আমি হট স্যুপের মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলাম - স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৭ এএম, ১৮ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩১ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২০১৪ সালে আমি যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন একটা হট স্যুপের মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছি। চতুর্দিক দিয়ে একটা গরম পরিস্থিতির মধ্যে আমি পড়েছিলাম। একদিকে বিএনপি ও তার সহযোগীদের অগ্নিসন্ত্রাস ও রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা চলছিল এবং ধ্বংসের রাজনীতি হাতে নিয়েছিল তারা। হঠাৎ করে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে জনগণকে নিরাপত্তা প্রদান, হাইওয়েগুলো চালু রেখে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর শক্ত ভূমিকার জন্য আমরা সেই জায়গা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আজকের সম্ভাবনার বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটাতে পেরেছি আমরা। আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান। সেই স্লোগান এই দেশে আর শোনা যাবে না ইনশাআল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে গণমাধ্যমে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তখন (২০১৪ সালে) আমরা পরিবহন নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করেছি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অগ্নিসন্ত্রাস মানুষ ঘৃণার চোখে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেটাও একটা বড় কারণ ছিল আমাদের সফলতার। আমরা সেই জায়গার উত্তরণ ঘটিয়ে আজকে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশে চলে আসছে। যারা জ্বালাও পোড়াও কিংবা বাংলাদেশকে একটা জঙ্গির দেশ বানাতে চেয়েছিল, তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা।
তিনি বলেন, এই অগ্নিসন্ত্রাসের পরেই আমরা জঙ্গিদের উত্থান দেখেছিলাম। শুধু জঙ্গি উত্থান বা ধর্মভিত্তিক জঙ্গির উত্থান দেখেছিলাম। এরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে টার্গেট করেছিল। আমরা সেই জায়গা থেকেও উত্তরণ ঘটিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ধর্মীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সমস্ত ধর্মের নেতাদের একত্র করতে পেরেছিলাম। আমরা বিভাগে বিভাগে, জেলায় জেলায় তাদের নিয়ে সভা করে অন্য ধর্মের লোকদের মনোবল বাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। যার জন্য এই জঙ্গি দমনেও আমরা একটা সফলতার মুখ দেখেছিলাম। আমরা জঙ্গিদের কার্যক্রম শতভাগ বন্ধ করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এখন জঙ্গিদের তৎপরতা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জঙ্গিদের উত্থানে সারা বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে যাচ্ছিল, তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় সেটা সফলভাবে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে বিদেশিরা কী ভাবছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বিদেশিরা তো আমাদের এখন মডেল মনে করে। বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সপ্তম বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। ফেরার সময় আমরা যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই, তখন তিনি আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। টেরোরিস্ট, জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আমাদের সফলতা এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আমাদের নারীদের ক্ষমতায়ন, আইন শৃঙ্খলায় যে আমরা একটা সুন্দর পরিস্থিতি আনতে পেরেছি, ইকোনমির দিকে আমরা বুমিং রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করেছি, এসব বিষয় নিয়েই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের বলেছেন, তোমরা বিদেশি স্কলারদের ইনভাইট করো। তোমরা যে কাজটি করতে সক্ষম হয়েছো, কীভাবে হয়েছো, সেটা তাদের কাছে তুলে ধর। এছাড়াও যেখানেই আমরা গিয়েছি, সবাই এই প্রশংসাটাই করেছে যে, আপনারা জঙ্গি দমন ও আইনশৃঙ্খলায় একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি আনা, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায়, যোগ্যতায়, দক্ষতায় যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সম্ভাবনার দেশ হয়েছি, বটমলেস বাস্কেট থেকে যে সম্ভাবনার বাংলাদেশ হয়েছে সেটার প্রশংসা করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের একটি সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সাসটেইনেবল সিকিউরিটি ও পিস নিয়ে কথা হয়েছে। আমি আমার ভাষণে বলে আসছিলাম, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ধরে রাখতে হলে সাসটেইনেবল পিস ধরে রাখা দরকার। সিকিউরিটি সিস্টেমের দরকার। সেই সিস্টেমটা আমরা বাংলাদেশে করতে সক্ষম হয়েছি বলেই আজকে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আজকে আমাদের শিল্প বিপ্লব হচ্ছে। আজকে আমাদের সবদিকে একের পর এক বিপ্লব হচ্ছে। সফলতা বাড়ছে। কারণটা হচ্ছে আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পরিবেশটা স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি। এক সময় বাংলাদেশে স্লোগান শোনা যেত- আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান। এখন সেই আফগান তালেবানদের সঙ্গে আমেরিকার চুক্তিতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনও প্রভাব পড়বে কিনা? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন, আমেরিকানরা তাদের আদর্শ ও দর্শনে কাজ করে। সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরাও একটা আদর্শ নিয়ে কাজ করি। আমরা সবসময় টেররিস্ট, ফান্ডামেন্টালিস্ট এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে চলি। আমরা মনে করি আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমরা সবাই মিলেমিশে বাংলাদেশ। এটাই আমাদের মূল বক্তব্য। যে স্বপ্ন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু দেখতেন। সেটাই বাস্তবায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান। সেই স্লোগান এই দেশে আর শোনা যাবে না ইনশাআল্লাহ।