সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও, শাহবাগ ছাড়ল বিক্ষোভকারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৩ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৭ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
আজ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এ ঘোষণা দিয়ে
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন তারা। এর পাশাপাশি আজ সন্ধ্যা ৬টায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেয় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।
লেখক মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি ও আইনটি বাতিলের দাবিতে আজ শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ মোড় ঘুরে শাহবাগে এসে শেষ হয়। এখানে এসে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেন তারা। এ সময় বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী প্রতিবাদী পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিক্ষোভে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তার অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কারাগারে আটকে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। মুশতাকের মৃত্যুকে তিনি নির্মম ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেন।
শ্রমিক নেতা ও ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবিব বলেন, লুটপাট-দুর্নীতি-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। সরকারের সমালোচনা করে সত্য কথা বলায় একজন লেখককে গ্রেপ্তার করে জামিন দেওয়া হয়নি।
উদীচীর নেতা রহমান মোস্তাফিজ বলেন, ‘আমাদের সবার মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই আইনের খড়্গ নেমে আসে আমাদের ওপর।’
শাহবাগে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আরিফ রহমান, কবি সৈকত আমিন, নারীমুক্তি কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি তাসলিম আক্তার প্রমুখ।
তিনি দাবি করেন, দেশে আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালা কানুনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান এ সময়।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘লেখক মুশতাক নয় মাস ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।’
বিক্ষোভে আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা প্রমুখ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান লেখক মুশতাক আহমেদ। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, মুশতাক গতকাল সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তারাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়। আর বাকি আটজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।