অসহায় গীতা রানীর নেই কোন মাথা গোজার ঠাই
পুরান ঢাকায় বাড়ি দখল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৮ পিএম, ৩ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে সংখ্যালঘু এক পরিবারের মাথা গোঁজার ঠা্ইটুকু দখল করে নিয়েছে কার্তিক চন্দ্র রায়, শিল্পী রায় ও গোবিন্দ নামক সন্ত্রাসীরা। হৃষিকেষ দাস রোডের ৯৫ নম্বরের এই শত বছরের পুরনো বাড়িটিতে থাকতেন প্রয়াত ব্রজ বল্লভ দাসের কন্যা গীতা রানী দাস ও তার দুই ভাই। কিন্তু দুই ভাই নিতাই চান দাস ও গোবিন্দ চন্দ্র দাস অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে একমাত্র বোন হিসেবে গীতা রানী দাস হিন্দু আইনের বিধানমতে ওয়ারিশমূলে মালিক হন। গীতা রানী চিরকুমারী হওয়ায় তাঁর পরিবারে আর কোন ওয়ারিশদার নেই। এমতাবস্থায় জোরপূর্বক পৈতৃক ভিটা থেকে তাকে উচ্ছেদ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী। অসহায় এই নারীর আশ্রয় মিলেছে এক মুসলিম পরিবারের বারান্দায়। পৈতৃক এই বাড়ি ফিরে পেতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে ধন্যা দিয়ে এখন ক্লান্ত বয়স্ক এই নারী। নিজের পৈতৃক সম্পদ অবৈধ দখলদারদের হাতে থাকায় অন্যের আশ্রয়ে থেকে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন গীতা রানী। এরই মধ্যে কার্তিক চন্দ্র রায় গংরা বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি হুমকি দিচ্ছে। এতে প্রাণনাশের আশংকা করছেন গীতা রানী।
পৈতৃক সম্পদ ফিরে পেতে এবং জীবনের নিরাপত্তার আর কোনো উপায় না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ছুটে আসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানালেন তার আকুতি। বাড়ি ফিরে পেতে অঝোরে কাঁদলেন গীতা রানী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গীতা রানী দাস জানান, আমি গীতা রানী দাস, পিতাঃ- মৃত- ব্রজ বল্লভ দাস (রেকর্ড আর এস, খতিয়ান নং-১৬৬৭, মৌজায় সূত্রাপুর, জে.এল নং-৩, খানাঃ সূত্রাপুর, জেলাঃ ঢাকা। দাগ নং-৫২৩০ (বাড়ি), জমির পরিমাণঃ ০৪৫০ শতাংশ এবং দাগ নং- ৫২৩১ (মন্দির), জমির পরিমাণঃ ০০৮০, শতাংশ ১টি ও পারিবারিক মন্দির ব্যবহার করা হয় এর মূল মালিক ওয়ারিশ সূত্রে), সাং- ৫নং কালিচরণ সাহা রোড, ফরিদাবাদ, থানা- গেন্ডারিয়া, ঢাকা, এই মর্মে থানায় লিখিতভাবে জানাইতেছি যে, আমার স্বত্ব দখলীয় ঢাকা জেলার সূত্রাপুর থানাধীন ৯৫নং ঋষিকেশ দাস রোডস্থিত বাড়ীর নীচ তলার ভাড়াটিয়া কার্তিক চন্দ্র রায়ের, পিতা- মৃত অনন্ত চন্দ্র রায়, পরিবারসহ দীর্ঘদিন যাবৎ আমার অধীনে উচ্ছেদযোগ্য ভাড়াটিয়া হিসাবে উক্ত কার্তিক চন্দ্র রায় বাসা বাড়ী ও দোকানের ভাড়াটিয়া হিসাবে ১৪২০ বাংলা সন হইতে ১৪২৯ বাংলা সন পর্যন্ত ভাড়াটিয়া হিসাবে আছে বটে। কিন্তু তাহাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ও পারস্পর যোগসাজসীভাবে উক্ত কার্তিক চন্দ্র রায় তার স্ত্রী শিল্পী রানী ও তার দুই মেয়ে সহ তার পরিবার উক্ত দোকানটি জায়গাসহ আত্মসাৎ করার জন্য শ্রী শ্রী যুত মদন গোপাল জিউ বিগ্রহ ঠাকুর মন্দির এর কমিটির সভাপতি সেক্রেটারীর যোগসাজসে দখল করিয়াছে। রেঃ জিঃ নং ৯৫-৯৬, হৃষিকেশ দাস রোড, ঢাকা-১১৭০ এর নামে একটি ভূয়া সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। বর্তমানে উক্ত দোকানটিতে মূর্তি স্থাপন করেছে। ভূমি দস্যুরা বলে এটা দেবত্তর সম্পত্তি। মূলত এই সম্পত্তি দেবত্তর সম্পত্তি নয় এটা আমার ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। ভূমি দস্যুরা দোকানটির টাকা পরিশোধ না করিয়াই বেআইনী ভাবে অবস্থান করিতে থাকায় আমি উল্লেখিত বকেয়া মাসিক ভাড়ার টাকাসহ হালনাগাদ ভাড়া পরিশোধ করার জন্য তাহাদেরকে বিভিন্নভাবে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা আমাকে বকেয়া পাওনা উক্ত ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করিয়া বরং আমাকে আর ভাড়ার টাকা প্রদান করিবে না ও ভাড়াকৃত দোকান বাড়ীর ৯টি রুম বিল্ডিং দোতলা দখল ছাড়িবে না এবং ভাড়ার টাকা চাহিলে আমাকে খুন, জখম করিয়া লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছে। আমি একজন চিরকুমারী বয়োবৃদ্ধ মানুষ। এই দুনিয়াতে আমার ঘনিষ্ঠ কোন উপার্জনক্ষম আপনজন নেই এবং উক্ত ভাড়ার টাকার উপরই আমার জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু ভাড়াটিয়াগণ দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ ভাড়া প্রদান না করায় আমি আর্থিক কষ্টে অন্ন-বস্ত্র ও চিকিৎসায় অতি কষ্টে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। অপরদিকে অবৈধ দখলদারদের হুমকির কারণে সর্বদা জীবন নাশের ভয়ে ও আতংকের মধ্যে আছি।
সংবাদ সম্মেলনে বেদখল হওয়া সম্পত্তির আরএস পর্চা, সিএস পর্চা, এসএ পর্চা, সিটি জরিপ, নামজারী, খাজনার রশিদ, হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ এবং ওয়ারিশ সনদ তাঁর নামে রয়েছে বলে দাবি করেন গীতা রানী দাস এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখান। তিনি আরও বলেন, নিজের পৈতৃক সম্পত্তির দখল ফিরে পেতে গত বছরের ১১ মে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতরে অভিযোগ করলে ২২ মে জেলা ম্যাজিসটেট ডিএমপি কমিশনারকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু দখলদারদের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েজন স্থানীয় নেতার যোগসাজশ থাকায় দৃশ্যত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে গীতা রানী বাদি হয়ে কার্তিক চন্দ্র রায়, তার স্ত্রী শিল্পী রায় এবং গোবিন্দ গংদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০২৩ সনের ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের ৪/৫/৭/২০সহ ১৮৬০ সনের দন্ডবিধির ৩২৩/৫০৬ ধারায় কার্তিক গংদের অভিযুক্ত করা হয়। আদালত জবানবন্দি ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিটিআই) আগামী ১৫ অক্টোবর তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
গীতা রানী দাস জানান, আদালতে মামলা দায়েরের পর থেকে কার্তিক চন্দ্র রায় গং তাঁকে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি, হয়রানি এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তির দখল ফিরে পেতে এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য বর্তমান সরকার, মানবাধিকার কমিশন এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি আশা করেন, ড. ইউনূসের সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে সন্ত্রাসী কার্তিক গংদের হাত থেকে জমি উদ্ধার করে সম্প্রীতি বজায় রেখে বাকি জীবন শান্তিতে কাটাতে পারবেন।
দিনকাল/এসএস