‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসনের অবসানে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন অপরিহার্য - গণফোরাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১০ এএম, ১০ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বর্তমান ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসনের অবসানে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছে গণফোরামের একাংশ। একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আগামীতে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়ে তোলার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন দলটি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে গণফোরামের একাংশের মুখপাত্র ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু এসব কথা জানান।
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্র একটি ভয়ংকর সার্বিক নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের সকল দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যারা ধারণ ও লালন করেন তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনকে হটাতে হবে এবং বর্তমান বিরাজমান অবস্থা থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দিতে জাতীয় সরকার গঠন অপরিহার্য।
মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, আমরা সম্মেলন নিয়ে এখন ব্যস্ত। সম্মেলনটা শেষ করে নিয়ে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করব। যে পরিধিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আছে তাকে আরো বড় ও আরো সুন্দর করা যায় কিনা ..। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রীমনা শক্তিকে নিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্য করতে চাই, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করতে চাই।
রাজধানীর বাংলা মোটরে রুপায়ন টাওয়ারে ‘ওয়াটার ফল’ রেস্টুরেন্টে গণফোরামের একটি অংশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান করে। এই মতবিনিময় সভায় গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনে ছিলেন না।
মন্টু জানান, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন অসুস্থ বিধায় এই সম্মেলনে তাকে আসতে বলা হয়নি। বর্তমান সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাক স্বাধীনতা হরণসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন গণফোরামের মুখপাত্র সুব্রত চৌধুরী তার লিখিত বক্তব্যে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এর কারণ হলো জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে তাদের গোলাম করা হয়েছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করা হয়েছে। নিশি রাতে ভোট চুরি করে লুটেরা চক্রকে জনগণের প্রতিনিধি নামে প্রতারণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। এরফলে একটি শক্তিশালী সক্ষম রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হচ্ছে না। গণফোরাম একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসা¤প্রদায়িক এবং বৈষ্যমমূলক সমাজ বিনির্মাণ। আজ দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যারা এই মহতি চেতনায় বিশ্বাসী তাদেরকে দলে যোগদান করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের কথা বলা হচ্ছে। আসলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিলো সিনট্রোম অব দি লেফট, মধ্যম বাম ধারার তিনি (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি করেছেন। অর্থাৎ মানুষের মুক্তির দিকে তিনি নিয়ে গেছেন, মুক্তিলক্ষ্যে তিনি কর্মসূচি দিয়েছেন এবং এক পর্যায়ে তিনি সামাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে। আজকের যে আওয়ামী লীগ ছোট করে যদি বলি, আওয়ামী লীগ হলো সিনট্রোম অব দি রাইট পার্টি-যা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। আরো একটা পার্টি আছে- রাইট অব দি রাইট পার্টি। এই দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ, আকাক্সক্ষা ধারণ করে না, লালন করে না এবং বাস্তবায়নের পক্ষেও নাই। এখন আমরা স্পেস পাচ্ছি, কল্যাণ ধর্মী রাষ্ট্র যারা তৈরি করবে সেই কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র তৈরি করা বা বাস্তবায়ন করার একটা দল নাই, বাংলাদেশে নাই। গণফোরাম ‘সেন্টার অব দি লেফট’ অর্থাৎ মধ্যপন্থি বাম রাজনীতি কাজ করতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। জিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশও করেন ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলের তথ্য প্রতিমন্ত্রী সাইয়িদ। গণমাধ্যমে ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনটাই হয়েছে কি? আপনাদের সাংবাদিকদের কোনো দাবি তারা (সরকার) মেনেছে। মানে নাই-প্রতারণা করেছে। কিন্তু আমি দেখি না আপনাদের মধ্যে সেই বারুদ কোথায়? আপনারা জ্বলে উঠতে পারেন না কেনো? আমরা পারি না-এটা আমাদের ব্যর্থতা। আপনারা পারেন না কেনো? পাকিস্তান আমলে দেখেছি-সাংবাদিকরা আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। ইত্তেফাকে সিরাজউদ্দিন হোসেনসহ তারা। স্বৈশাসক সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের যে ভ‚মিকা ছিলো সেই ভ‚মিকা আজকে সাংবাদিকদের কি পরিমাণ আছে তাদেরই আত্মসমালোচনা করা দরকার।
পরে মন্টুর বক্তব্যের মাঝেই ফ্লোর নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, গণফোরাম সাংবাদিকদের পক্ষে কি করেছন? এটা তো মতবিনিময় অনুষ্ঠান। আর যদি সাংবাদিকদের নিয়ে সমালোচনা-আলোচনা করতে চান, আমি ইনভাইট করছি, আমি আছি, আজিজ ভাই (আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া) আছেন- প্লিজ কাম টু দি প্রেসক্লাব। আমাদের ইউনিয়নের নেতারাও আছেন, প্রেসক্লাবের নেতারাও আছেন। আপনারা বলেছেন, কেনো সাংবাদিকরা মাঠে নামে না। আপনারা কয়টা রাজনৈতিক দল আমাদের সাথে গেছেন। সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি নিয়ে গণফোরামের কি প্রোগ্রাম আছে বলেন। সাংবাদিকদের দাবি নিয়ে কয়টা প্রোগ্রাম করেছেন আপনারা। আমরা তো এখনো মাঠে আছি। কাজেই আপনারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আপনাদের মতামত দেয়ার জন্য। আমরা প্রশ্ন করব, আপনারা আমার জবাব দেবেন। আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করতে চান, প্লিজ ইনভাইটেশন টু দি প্রেসক্লাব এ কাপ অব টি এন্ড উই ডিসকাস এবাউট দ্যা মিডিয়া সিচুয়েশন।
গণফোরাম জাতীয় ফ্রন্টে আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট গঠন হয়েছিলো। আমরা এই ফ্রন্টে নেই –এটা আমরা কখনো বলিনি। এখন এই ফ্রন্টের কার্যক্রম কার্যকর নেই, স্থগিত আছে। এটা যদি ভবিষ্যতে চালু হয়। এখন আমরা বিভিন্ন জেলায় জেলায় যাচ্ছি আমাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে। আগামী ২৮ ও ২৯ মে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত আমরা নেবো-আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকবো না নতুনভাবে আরো বৃহত্তর পরিসরে ঐক্যফ্রন্ট করবো। এটা সম্মেলন ডিসাইড করবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, গণফোরাম ড. কামাল হোসেন, আমি বা অমুক ব্যক্তি বড় বস্তু না। আমাদের এটা একটা সংগঠন, এর একটা গঠনতন্ত্র আছে, এটার নিয়মাবলী আছে। এই গঠনতন্ত্র মোতাবেক সংগঠন চলবে। আমি মারা গেলে যে সংগঠন স্থগিত হয়ে যাবে তা না, দলের কোনো নেতা মারা গেলে সংগঠন বন্ধ হয়ে যাবে না, চলে গেলেও সংগঠন বন্ধ হবে না। সংগঠন চলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক। আমাদের কাউন্সিলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আমাদের দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন। কাউন্সিলররা ডিসাইড করবেন কে নেতৃত্বে থাকবেন, কে থাকবেন না।
মন্টু বক্তব্যের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোরাওয়ার্দি, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, প্রবাসী সরকারের জাতীয় চার নেতা, সেক্টার কমান্ডার জিয়াউর রহমানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। গণফোরামের প্রতীক ও নিবন্ধন কোনো ব্যক্তির নামে নয়, গণফোরামের নামে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই মতবিনিময় সভায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশের সংবাদ-এর সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, জনকন্ঠের উপ সম্পাদক এনাম আবেদীনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে গণফোরামের নেতা অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামাল উদ্দিন আহমেদ, আসাদুজ্জামান, হেলাল উদ্দিন, আইয়ুব খান ফারুক, খান সিদ্দিকুর রহমান, লতিফুল বারী হামীম, আবদুল হাসিব চৌধুরী, মো. জাহ্ঙ্গাীর, নাসির হোসেন, তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, সানজীব রহমান শুভ, ইসমাইল সম্রাট উপস্থিত ছিলেন।