শেখ হাসিনা সরকারে দেশের কৃষক ‘ধ্বংসের শেষ প্রান্তে’ : দুদু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৫ এএম, ১১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
টানা ২২ বছর পর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে আগামী শুক্রবার (১২ মার্চ) জাতীয় সম্মেলন করবে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। আগামী শুক্রবার (১২ মার্চ) গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিলো ১৯৯৮ সালের ১৬ মে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিউশন মিলনায়তনে।
আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু জাতীয় সম্মেলনের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১২ মার্চ সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে এই চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে। সংগঠনের কাউন্সিল অধিবেশন হবে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। কাউন্সিলে স্কাইপে উপস্থিত থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলনে মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা ৫৪৮ জন। এর মধ্যে ৭৯ সাংগঠনিক জেলা কমিটির প্রতি জেলা থেকে ৫ জন করে মোট ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির ১৫৩ জন সদস্য কাউন্সিলর হিসেবে থাকবে।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশের কৃষিখাতে যুগান্তকারী কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বিদেশে খাদ্য রফতানি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সালে শাসন আমলে বৈপ্লবিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশের কৃষি ব্যবস্থা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যায়। জননেতা তারেক রহমান বাংলাদেশকে কৃষি শিল্পের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। বলা যায়, বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকের জন্য যা কিছু কল্যাণকর তার সবই করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাদের অনুসরণ করে চলেছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতা জননেতা তারেক রহমান। ঐতিহাসিক তত্ত¡াবাধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদে পাস করে। বর্তমান ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার ও তাদের দোসররা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। ৩ বারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক ভিত্তিহীন মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেই চলেছে। বাংলাদেশের কৃষক সমাজ বর্তমান অবৈধ সরকারের এই অপপ্রচার ও মামলাবাজি চরিত্রের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। অবিলম্বে অপপ্রাচার বন্ধ এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় দেয়া সাজা বাতিল ও মুক্তির দাবি করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং শ্রম শক্তির সবচেয়ে বড় যোগানদার এ দেশের কৃষি ব্যবস্থা। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশি জনশক্তি কৃষি কাজে নিয়োজিত আছে। দেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে গর্ব করে তার ৯০ ভাগই আসে কৃষকের সন্তানদের প্রেরিত অর্থ থেকে। দেশের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে সস্তা শ্রমের যোগানও আসে কৃষকের সন্তানদের মাধ্যমে। দেশের উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত সকল পণ্যের সবচেয়ে বড় ভোক্তাও এদেশের কৃষক সমাজ। অথচ বাংলাদেশের কৃষককুল আজ দিশেহারা।
গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোটার ও প্রার্থীবিহীন তামাশার নির্বাচন ও ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান হাসিনা সরকার দেশের কৃষক সমাজকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে। দেশের প্রতিটি কৃষক নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হচ্ছে অথচ তাদের পাশে কথিত সরকারের কেউ দাঁড়াচ্ছে না। কোথাও কোথাও অবৈধ ক্ষমতাসীনদের লালিত সন্ত্রাসীরা কৃষকের জমি জমা দখল করছে আবার কোথাও ফসল, পুকুরের মাছ, গবাদিপশু, গাছ-পালা কেটে লুটতরাজ করে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষক নির্বিঘেœ তার প্রয়োজনে জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না ক্ষমতাসীন দালাল ফড়িয়াদের কারণে। বর্তমান অবৈধ সরকারের ওপর মহলের লুটপাটের কারণে কৃষকের উৎপাদনের সাথে জড়িত সার, বীজ, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশকসহ সকল উপকরণের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। প্রতিটি মৌসুমে দেশের কৃষকুল বাড়তি টাকা খরচ করে ধানে বাম্পার ফলন ফলাতে সক্ষম হয়। কৃষকের গোলায়, চাতাল ও গুদামে লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন নতুন ধান, চাল থাকার পরও সরকারিভাবে এবং সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট আমদানিকারকরা ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানি করে একদিকে নিজেরা মুনাফা করে অপরদিকে ধান চাষীদের পথে বসিয়ে দেয় অথচ সাধারণ মানুষ মোটা চাল ৪০-৪৪ টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। যেখানে কৃষকের খরচ হয়েছে ৬০০-৭০০ টাকা সেখানে প্রতিমণ ধান ৬৪০-৬৬০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। যার ফলে গড়ে প্রতি বিঘায় কৃষকের নীট লোকসান ৬০০-৮০০ টাকা। সরকারিভাবে ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে কৃষকের মাথায় হাত পড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে, প্রতিবছর সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে কয়েক লক্ষ টন চাল আমদানি করা হয়। অথচ এ কথা অস্বীকার করা হয়। দেশে দানা শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬৬ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে স্বীকার করা হচ্ছে। দেশের আপতকালীন মজুদ কমে এখন ১০ লক্ষ ৮১ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। একদিকে উদ্বৃত্ত উৎপাদন ও বিদেশে রফতানির কথা বলা হচ্ছে অন্যদিকে প্রতিবছর শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে কার স্বার্থে? দেশে ভুট্টা চাষীরা প্রতি বছর ভুট্টার ন্যায্যমূল্য পায় না। যারা ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশায় ভুট্টা সংরক্ষণ করে তারা সে ভুট্টা বিক্রি করতে পারে না, কারণ ভারত থেকে নিম্ন মানের ভুট্টা আমদানি করে সরকার দলীয় লোকেরা। একই অবস্থা শাক-সবজিসহ অন্যান্য রবিশস্যের ক্ষেত্রেও ঘটেই চলেছে।
সারা দেশে আলু চাষীরা চরম আতংকে আছে। তারা ধান-পাট-ভুট্টা-সবজিতে দাম না পেয়ে আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
সারের তুলনামূলক বাজার দর
২০০৬ ২০২১
ইউরিয়া ৬ টাকা প্রতি কেজি ১৮ টাকা প্রতি কেজি
টিএসপি ১৫ টাকা প্রতি কেজি ৪২ টাকা প্রতি কেজি
পটাস ১২ টাকা প্রতি কেজি ২৩ টাকা প্রতি কেজি
ডিএপি ১৮ টাকা প্রতি কেজি ২৯ টাকা প্রতি কেজি
কৃষক দলের আহবায়ক বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সালের শাসন আমলে দেশের পোল্ট্রি, ডেইরী ও মৎস্য খাতের নানা ধরনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এ তিনটি খাত দেশীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়। কিন্তু বর্তমান অবৈধ ক্ষতাসীনদের ২০০৯-২০২১ সাল পর্যন্ত একটানা শাসন আমলে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে এসব খাতে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
পোল্ট্রি : বিগত বিএনপির শাসন আমল ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল যার ফলে দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে উঠেছিল। এসব ফার্মে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক লোকের কর্ম সংস্থান হয়েছিল। কিন্তু ২০০৭ সাল হতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারের বেশি পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন শেষ হয়ে প্রায় ২০ লক্ষ লোক বেকার হয়ে পড়েছে।
পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থায় দুর্নীতি-অনিয়ম, ভারত হতে ডিম ও বাচ্চা আমদানি এ শিল্প ধ্বংসের প্রধানতম কারণ।
ডেইরী : দেশে দুগ্ধ, দুগ্ধজাত পণ্য, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য বিএনপির শাসন আমলে পশু পালন ও দুগ্ধ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। যার ফলে সারাদেশে হাজার হাজার দুগ্ধ খামার, গরু মোটা তাজাকরণ খামার, ছাগল-ভেড়া ও মহিষের খামার গড়ে উঠেছিল। এগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান ছাড়াও প্রণোদনা দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক ঋণ প্রদানে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে সরকার। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে না। পশু খাদ্য, ওষুধপত্রের মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। গুঁড়া দুধ আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর ফলে দেশীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অসংখ্য ডেইরী ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছে।
মৎস্যখাত : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে যেখানে মৎস্য খাত হতে রফতানি আয়ের ৪.৫৬% আসত তা এ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে কমে ২.৭৫%-এ এসে দাঁড়িয়েছে। দেশে মৎস্য চাষ উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে ডেইরী, পোল্ট্রি শিল্পের মতোই মৎস্য চাষও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে।
জাতীয় বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি : আওয়ামী সরকারের গত ১৪ বছরের শাসন আমলে জাতীয় বাজেটে কৃষি বরাদ্দ ও ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে কমানো হয়েছে।
মোটা চালের মূল্য সর্বনিম্ন প্রতি কেজি
২০০৬ প্রতি কেজি ১৬/-
২০২১ প্রতি কেজি ৪৪/-
কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎতের মূল্য প্রতি ইউনিট
২০০৬ সালে ১.৬০-১.৭০/-
২০২১ সালে ৩.৮২/-
ডিজেলের মূল্য
২০০৬ সালে ১৮/- প্রতি লিটার
২০২১ সালে ৬৬/- প্রতি লিটার
ধান বীজের মূল্য
২০০৬ ২০২১
আউশ ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ১৫০/- ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ৭৫০/
আমন ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ১৫০/ ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ৬০০/
বোরো ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ১৬০/ ১০ কেজি প্রতি ব্যাগ ৬০০/
বাজেটে কৃষিখাতে অর্থ বরাদ্দের হার
অর্থ বছর শতাংশ
২০০৯-২০১০ ৭.২৪%
২০১০-২০১১ ৬.৫৮%
২০১৯-২০২০ ৫.৪০%
২০২০-২০২১ ৫.৩০%
সরকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের বোরো মৌসুমে ডিজেলের ওপর ১৫-১৮% ভর্তুকি দেয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তা মূলত সরকারের দলীয় লোকজনদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকের কোনো উপকার হচ্ছে না। ভর্র্তুকির অর্থে সার ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে একই অবস্থা চলছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাপনা ও বিএডিসিসহ কৃষি সেক্টরে দুর্নীতি-দলীয়করণ : বিগত আওয়ামী লীগ ও বর্তমান অবৈধ সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়কে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে ফেলেছে। জাতীয় কৃষি গবেষণা কার্যক্রম তার অতীত ঐতিহ্য হারিয়েছে বর্তমান সরকারের নগ্ন দলীয়করণের কারণে। বি আর আর আই, বিএআরসি, পাট গবেষণা, পরমাণু কৃষি গবেষণাসহ কৃষি গবেষণা সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে মেধাবী, অভিজ্ঞ ও জেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ও গবেষকদের ডিঙিয়ে বা বাদ দিয়ে মেধাহীন অযোগ্য, অনভিজ্ঞ, কনিষ্ঠ ও দলবাজ লোকদের দায়িত্ব দেয়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী এসব প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
১৯% সুদে কৃষিঋণ : শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যেখানে বিএনপির শাসন আমলে কৃষকের ৫ হাজার টাকার কৃষিঋণ সুদসহ এবং পরবর্তীতে ১০ হাজার টাকার ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছিল। সেখানে বর্তমান গণবিরোধী সরকার কৃষকের ওপর ১৯% সুদের বোঝা চাপিয়ে কৃষকের সাথে উপহাস করছে।
সুন্দরবন : বাংলাদেশের কৃষি জলবায়ু, জীব-বৈচিত্র্য, মৎস্য এবং পশু সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান দখলদার সরকার সুন্দরবনকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। এ লক্ষ্যে সুন্দরবনের পাশে রামপালে ভারতীয় বিষাক্ত কয়লাভিত্তিক বিদুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।
করোনা : সারা বিশ্বের মানুষ গত ১ বছর যাবত অতিমারি কোভিড-১৯ বা করোনা আতংকের মধ্যে আছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার বেহাল দশা। বাংলাদেশের সরকার বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্নভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে কিন্তু করোনাকালীন সময়ে কৃষকদের জন্য প্রকৃত অর্থে কিছুই করেনি। গ্রামীণ জনপদে সামান্য সাহায্য-সহযোগিতার চাল-টাকা বা অন্যান্য উপকরণ সরকার দলীয় লোকজন নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে। উল্লেখিত বিবরণের প্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ৪র্থ জাতীয় সম্মেলনের প্রাককালে আপনাদের মাধ্যমে কৃষকের পক্ষে কিছু দাবিনামা তুলে ধরতে চাই।
১। প্রতিটি মৌসুমে বাম্পার ফলনের পরও শুধু কৃষককে সবস্বান্ত করার জন্য ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি বন্ধ করতে হবে।
২। সরকারিভাবে সরাসরি প্রকৃত কৃষকের নিকট হতে ন্যায্যমূল্যে ধান-চাল ক্রয় করতে হবে।
৩। ভারতে থেকে ভুট্টা আমদানি বন্ধ করতে হবে।
৪। শস্য পরিবহনের সময় পথে পথে দলীয় চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
৫। হাটে ইজারাদারদের দৌরাত্ম্য বন্ধ ও কৃষকের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
৬। কৃষিঋণ প্রকৃত কৃষকের মাঝে সরাসরি প্রদান করতে হবে। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দালালি বন্ধ করতে হবে।
৭। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্য কমাতে হবে।
৮। কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
৯। ডিজেলের মূল্য কমাতে হবে।
১০। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না।
১১। ভারতীয় সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলি করে নিরীহ কৃষক হত্যা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২। করোনা চলাকালীন সময়ে প্রকৃত কৃষকদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।
সর্বোপরি দেশের কৃষকের ওপর সকল নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তা না হলে বাংলাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত কৃষক সমাজকে সাথে নিয়ে দুর্বার কৃষক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমানে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী কৃষকের শক্র হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশপ্রেমিক কৃষক বান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে কৃষকের ন্যায্য দাবি আদায় করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
সংবাদ সম্মেলন আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, তকদির হোসেন মো. জসিম, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসকে সাদী, অ্যাডভোকেট নাসির হায়দার, অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, মাইনুল ইসলাম, আলিম হোসেন, কৃষিবিদ মেহেদি হাসান পলাশ, লায়ন মিয়া মো: আনোয়ার, নাসির হাজারী, মোজাম্মেল হক মিন্টু সওদাগার, আলহাজ খলিলুর রহমান ইব্রাহিম, এম জাহাঙ্গীর আলম, সাখাওয়াত হোসেন নান্নু, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, শফিকুল ইসলাম, আব্দুর রাজি প্রমুখ।