নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধর : ইরফান সেলিমের জামিন আপিলেও বহাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৫ এএম, ২৬ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় করা মামলায় সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর ইরফান সেলিমকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ইরফান সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ রবিবার হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালতের দেয়া আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে ইরফান সেলিমের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে গতকাল ইরফান সেলিমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার ও সাঈদ আহমেদ রাজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য গতকাল রবিবার দিন ধার্য করেন। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। আর ইরফান সেলিমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। এর আগে গত ১৮ মার্চ ইরফান সেলিমকে জামিন দেন হাইকোর্ট। ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৮ মার্চ ৪ সপ্তাহের জন্য তার জামিন স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্যও পাঠান। পরে জামিনের ওপর দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন ইরফান সেলিম। সেটিও শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান চেম্বার আদালত। এর আগে গত ২৮ মার্চ ইরফান সেলিমকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিমকে মারধরের ঘটনায় গত ১৮ মার্চ ওই মামলায় ইরফান সেলিমের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। এ সময় পরে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসবে বলে জানান আদালত। আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। ইরফানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ। তারও আগে ধানমন্ডি থানায় করা ওই মামলায় জামিন চেয়ে ইরফানের করা আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে রুল দেন। রুলের শুনানি নিয়ে গত ১৮ মার্চ ইরফানের জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ইরফান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন ২৬ অক্টোবর সকালে বাদী হয়ে নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানায় মামলা করেন। ইরফানসহ চারজন ও অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। অন্য মামলায় গত বছরের ২৭ অক্টোবর ইরফানকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ২৮ অক্টোবর ধানমন্ডি থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ধানমন্ডি থানার মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বিফল হন ইফরান সেলিম। পরে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় ইরফানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ধানমন্ডি থানায় হওয়া মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২৫ অক্টোবর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহম্মেদ খান। সে সময় সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত একটি গাড়ি তার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। ওই গাড়িতে ছিলেন হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান ও তার লোকজন। ওয়াসিফ নিজের পরিচয় দিয়ে গাড়িটিকে থামতে ইশারা করেন। কথা বলতে চান। তখন তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন ইরফান সেলিম ও তার লোকজন।
সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ ও অসদাচরণের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত বছরের ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম আলী মিয়া জানান, এই মামলায় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম (৩৭), তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ (৩৫), হাজি সেলিমের মদীনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু (৪৫), গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ (৩০) অজ্ঞাতপরিচয় দু-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।