খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৫ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১২ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নড়াইলের আদালত কর্তৃক বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করে এর নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই নিন্দা জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান মিডনাইট সরকারের মাফিয়াতন্ত্র দেশে-বিদেশে উন্মোচিত হওয়ার পর তাদের ঘরে-বাইরে মুখ দেখাতে না পেরে চক্রান্তে মেতে উঠেছে। আল জাজিরার পর ডয়েচে ভেলে এরপর আবার ‘দ্য ইকোনমিস্ট’! রাষ্ট্রের সব গোপন অপকর্ম রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ আজ আর কোনো রাষ্ট্র নয়, প্রজাতন্ত্র নয়, বৈদেশিক শক্তিনির্ভর এক মাফিয়াতন্ত্র মাত্র। অধঃপতিত এই পদ্ধতিতে নীতি, আদর্শ, প্রজ্ঞা বা দূরদর্শিতা নয়, বরং প্রতিহিংসাপরায়ণতা, হঠকারিতা ও অবিমৃষ্যকারিতাই এখন এই সরকারের চলার পথ প্রদর্শক। এখন সরকারের অবস্থা ‘দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ।’ চারদিকে নানা কথাবার্তা, ফিসফাস শুনতে পাচ্ছে জনগণ। সরকারের অবস্থা ভালো না। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা নাটক, রঙ্গ করছে। আবার নতুন করে গ্রেফতার, মামলা, হামলা, নিপীড়ন, নিষ্ঠুর দমননীতি শুরু করেছে। জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করছে। এর অংশ হিসাবে গত ৪ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের এক আদালত একটি মিথ্যা ও ভুয়া মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদন্ড দেয়। এরপর আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ব্রিগেড ফোর্সের অধিনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অর্জিত বীরত্বসূচক ‘বীর উত্তম’ পদক ছিনতাই করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে সরকার। কোনটাতেই হালে পানি না পেয়ে হতাশ শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সরকারের বন্য আক্রোশের কারসাজিতে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে নড়াইলের বহুল আলোচিত আদালত। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্তমান বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী তার জিঘাংসা পূরণের মুখোশ আরো একবার উন্মোচিত করলো। এই ঘটনায় পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, আইন আদালত শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় এবং আওয়ামী লীগেরই একটি বর্ধিত প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী কক্ষপথেই ঘুরপাক খাচ্ছে আইন আদালত। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনাটি কদর্য অমানবিকতা, নির্মমতা ও হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ। বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় তিন বছরের বেশি সময় বন্দি রেখে তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ইতিহাসের সকল বর্বর নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। আজ্ঞাবহ বিচার ব্যবস্থায় হাস্যকর ঘটনাও বটে। কি নির্লজ্জতা, ফ্যাসিবাদের নগ্ন উল্লাস!
তিনি বলেন, যে মিথ্যা মামলায় গতকাল বুধবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট একই মামলায় একই আদালত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। এই আদালত ঘিরে আওয়ামী লীগ তাদের একটি মামলাবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সারাদেশে কিছু মামলাবাজ পুষে রেখেছে সরকার। যাদের কাজই হলো সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া। এদের মধ্যে একজন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের শহীদ শেখ জামাল জাতীয় স্মৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ আশিক বিল্লাহ। অপরজন জেলার কালিয়া উপজেলার চাপাইল গ্রামের মোঃ রায়হান ফারুকী ইমাম। আরেকজন আছে কথিত জননেত্রী পরিষদের সভাপতি ঢাকার রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা এ বি সিদ্দিকী নামের এক মামলাবাজ। যাদের পেশা মামলা করা। এই নিশিরাতের সরকারের আমলেই এই সমাজে এদের মতো অসংখ্য মামলাবাজ দালাল-ফড়িয়াদের জন্ম হয়েছে। গণবিচ্ছিন্ন গণশত্রুদের দুঃশাসনের বাইপ্রোডাক্ট হচ্ছে এই মামলাবাজরা। এই সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এই ধরনের বিকারগ্রস্ত লোকরা প্রায়ই বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে উদ্ভট, বানোয়াট ও আজগুবি মামলা একের পর এক দায়ের করে যাচ্ছে। মিথ্যা-ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করার উদ্দেশ্য হলো সরকারের নেক নজরে থেকে আখের গুছিয়ে নেয়া। সরকারি পেইড মামলাবাজদের অন্যতম একজন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছে, মামলা করাই আমার নেশা ও পেশা। প্রধানমন্ত্রীর আনুকূল্য পেতেই এই চেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমি গণভবনে গিয়ে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মাথায় হাত দিয়ে সাহস দিয়েছেন। এখন প্রায়ই আমার গণভবনে যাওয়ার সুযোগ হয়। দেশনেত্রীর বক্তব্য নিয়ে নড়াইলে এক মামলাবাজ তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলো। অথচ আমরা যদি আইনের ভিত্তিতেও বলি তাহলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া কেউ কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা করতে পারেন না। কিন্তু সেখানে মামলা হলো, গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে দুই দফা। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা এখনো যোগ বিয়োগ হচ্ছে। কাটাছেঁড়া হচ্ছে। তাহলে ওনারা কি ভুল বলেছে? আদালত কি এতোটা বেখবর হয়ে গেলো? ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে কোনো সত্য উচ্চারণ এবং সমালোচনা করলেই সেটা হয়ে যায় তাদের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। আর তাদের লোকজন বললে হয় দেশপ্রেম। আমাদের দলের ভাইস চেয়ারম্যান রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ’৭১-এ যুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধার মোট সংখ্যা ছিলো ৮০ হাজার। এখন কিভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ হলো? এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কারা? এটা জাতি জানতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়ে এই মিডনাইট সরকার গায়ের জোরে দেশের আইন আদালতকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সরকারের দুঃশাসনের বিরদ্ধে সোচ্চার বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ আজ ভয়ঙ্কর সর্বনাশা বিপদের মুখে। প্রধানমন্ত্রীর চরম রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হচ্ছেন তারা। তারই ধারাবাহিকতায় নড়াইলের আদালত সরকারের মনস্কামনা পূরণ করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির ভুয়া, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধেও। সরকারের চোখ রাঙানি ও প্রতিশোধপরায়ণতার ভয়ে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আজ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ন্যায়বিচারের ধারণা মানুষ ভুলে যেতে শুরু করেছে। আদালতকে আওয়ামী মাফিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশীদারে পরিণত করা হয়েছে। আওয়ামী বিচারের শিকার হওয়ার ভয়ে গোটা জাতি আজ তটস্থ।
মূলত প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্যই তিনি পথের কাঁটা ভেবে চার বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জুলুমের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করেছেন। একদিকে শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ দেশনেত্রীকে হত্যার চক্রান্ত অন্যদিকে তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গন্ডিও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা ও জারিকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। পাশাপাশি বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানহানির মিথ্যা মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় পরিণতি শুভ হবে না। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিহিংসার পরিণতি হয় অস্বাভাবিক। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে রাজনৈতিক সমাধান হবে না, বরং দেশকে নিয়ে যাওয়া হবে চরম নৈরাজ্যের দিকে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সকল জুলম-নিপীড়ন-নির্যাতনের অবসান না হলে জাতীয়তাবাদী শক্তি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে গতকাল রাত পৌনে দশটার দিকে রাজধানীর কাঁটাবন এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। মাফিয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের সমালোচনায় দেশ-বিদেশের মানুষ আজ সোচ্চার। সরকার আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে, তাই তারুণ্যের শক্তির যাতে উত্থান না ঘটে সেজন্যই রাকিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাকিবকে গ্রেফতার করার পুলিশের এই হীন বর্বরতার উদ্দেশ্যই হচ্ছে-ছাত্র সমাজের আন্দোলনকে দুর্বল করার অপচেষ্টা মাত্র। কিন্তু সরকারের এই অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না, বরং ছাত্র সমাজ আরও ফুঁসে উঠবে। আমি রাকিবকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। জেলা মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব শ্যামল মিল্কী, ইটনা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আবেদ খান, রায়টুটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান মিল্কী এবং উপজেলা ওলামা দলের আহবায়ক মাওলানা নাজিম উদ্দিনসহ কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১০৯ জন নেতাকর্মীকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মিথ্যা অভিযোগে এতজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি উল্লিখিত অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন প্রমুখ।