ফ্যাসিবাদের দোসরেরা রয়ে গেছে বহালতবিয়ত
দেশ স্বাধীন হলেও এসএমই ফাউন্ডেশনের স্বাধীনতা আসেনি
সোহেল সামি
প্রকাশ: ০৫:৪১ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:৩১ পিএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর স্বৈরাচার খুনি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। তারপরও স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্তরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীভুক্ত প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের সদস্য পদে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।
স্বৈরাচার পতনের প্রায় দুই মাস পরও সরাসরি আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন এখনও কিভাবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহাল তবিয়তে আছে সেটাই ছাত্র-জনতার প্রশ্ন।
শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী, দোসর এবং সহযোগী।
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও ফাউন্ডেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যয় করে এই পরিচালকদের নিয়ে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী কমিটির সভা করছেন।
ফাউন্ডেশনের নিয়ম অনুযায়ী একই ব্যক্তি পরপর ২ বছর করে ৪ বছরের বেশি পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকতে পারবে না।
অথচ শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় মির্জা নুরুল গণি শোভন ১২ বছর ধরে পর্ষদের সদস্য আছেন, ওনার বিরুদ্ধে সরকারি চালান জাল করে অর্থ আত্মসাতের মামলাও আছে।
মোঃ রাশেদুল করীম মুন্নাও ৮ বছর ধরে পর্ষদের সদস্য আছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পুত্রবধূ মিজ মানতাশা আহমেদও ৮ বছর ধরে পর্ষদের সদস্য আছেন।
ফাউন্ডেশনের অপর পর্ষদ সদস্য মিজ ইসমত জেরিনের (বাবা পটুয়াখালী আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি) তিনি ৮ বছর ধরে পর্ষদের সদস্য হিসেবে আছেন।
স্বর্ণলতা রায়ও আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী এমপি হতে মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন। তিনিও জেনারেল বডিতে ৬ বছর ধরে আছেন।
ওনারা সবাই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এসএমই ফাউন্ডেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সকল পরিচালকদের ফাউন্ডেশনে আমন্ত্রণ করে ফাউন্ডেশনের অর্থে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করেছেন। এছাড়া অপসারিত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের কথিত বোনের সাথেও সভা করেছেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন পদত্যাগ করলেও ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদের কোনো সদস্য পদত্যাগ করেনি বরং তারা ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী সভায় অংশগ্রহণ করছেন।
সূত্রে আরও জানা যায়, পরিচালক পর্ষদের এই সদস্যরা দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নের চাইতে নিজেদের উন্নয়নে প্রভাব খাটাতেন। এই পরিচালকরা প্রভাব খাটিয়ে উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ আয়োজন ও মেলা আয়োজনের নামে ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যবহার এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রীর পুত্রবধূ হিসেবে মানতাশা আহমেদ হেরিটেজ মেলার নামে ফাউন্ডেশন হতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে খরচের কোন হিসাব দেন নাই। দেশের এসএমই খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বলছেন, এসএমই ফাউন্ডেশন পরিচালনায় ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী এবং সুবিধাভোগী পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ পর্ষদ পুনর্গঠন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ে অপসারণের জন্য এসএমই উদ্যোক্তারা দাবি জানাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া পাশাপাশি এসএমই উন্নয়নের স্বার্থে ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া আবশ্যক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পুত্রবধূ মিজ মানতাশা আহমেদের সাথে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি দিনকালের প্রতিনিধীর সাথে কথা বলেন নি। ফাউন্ডেশনের অপর পর্ষদ সদস্য মিজ ইসমত জেরিনকে ফোন করলে পাওয়া যায় নি।
দিনকাল/এসএস