এক বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা : হিন্দু মহাজোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪০ পিএম, ৬ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:২৯ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গত এক বছরে হিন্দুসহ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি হিন্দু মহাজোটের।
আজ শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এই মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮৯ হাজার ৯৯০ একর জমি দখল করা হয়েছে। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে। গত বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও তাদের সারা দেশে থাকা কর্মীদের দেয়া তথ্য এবং সেসব যাচাই-বাছাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
লিখিত বক্তব্যে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, গত এক বছরে দেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ৮৪৯ জনকে, হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪২৪ জনকে এবং জখম ও আহত করা হয়েছে ৩৬০ জনকে। নিখোঁজ রয়েছেন ৬২ জন। চাঁদাবাজি হয়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। মোট ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ৩১৯টি। বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে ১৭৩টি। ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ৫৭টি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ৫০টি এবং মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টি। দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭২টি পরিবারকে। উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৪টি পরিবারকে এবং উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৮১৮টি পরিবারকে।
দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৪৪৫টি পরিবারকে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশত্যাগে হুমকির শিকার ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি। অপহরণ করা হয়েছে ১২৭ জনকে এবং অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭ জনকে। ৩৯ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৭ জন। ধর্ষণের পর ১৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, ৫৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন ও সহনশীলতা চর্চার অভাবে দেশে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১২৭টি। মিথ্যা মামলায় আসামি গ্রেফতার, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুত করা এবং জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন ৭৯১ জন। ১ হাজার ৬৫৭টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণের ঘটনা ঘটেছে ১৭৯টি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেয়ার ঘটনা ১২৯টি। ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ গরুর মাংস খাইয়ে ৩৩৩ জনকে অপবিত্রকরণসহ একটি পরিবারের ওপর গোমাংস নিক্ষেপ করা হয়েছে।
মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেনি। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধকল্পে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং একটি উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানানো হয়।