লিয়েন শেষে যোগ না দিলে শোকজ ছাড়াই চাকরিচ্যুতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:০৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
লিয়েন তথা দীর্ঘমেয়াদি ছুটি নিয়ে অন্যত্র কর্মে বা উচ্চ শিক্ষাগ্রহণকারী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কেউ নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ না দিলে কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুতির নিয়ম করে নতুন বিধান জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণলয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলছেন, লিয়েন নিয়ে একবার ছুটি নিতে পারলেই অনেকে সময়মতো চাকরিতে যোগ দেন না। ফলে ঐ পদ ব্লক থাকে, নতুন নিয়োগের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়। তাছাড়া এটি একধরনের প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা। এটি রোধকল্পে ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালাও পর্যালোচনা করে কিছু সংশোধন-সংযোজনের কথা ভাবা হচ্ছে। গতকাল সোমবার সচিবের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বিধিমালা নিয়ে প্রথমবারের মতো পর্যালোচনা করেছেন।
এখন একজন কর্মকর্তা একই সঙ্গে পাঁচ বছরের বেশি লিয়েন ছুটি পাবেন না। বিদ্যমান বিধানে এটি ১০ বছর ছিল। এরকম ছুটি নিয়ে নিজের সরকারি পদ বহাল রেখে অনেকে দেশে-বিদেশে বহুজাতিক কোম্পানিতে কনসালটেন্টসহ বিভিন্ন পদে উচ্চ বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন। অবসরের বয়স কাছাকাছি আসার পর মূলত পেনশনের সুবিধা নিতে তারা চাকরিতে পুনঃযোগ দিচ্ছেন। এখনো দুই শতাধিক কর্মকর্তা এমন ছুটিতে আছেন।
জারি করা সরকারি কর্মচারী লিয়েন বিধিমালা, ২০২১-এ বলা হয়েছে, চাকরিজীবনে কোনো কর্মকর্তা পাঁচ বছরের বেশি লিয়েন পাবেন না। শর্ত না মানলে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হবে। কোনো কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে পাঁচ বছর কাজ না করলে লিয়েনের ছুটি পাবেন না। তবে ছুটির মেয়াদকাল হবে একনাগাড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, লিয়েনের নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে যোগদানের পরপরই অনেকে দেশে বা বিদেশে লিয়েনে চলে যান। এসংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা না থাকায় অনেকেই বছরের পর বছর লিয়েনে দেশের বাইরে থাকছেন। এজন্য নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
দক্ষ প্রশাসনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন উল্লেখ করে সচিব বলেন, নিয়ম রয়েছে এক জন কর্মকর্তাকে বছরে অন্তত ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় রয়েছে, বছরে এক জন কর্মকর্তা ১০০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন।
এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান বলেন, লিয়েন কার্যকর করা হয়েছিল পেশাগত উৎকর্ষকতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উচ্চ শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা এখন বাড়তি অর্থ আয়ের সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা দুঃখজনক। পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট না হলে লিয়েন ছুটি মঞ্জুর করা উচিত নয়। নিতে হলে পেশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। তবে লিয়েন নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থায় কাজ করলে ঐ কর্মকর্তা জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, যা প্রশাসনিক কাজের জন্য সহায়ক হবে। কিন্তু পেশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হলে লিয়েন নেওয়া উচিত হবে না।
আদেশে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা সমগ্র চাকরিজীবনে বিচ্ছিন্নভাবে অথবা ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন সংরক্ষণ করতে পারবেন; উল্লিখিত পাঁচ বছর কেবল চাকরির জ্যেষ্ঠতা, বেতন বৃদ্ধি ও অবসর গ্রহণের (পেনশন) জন্য গণনাযোগ্য হবে এবং অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এই সময় গণনাযোগ্য হবে না এবং লিয়েনাধীন সরকারি কর্মচারী এই সময়ে কোনো বেতন-ভাতা বা ছুটি প্রাপ্ত হবেন না। বাংলাদেশ সরকারের চাকরি থেকে অবমুক্তির তারিখ থেকে উক্ত চাকরিতে পুনঃযোগদানের পূর্বদিন পর্যন্ত সময় লিয়েনকাল হিসেবে গণ্য হবে।
মোট লিয়েনকাল যদি একাধিক্রমে পাঁচ বছর অতিক্রম করে, তবে পাঁচ বছর অতিক্রমের তারিখ থেকে সরকার বিশেষ বিবেচনায় অন্যরূপ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস (বিএসআর) প্রথম খণ্ডের বিধি ৩৪ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীর সরকারি চাকরির অবসান হবে এবং উক্ত চাকরির সঙ্গে তার সব সম্পর্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছিন্ন হবে।
ধারাবাহিকভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে পাঁচ বছর বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরি করার পর সরকার বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশীয় প্রতিষ্ঠানে কোনো সরকারি কর্মচারীকে পুনরায় বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ আরো দুই বছর থাকার অনুমতি প্রদান করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, এ ক্ষেত্রে মেয়াদ বর্ধিত করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।
লিয়েনের আবেদন মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মচারী চাকরিতে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না বা কোনো বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন না।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ভূতাপেক্ষভাবে লিয়েন মঞ্জুর বা বৃদ্ধি করার জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ হবে না; লিয়েন আবেদন মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে আদেশ জারির আগে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে লিয়েনে গমনের উদ্দেশ্যে অনুমোদিত মেয়াদের জন্য বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে।