জনগণ ফুঁসে উঠছে, স্বৈরাচারী শাসকের মতো সরকারের পতন ঘটবে-আব্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৭ এএম, ১২ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৭ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
মানুষের হৃদয় থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতারা। সমাবেশে বক্তরা বলেন,আজকের প্রধানমন্ত্রীর পিতা তো জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিলেন, আপনারা সেই খেতাব মুছে দেবেন? পারবেন না। গ্রামের কুটিরে কুটিরে জিয়াউর রহমানের নাম। পদ্মা-মেঘনার উত্তাল স্রোতে জিয়াউর রহমানের নাম, কোকিলের কণ্ঠে জিয়াউর রহমানের নাম—এই নাম মানুষের হৃদয় থেকে, মানুষের অন্তর থেকে এই মাফিয়া সরকার মুছে ফেলতে পারবে না।
জনগণ ফুঁসে উঠছে উল্লেখ করে স্বৈরাচারী শাসকের মতো বর্তমান সরকারের পতন ঘটবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, কোনো স্বৈরাচার সরকারই ক্ষমতা ছাড়ে না, ছাড়াতে হয়। কেউ আপনাকে অধিকার দেবে না, অধিকার আদায় করতে হবে। আশার বিষয়, জনগণ ফুঁসে উঠেছে। ইনশাল্লাহ, জনগণের দাবির তোড়ে আন্দোলনে একদিন সকল স্বৈরাচার সরকারের মতো এই সরকারেরও পতন হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ উদ্যোগে নড়াইল আদালতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাতক্ষীরার আদালতে দলের প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ১০ জন এবং পাবনার ৪৭ জন নেতাকর্মীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা প্রদান এবং দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদকে কারাগারে প্রেরণের ঘটনার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। একই দিন এই কর্মসূচি হচ্ছে সারাদেশে মহানগর ও জেলায়। সকাল থেকেই ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত হয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হয়। এতে জনতার ঢল নামে। নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে প্রেসক্লাব চত্বর উত্তাল করে তোলে।
মির্জা আব্বাস বলেন, আপনারা (সরকার) তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছেন। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের খেতাব ছিনতাই করতে চাচ্ছেন। এসব করে কোনো লাভ হবে না। দেশের জনগণ ফুঁসে উঠছে, ফুঁসে উঠেছে। ইনশাল্লাহ এই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, এই জনগণের আন্দোলনে একদিন সকল স্বৈরাচারী শাসকের সরকারের মতো এই সরকারেরও পতন হবে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার পদক আপনারা ছিনতাই করবেন। ছিনতাই করা আপনাদের অভ্যাস হতে পারে। আমাদের কথা হলো- এটা একটা সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ মাত্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার পদক আপনারা ছিনতাই করতে চাচ্ছেন। আমি বলতে চাই, এই পদক এই সরকার দেয় নাই, এই পদক স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশের জনগণ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বশে তাকে এই পদক দিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আপনারা মামলা দিলেন, আবার দুই বছর সাজাও দিলেন। আরে ২ বছর দেন আর ২শ বছর দেন- কোনো লাভ হবে না। তারেক রহমান যখন দেশে ফিরে আসবেন সবার মাঝে, আপনাদের হাজার বছরের সাজা মানুষজন কেউ পাত্তা দেবে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে এতো কথা বলে লাভ নেই- ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা তুই এখন যাবি।’ আর কোনো দাবি নাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই। আল-জাজিরা দেখে মাথা খারাপ হওয়ার কি আছে? এই তো লাখ কোটি বাংলাদেশের একটা ছোট-খাটো জিনিস দেখিয়েছে। আজকে ঘরে ঘরে ডন, ঘরে ঘরে মাফিয়া, ঘরে ঘরে দখলদার, ঘরে ঘরে খুনি, ঘরে ঘরে নারী ধর্ষণকারী। তাদের নিয়ে শেখ হাসিনার বসত। এই বসত বেশিদিন টিকে থাকবে না। আমি বলব, কাঁচে ঘরে যতই স্বচ্ছ হাসিনা, কাঁচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল মারা অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন, গণতন্ত্র বন্ধ করলে, গণতন্ত্র রুদ্ধ করলে কী পরিণতি হয় তার ইতিহাস আছে। এজন্য এতো লম্পঝম্ফ করে লাভ হবে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, জেনারেল জিয়াউর রহমান খেতাব অর্জন করেছেন, এই অর্জিত খেতাব নিয়ে যাওয়া যায় না। তিনি পল্টন ময়দানের বক্তৃতা মাধ্যমে কোনো খেতাব পাননি। তিনি খেতাব পেয়েছেন বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ এবং সংগ্রাম করে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। অতএব এসব কথা বলে কোনো লাভ নেই। একজন আজকে বলেছেন, খেতাব নিয়ে যাওয়াতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আরে যে দেশে আইন নেই, সেই দেশে আইনগত বাধা কি থাকবে। এদেশে যারা আইন প্রণয়ন করে তারা অবৈধ, তারা হলেন অনির্বাচিত। তারা সংসদে বসে যে আইন প্রণয়ন করে তা বৈধ আইন নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই প্রধানমন্ত্রী ভোটচোর, এই প্রধানমন্ত্রী নিশিরাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের খেতাব যদি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্ব জনগণ কেড়ে নেবে, শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসে বিশ্ববাসী আতঙ্কগ্রস্ত আর শেখ বর্তমানে আতঙ্কগ্রস্ত আল-জাজিরা ভাইরাসে। এই আল জাজিরা ভাইরাসকে কাউন্টার করার জন্য নতুন নাটক জিয়াউর রহমানের খেতাব কেড়ে নেয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেয়া। আপনার নেতারা বলেন, জিয়াউর রহমান নাকি পাকিস্তানের চর, রাজাকার। তাহলে যে ব্যক্তিটি জিয়াউর রহমানকে বীরোত্তম খেতাব দিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রীর পিতা তিনি কতবড় রাজাকার। উনি তো বীরোত্তম খেতাব দিয়েছেন জিয়াউর রহমানকে। আপনারা মুছে দেবেন জিয়াউর রহমানের নাম, আপনারা পারবেন না। গ্রামের কুঠিরে কুঠিরে জিয়াউর রহমানের নাম, পদ্মা মেঘনার উত্তাল স্রোতে জিয়াউর রহমানের নাম, কোকিলের কন্ঠে জিয়াউর রহমানের নাম, এই নাম মানুষের হৃদয় থেকে মানুষের অন্তর থেকে এই মাফিয়া সরকার মুছে ফেলতে পারবে না।
প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্দোলনে মরিচের গুঁড়া ছিঁটানো এই সরকার ইসরাইলের কাছ থেকে টিয়ারগ্যাস কিনে বেগম খালেদা জিয়ার মিছিলেও তা ছিটিয়েছে। এই সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করবে, সাজা দেবে- এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেখানে ভয় সেখানেই তো মানুষ জোরে জোরে গান গায়। যেখানে ভয় সেখানেই তো মানুষ দল বেঁধে চলে। তাই আমরা দল বেঁধে চলবো। আমাদের যেসব নেতাকর্মী চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি, দেয়াল ভেঙেই আমরা তাদের মুক্ত করবো। সেই দেয়াল আমাদেরই ভাঙতে হবে। এটাই হোক আজকের প্রতিবাদ সমাবেশের শপথ।’ দলের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই কর্মসূচি আসছে। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। তবে এই সরকারকে গদি থেকে নামানোর জন্য আরও ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের এজিএম শামসুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর বিএনপির মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ইউনুস মৃধা, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ্উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের সদস্যসচিব হাসান জাফির তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, রফিক শিকদার, আমিনুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়র ইশরাক হোসেন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, ওলামা দলের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, জাসাসের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রেজানুল হক রিয়াজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, ইফতেখারুজ্জামান শিমুল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন, তানজিল হাসান, তাঁতী দলের যুগ্ম আহবায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামন মনির, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা শামীম পারভেজ, তানভীর আহমেদ রবিন, মো, ইকবাল হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।