প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলায় আহত ১৬০, আটক ২৫ - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৮ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন ১১৯ জনের অধিক নেতাকর্মী। ২১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, তিতুমীর কলেজের সাবেক ভিপি হানিফ, ঢাকা মহানগর উত্তর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সরদার নুরুজ্জামান, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল উত্তর নেতা সাজ্জাদ হোসেন রুবেল। এছাড়াও পুলিশের আক্রমণে ও প্রচন্ড লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মোর্শেদ আলম, গুলশান থানা যুবদল যুগ্ম আহবায়ক আনিসুর রহমান মাস্টার, ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাকিল আহমেদ স্বপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য স্বপন, ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সভাপতি খন্দকার এনামুল হক এনাম, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মহসিন হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল হক নয়ন, জাসাস সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, জাসাস নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপন, ইব্রাহিমসহ ৭ জন, পল্টন থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নোমান খান, ১৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহবায়ক জুয়েল, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক হান্নান, শাহবাগ থানা ছাত্রদলের ২০ নং ওয়ার্ড সদস্য সাদ্দাম হোসেন, ২১ নং ওয়ার্ড সদস্য সচিব মেহেদী হাসান, ১৩ নং ওয়ার্ড যুগ্ম আহবায়ক শরীফুল ইসলাম, পল্টন থানা শাখার সাবেক সদস্য আরিফ হোসেন অভি, আল আমিন, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শরীফ, পল্টন থানা ১৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য মোতাব্বির হোসেন অপু, মঞ্জু, শ্রমিক দল নেতা মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, ঢাকা মহানগর ছাত্রদল নেতা ইমন, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মনিরা আক্তার রিক্তা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার কেয়া। এছাড়া আহত হয়েছেন রিফাত, আতিয়ার রহমান, দিলু, মোঃ হাসান, মোঃ লিটন, মোঃ সোহাগ, মোঃ আজহার, আনোয়ার হোসেন, মোঃ ইউসুফ, মোঃ সজিব, মোঃ শরিফ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সহকারী সুমনসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এছাড়াও এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে গ্রেফতার করা হয়েছে যুবদল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাকির সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার ভূঁইয়া রুবেল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবায়দুল্লাহ নাঈম, সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জহির মাঝি, আনোয়ার হোসেন এবং হরেন, স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের এবাদুল বেপারী, নাদিম হোসেন, হিরন, মোঃ আজিজ, মোঃ রুবেল, ইরান, সুমন, রাহাদ, সজিব, আলামিন, জয়, মোঃ রফিকসহ ২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
তিনি বলেন, দেশে এখন বর্তমান অবৈধ সরকারের আদিম হিংস্রতা শুরু হয়েছে। আজকের ঘটনায় আবারো প্রমাণিত হলো আওয়ামী গুন্ডাশাহীর রাজত্ব কত ভয়ংকর। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর পুলিশের এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আওয়ামী নাৎসী পুলিশ বাহিনীর পৈশাচিক এই হামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা মহানগরীর উত্তর-দক্ষিণের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন, লাঠিপেটা করে অনেকের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সমাবেশ শুরুর সময় থেকেই পুলিশ বিনা কারণে উস্কানি ও মারমুখী আচরণ করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের ভাবমূর্তি এমন তলানীতে ঠেকেছে যে, জনগণের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার সিরিজ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গতকালের প্রেসক্লাব এলাকা ছিল যেন রক্তমাখা রণক্ষেত্র। দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেনের ওপর পুলিশ যে হামলা করেছে তা কেবলমাত্র কাপুরুষরাই করতে পারে। ডাঃ জাহিদ অনেক অনুরোধ করার পরেও পুলিশ তাকে রেহাই দেয়নি, উপর্যুপরি তার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। গতকাল পুলিশের আচরণ ছিল উদ্ধত, বেপরোয়া ও সন্ত্রাসী ক্যাডারদের মতো। বিএনপির সমাবেশের ওপর সরকার পুলিশকে যে লেলিয়ে দিয়েছে সেটির এক অমানবিক নিষ্ঠুর দৃশ্য দেশবাসী আবারো অবলোকন করলো। শেখ হাসিনার লাঠিপেটার গণতন্ত্র জনগণ আরেকবার প্রত্যক্ষ করলো।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, সরকারের কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা জল্পনা-কল্পনা আড়াল করতে না পেরে শেখ হাসিনা তার রীতি অনুযায়ী বেপরোয়া ডান্ডাতন্ত্র চালু করেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘একটি লাশের বদলে দশটি লাশ ফেলতে হবে’। শেখ হাসিনা একটি ‘মাফিয়া জেনারেশন’ তৈরি করতে চান বলেই বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ, ভিন্ন মত ও চিন্তা সহ্য করতে পারেন না। আওয়ামী লীগের হৃদয় কখনোই মুক্ত ও উদার ছিল না। তাই র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা মেশিনারি দিয়ে গুম-খুন-মিথ্যা মামলা, হামলা, গ্রেফতার ও নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। গত ১২টি বছর ধরে দেশ থেকে সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গতকাল প্রেসক্লাবের ঘটনা ফ্যাসিবাদের অবয়বের চূড়ান্ত রূপ।
এই উৎপীড়নের বাতাবরণের মধ্যেও বিএনপির সভা-সমাবেশে মানুষের ঢল দেখে সরকার দিশেহারা, তাই সরকার লাঠির ভাষায় জবাব দিতে চাচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও চুরি বিদ্যার কুকীর্তি আড়াল করা যাবে না। জনগণ সব ধরে ফেলেছে। জাতি মাফিয়া রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই সরকারের পতনের সংবাদ পাওয়া যাবে। শেখ হাসিনার চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন পূরণ হবে না। এই সরকার এখন কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছে।
আজ প্রেসক্লাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা, নেতাকর্মীদেরকে গুরুতর আহত ও গ্রেফতার করার ঘটনায় আমি বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে, পুলিশি হামলায় আহত হয়েছেন ১৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী। পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।