত বাসেও আগের চেয়ে বলতে গেলে দ্বিগুণ বেড়েছে ভিক্ষুক। মৌসুমী ভিক্ষুকদের পাশাপাশি যোগ হয়েছে নব্য ভিক্ষুকরাও। সমাজকল্যাণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, রাজধানীতে নিয়মিত ভিক্ষুক ছিল ৫০ হাজার। করোনার কারণে কমপক্ষে আড়াই লাখ হয়েছে। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিনে দেখা গেছে, শপিং মলগুলোর সামনে ভিক্ষা করার জন্য কেউ জায়গা দখল করে বসে আছে, কেউ ঘুরে ঘুরে লোকজনের পথরোধ করে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কাউকে সাহায্য করতে দেখলেই ওই দাতাকে ছেঁকে ধরছেন বাকিরা। আবার কেউ সন্দেহ করছেন, করোনার অজুহাতে ভিক্ষাবৃত্তির নতুন সিন্ডিকেট দাঁড়ায়নি তো? রাস্তার আশপাশে কাউকে দেখা যায় চুপচাপ বসে থাকতে। তাদের সরাসরি চাইতেও দেখা যায় না। কেউ করছে নানান মানবিক আবেদন। দেখেই বোঝা যায় তারা এক সময় কাজ করেই খেতেন। এখন করোনার কারণে কাজ হারিয়ে হাত পাতছেন বাধ্য হয়ে। রাজধানীর উত্তরা রাজলক্ষী কমপ্লেক্সের সামনে দেখা গেছে, শপিংমলে ঢোকার প্রতিটি পয়েন্টে সাহায্য প্রত্যাশীদের অবস্থান। যারাই মার্কেটে ঢুকছে বা বের হচ্ছে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর থেকে আসা শিহাব হোসেন বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। তারপরও চেহারা দেখে যতোটা সম্ভব সাহায্য করছি। তবে অনেকেই একেবারে গায়ের ওপর হামলে পড়ছে, এটা খুবই অস্বস্তিকর। এদের এড়িয়ে চলাই মঙ্গল। ১২ নম্বর সেক্টর থেকে আসা মরিয়ম বলেন, ভিক্ষার জন্য আমার পিছুই ছাড়ছিল না। মনে হচ্ছিল উনি আমার পাওনাদার। বাধ্য হয়ে ১০ টাকা দিয়ে রক্ষা পাই। অনেক দিন হলো মলে ঘুরছি, কিন্তু ভিক্ষুকদের দেখভালের জন্য সরকারি কোনও উদ্যোগ চোখে পড়লো না। রাজলক্ষ্মী শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ভিক্ষা করছিলেন আইয়ুব আলী। করোনার কারণে গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন। আগে তিনি শুনেছিলেন ঈদের আগে ভিক্ষায় অনেক ইনকাম হয়। এ কারণে কষ্ট করে রাজধানীতে এসেছেন। প্রতিদিন শপিং মলগুলোর সামনে দাঁড়াচ্ছেন। ইনকাম মোটামুটি ভালোই হচ্ছে তার। রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি শপিং মলের সামনে দেখা গেছে সুশৃঙ্খল ভিক্ষুকদের সারি। বেশিরভাগই লকডাউনে কাজ হারিয়ছেন। করোনার কারণে গ্রামেও কাজ নেই। অর্থসঙ্কটে না খেয়ে আছেন তারা। ঈদ বড় কথা নয়। আপাতত কিছু আয় হলেই খুশি।
এদিকে মোড়গুলোতে সিগনাল পড়ামাত্রই দৌড়ে আসছে আরেক দল ভিক্ষুক। তাদের লক্ষ্য প্রাইভেটকার, সিএনজি কিংবা রিকশার আরোহী। বিজয় সরণির মোড়ে সরেজমিনে দেখা গেছে এ চিত্র। পথচারীদের প্রায় সবাই বললেন, আগের চেয়ে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে এদের সংখ্যা। অবশ্য রমজান মাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভিক্ষুক জড়ো হয় ঢাকার নামিদামি মসজিদগুলোর সামনে। আল নূর মসজিদের সামনে ভিক্ষা করা আমেনা বেগম বলেন, রমজানে বেশি ইনকাম হবে বলে ঢাকা এসেছি। সারাদিন প্রায় ৮০০ টাকার মতো হয়।
ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, গত এক বছর ধরে করোনার তান্ডব চলছে। এই সংকটকে কেন্দ্র করে দরিদ্র মানুষ বেড়েছে। গ্রামে কাজ নেই, ভিক্ষা দেয়ার লোকও নেই। এ কারণেই তারা রাজধানীমুখী। ভিক্ষাবৃত্তির সহজ কাজ। লাগে না কোনও দক্ষতা বা যোগ্যতা। সরকার কিংবা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো এদেরকে কোনও কাজে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে ভিক্ষাবৃত্তি কমবে বলে মনে করি। এদের মধ্যে অনেকেরই কর্মদক্ষতা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।