‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতা’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ৪ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:২৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে এই আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী।
আজ সোমবার বিকেলে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে নাগরিক সংগঠনের উদ্যোগে ‘কোভিড অতিমারী : সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শিরোনামে ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, বাউলশিল্পী রীতা দেওয়ান, অনুসন্ধানী সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সাংবাদিক জায়মা ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, অধিকার কর্মী ও আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান, রেজাউর রহমান লেনিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধিকার কর্মী অধ্যাপক সি আর আবরারসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে বলা হয়, এই বছরের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘জনসাধারণের মঙ্গলের জন্য তথ্য।’ কিন্তু করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৮০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে, ১০ জনের বেশি সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে এবং কমপক্ষে ৫০ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বিভিন্ন মামলায়।
এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ জন সাংবাদিক, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি এবং সাময়িকভাবে গুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৫ জন।
এতে বলা হয়, চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের দমন রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার শর্ত তৈরি করে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে শুধু কথা বলা বা লেখার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, অন্যান্য যে কোনো উপায়ে চিন্তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করাও এর অন্তর্গত।
অনুষ্ঠানে আলোকচিত্র সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, এখন বাংলাদেশে সাংবাদিকতা রয়েছে, তবে তা নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতার কারণ মূলত নিপীড়নমূলক আইনগুলো, যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮। এই আইনসমূহ বাতিল না হলে সাংবাদিকরা মুক্ত হতে পারবেন না। তাই বাতিল করা জরুরি।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘আমার সাংবাদিকতার জন্য গুমের শিকার হয়েছি এবং ফিরে এসে ছয়জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখতে পেলাম আমার নামে দুটি মামলা হয়েছে, একটি মানহানির এবং দুটি মামলা নিয়ে বেশ অগ্রগতি হচ্ছে, কিন্তু আমার করা অপহরণ মামলা রহস্যজনকভাবে ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সাংবাদিকতার পেশা বন্ধ করার জন্য কাজ করছে একটি পক্ষ।’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম বলেন, দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম খালের কিনারায়। সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা যেমন আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষক, এমনকি চিকিৎসা পেশাজীবীদের প্রচার মাধ্যমে কথা বলার মতপ্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে নানা প্রশাসনিক আইনি প্রক্রিয়া।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘শিক্ষকরা কি তাদের স্বাধীনতার কথা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কথা বলছেন? তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছেন?’
অনুষ্ঠান শেষে সরকারের কাছে তিন দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ সকল চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশ হরণকারী আইন এবং মানবাধিকার পরিপন্থী আইনি এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড রদ করতে হবে, প্রচার মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে এবং মহামারির সময়ে যেসব সাংবাদিকের শারীরিক ও মানসিক হয়রানি, নির্যাতন করা হয়েছে, নিহত হয়েছেন ও মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তাদের সকলকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।