বিনিয়োগ করে বিপাকে মার্কিন নাগরিক
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসে হাজিরা দিতে হয় প্রতি মাসে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩১ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৬ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন মার্কিন নাগরিক মাসুদুর রহমান খান। তিনি জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রে হোটেল ব্যবসায় সফল তিনি। সে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ হোটেল অব দ্য ইয়ারের স্বীকৃতিও মিলেছে তার। বিনিয়োগ অংশীদার হিসেবে তার সঙ্গে আছেন দশজন সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী। যারা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এছাড়া তাদের সঙ্গে রয়েছেন ছয় বাংলাদেশি নাগরিকও। মাসুদুর রহমান খান লাইফস্টাইল হোটেল বিডি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। কোম্পানিটি সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে হোটেল ব্যবসা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবসার পাশাপাশি দেশের মানুষকে বেকারত্বের কবল থেকে মুক্তি দিতে রাজধানীর গুলশানে সাড়ে চার কোটি টাকা জামানত দিয়ে ১০ বছরের জন্য একটি বাসাভাড়া নিয়েছিলেন তারা। দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে সেই বাসাকেই বানান হোটেল। যার নাম রাখেন ট্রপিকাল ডেইজি। এই বিনিয়োগই যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ১০ বছরের চুক্তি চার বছর যেতে না যেতেই তাদের ভাড়া নেয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেন বাড়ির মালিক ডা. ফরিদ আহমেদ। উচ্ছেদের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করলেও উচ্চ আদালতে মালিকপক্ষের আবেদনের ফলে তা স্থগিত আছে। এরপর প্রতারণার অভিযোগে ফরিদ আহমেদ ও তার ছেলে রেজার বিরুদ্ধে মামলা করেন মাসুদুর রহমান খান। মামলার পর তারা দুজনই জামিন নেন। এ অবস্থায় দুই মাস পর মামলার তথ্য গোপন করে মাসুদুর রহমান খানসহ তার কোম্পানির চারজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন ফরিদ আহমেদ। মামলার হাজিরা দিতে প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন মাসুদুর রহমানরা। আদালত থেকে বার বার আপস-মীমাংসা করতে বলা হলেও ফরিদরা মীমাংসা করছেন না বলে অভিযোগ মাসুদুরের। উল্টো তাদের হয়রানির জন্য বিভিন্ন ফন্দি করছেন বলে অভিযোগ মার্কিন বিনিয়োগকারীদের। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের কথা ভাবাই যাবে না বলে মনে করছেন মাসুদুররা। এদিকে ফরিদ আহমেদের আইনজীবী বলছেন, তারা সবসময় আপস করতে প্রস্তুত। মাসুদুররা ডা. ফরিদ আহমেদের সম্মানহানি করার জন্য মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে মাসুদুর রহমান খান বলেন, বিদেশের কষ্টার্জিত টাকা বিনিয়োগ করে রাজধানীর গুলশানে ট্রপিকাল ডেইজি নামে একটি হোটেল চালু করি। হোটেলের চুক্তি ছিল ১০ বছরের। কিন্তু চার বছর যেতে না যেতে ফরিদ আহমেদ এবং তার ছোট ভাই হেলালের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জন ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উচ্ছেদ করে। এ সময় আমরা ছিলাম আমেরিকায়। এরপর ফরিদ আহমেদের ছেলে রেজা আহমেদ ই-মেইলে এবং ফোনে মেসেজে প্রথমে হুমকি দেয়, সেইসঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
তিনি আরও বলেন, হোটেল ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বেদখল আর জমাকৃত অর্থ (অ্যাডভান্স) আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। উল্টো আমাকে ও আমার কোম্পানির পরিচালক আমেরিকা প্রবাসী বিনিয়োগকারী সাজ্জাদুর রহমান, পরিচালক সাজিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদ এজাজের নামে বানোয়াট একটি মামলা করেন। মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রবাসের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত করে সুদূর আমেরিকা থেকে বার বার বাংলাদেশে ছুটে আসতে হচ্ছে আমাদের।
মাসুদুর রহমান খান বলেন, দেশে বিনিয়োগ করে নিজের টাকায় বিপদ ডেকে আনলাম। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা ভাবাই যাবে না। শুধু আমরা না, প্রবাসের কেউ দেশে বিনিয়োগ করবে না। আমরা প্রবাসে গিয়ে কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করছি। কিন্তু দেশের কিছু অসাধু মানুষ আমাদের অর্থ আত্মসাৎ করছে। টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তারা, আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। যাতে করে আমরা দেশে আর বিনিয়োগ না করি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তার আইনজীবী আল মামুন রাসেল বলেন, সাড়ে চার কোটি টাকা জামানত দিয়ে ঢাকার গুলশানে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের আগে মাসুদুর রহমান খান একটি হোটেল লিজ নেন। প্রতি মাসে ১২ লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে দেয়ার কথা ছিল। চুক্তির সময় কথা ছিল যদি কখনো মহামারি আসে তাহলে প্রতি মাসের নির্ধারিত ভাড়া কমানো যাবে। পরে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের সময় মাসুদুর রহমান খানরা ভাড়া কমানোর জন্য আবেদন করেন। তবে বাড়ির মালিক ফরিদ আহমেদ ভাড়া না কমিয়ে মাসুদুর রহমানরা আমেরিকা থাকাকালীন তাদের কর্মচারীদের চালু হোটেল থেকে উচ্ছেদ করেন। পরে মাসুদুর রহমান আমেরিকা থেকে ঢাকায় এসে একটি মামলা করেন। মামলার পর আসামিরা জামিন নেন। এরপর ফরিদ আহমেদরা আমাদের মামলার তথ্য গোপন করে একটি মিথ্যা মামলা করেন। মামলায় মাসুদুর রহমান ও সাজ্জাত জামিন নেন। আদালত বিষয়টি নিয়ে আপস করার জন্য বলেছেন। আমরা আশা করছি ফরিদ সাহেবরা বিষয়টি আপস করবেন। এ বিষয়ে বাসা মালিক ডা. ফরিদ আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এত কথা বলার সময় নেই। অফিসে এসে আমার জিএমের সঙ্গে কথা বলেন।
ফরিদ আহমেদের আইনজীবী ইমানুর রহমান বলেন, ফরিদ আহমেদ ও তার স্ত্রী পেশায় চিকিৎসক। তিনি কানাডায় চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত। শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তিনি চিকিৎসা সেবা দিতেন। গুলশানে ফরিদ আহমেদের বাড়িটি সাড়ে চার কোটি টাকা জামানতে মাসুদুর রহমানদের ১০ বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ১৪ মাসের ভাড়া বাকি রাখেন। ১৪ মাসের ভাড়া দাঁড়ায় চার কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। চুক্তি অনুসারে এক মাস ভাড়া না দিলে পরের মাসে ১০ শতাংশ বেশি দিতে হবে। করোনা মহামারির সময়ও তাদের হোটেলটি চলছিল। মাসুদুররা হোটেলের ভাড়া না দিয়ে হোটেলের জিনিপত্র নষ্ট করে চলে যান। এরপর ফরিদ আহমেদ ও তার ছেলে রেজার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন মাসুদুর রহমান। মামলার সময় তার ছেলে কানাডায় ছিলেন। তারা দুজনই জামিনে রয়েছেন। ফরিদ ও রেজার মানসম্মন ক্ষুণ্ন করতে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন মাসুদুরা। ফরিদ আহমেদ এ ঘটনায় মাসুদুর রহমান খানসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। মাসুদুর রহমানরা জামিনে রয়েছেন। আদালত বিষয়টি নিয়ে আপস করতে বলেছেন। আমরা সবসময় আপসের পক্ষে। ১০ বছরের চুক্তি চার বছর যেতে না যেতে উচ্ছেদ করে দেয়ার অভিযোগে একটি মামলা করেন মাসুদুর। আদালতের রায় আসে মাসুদুরের পক্ষে। পরে ফরিদ আহমেদ মামলাটি নিয়ে উচ্চ আদালতে গেলে আদালত তা স্থগিত করেন। এরপর বাড়ির মালিক এম ফরিদ আহমেদ ও তার ছেলে রেজা আহমেদের বিরুদ্ধে লাইফস্টাইল হোটেল বিডি লিমিটেডের পক্ষে কোম্পানিটি মাসুদুর রহমান খান (৫০) ঢাকার আদালতে একটি মামলা করেন। চলতি বছরের ২৬ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮৬০ দন্ডবিধির ৪২০, ৪৪৭ ও ৪০৬ ধারায় এ মামলা করা হয়। মামলার পর আসামিরা জামিন নেন।
ভাড়া বাসাকেই বানান অত্যাধুনিক হোটেল : মামলার অভিযোগে মাসুদুর রহমান খান বলেন, লাইফস্টাইল হোটেল বিডি লিমিটেড কোম্পানিটি সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে হোটেল ব্যবসা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর গুলশান-২ এর ৩৫/এ রোডের ৩১/বি হাউজের ষষ্ঠতলা ও দুটি কার পার্কিং ব্যতীত প্রথম তলা থেকে ৫ম তলা, আন্ডারগ্রাউড এবং ছাদসহ এম ফরিদ আহমেদের (৬৫) কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য লিজ নেন। এম ফরিদ আহমেদ ও তার ছেলে রেজা আহম্মেদ লিজের সিকিউরিটি বাবদ চার কোটি ৫০ লাখ টাকা মাসুদুর রহমান খানের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। এরপর মাসুদুর রহমান লিজ নেয়া বাড়িটির সংস্কার শুরু করেন। লিজ নেয়া বাড়িতে গড়ে তোলেন একটি অত্যাধুনিক হোটেল। যার নাম রাখা হয় হোটেল ট্রপিকাল ডেইজি। মাসুদুর রহমান তার কর্মদক্ষতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে হোটেলটি লাভজনকের অবস্থায় নিয়ে যান। এরই মধ্যে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৮টার দিকে কোম্পানির পরিচালক সাজিদুর রহমানের সঙ্গে এক অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা রুফটপ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ছয়তলার লিফটের মাধ্যমে নিচে আসার জন্য যখন অপেক্ষা করছিলেন, তখন আসামিরা বাসা থেকে বের হয়ে এসে হোটেলের স্টাফদের উপস্থিতিতে অতিথিদের লিফট ব্যবহারে বাধা দেন এবং স্টাফদের সঙ্গে প্রচন্ড দুর্ব্যবহার করেন ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
মাসুদুরকে জীবননাশের হুমকি : মামলার অভিযোগে আমেরিকার সফল হোটেল ব্যবসায়ী মাসুদুর বলেন, ২০২২ সালের ১৪ জুন আসামি রেজা আমার কাছে এসে বলে যে, তার মেহমানের জন্য ছয়টি রুম লাগবে। সরল মনে আমি রেজার কথামতো তার মেহমানের জন্য হোটেলের ছয়টি রুম খালি করে দেই। একইদিন লাইফস্টাইল বিডি হোটেল লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার কিছু মেহমান নিয়ে ছাদে বসেন। এমন সময় আসামিরা তাদের ভাড়া করা প্রায় ৩০ জনের অধিক সন্ত্রাসী নিয়ে ছাদে আসে। তারা কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মেহমানসহ তাকে হোটেল থেকে বের হয়ে যেতে বলে এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে এবং জীবননাশের হুমকি দিতে থাকে। পরে ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরুপায় হয়ে তার মেহমানের সামনে লজ্জিত হয়ে বের হয়ে যান। বের হওয়ার সময় হোটেল লবির সামনে আরও প্রায় ২০-৩০ জন লোক মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর আসামিরা তার ভাড়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমার কোম্পানির কর্মচারীদের বের করে দেয়। আসামিরা কোম্পানির হোটেলের অনলাইন সিস্টেমের সব আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ে যায় এবং একজন কর্মচারীকে দুদিন ধরে বন্দি করে রাখে। আসামিদের ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে হোটেলের যাবতীয় কাগজপত্র, চেকবই ও সাইন করা চেকের পাতা, নগদ টাকা, আলমারি ও কম্পিউটারসহ যাবতীয় জিনিসপত্র যার আনুমানিক মূল্য প্রায় আট লাখ টাকা নিয়ে যায় এবং হুমকি দেয় যে, বাদী যেন পুনরায় এই হোটেলে না আসে, আসলে আর জীবন নিয়ে ফিরতে পারবে না।
মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানোর হুমকি : মাসুদুর তার অভিযোগে বলেন, ২০২২ সালের ২৩ জুন মামলার আসামি ফরিদ মামলার আমাকে একটি চিঠির মাধ্যমে জানায় যে, সিকিউরিটির টাকা থেকে ১৪ মাসের ভাড়া কেটে ৫১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আমি পাবো। এই টাকায় বাড়িভাড়া চলিত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলবে। এরপরে আমি সমঝোতার মানসিকতায় কোনো তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিয়ে আসামিদের একই বছরের ৩০ জুলাই একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পর আসামি রেজা আমাকে এসএমএসের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে যে, আমাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছ না? দেখে নেব তোমাদের, মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব। আমাকে হুমকি দেয়ার ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডি করি। জিডির পর আসামিরা একই বছরের ২৫ জুলাই আমার কোম্পানির করপোরেট অফিসে বসে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে বলে যে, কীসের মীমাংসা, আমার কাছে তোমদের কোনো টাকা পাওনা নেই। আমি তোমাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করিনি, ইত্যাদি বলে বাদী অফিস থেকে চলে যায়।
দশ বছরের চুক্তি, চার বছর যেতে না যেতে ভঙ্গ : মাসুদুর রহমান খান তার অভিযোগে বলেন, মামলার আসামি এম ফরিদ আহমেদ ও তার ছেলে রেজা আহমেদ সুচতুর ব্যক্তি। তারা মিথ্যা বর্ণনা নিয়ে ভুল বুঝিয়ে কমার্শিয়াল এরিয়া করে চুক্তি করে। চুক্তির পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে আমার কাছ থেকে চার কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। চুক্তির টাকার মধ্যে সমন্বয় করে ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা বাকি থাকে, যা ফেরত দেবে বলে মৌখিকভাবে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করেন। আসামিরা আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য একটা ফন্দি করেন। শুধু তাই নয়, আসামিরা আমার সাথে ১০ বছরের চুক্তি করে চার বছর যেতে না যেতে সেই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বাড়ি থেকে উৎখাত করেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে সাজা হতে পারে : আসামি ফরিদ ও তার ছেলে রেজার বিরুদ্ধে ১৮৬০ দন্ডবিধির ৪২০, ৪৪৭ ও ৪০৬ ধারায় এ মামলা করা হয়। এ মামলার ধারাগুলোর মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি রয়েছে সাত বছরের কারাদন্ড। যে ব্যক্তি বিশ্বাসঘাতকতা/লঙ্ঘন করে, তাকে তিন বছরের কারাদন্ড অথবা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
দন্ডবিধির ৪২০ ধারার শাস্তি : দন্ডবিধির ৪২০-এ প্রতারণা ও সম্পত্তি সমর্পণ করবার জন্য অসাধুভাবে প্রবৃত্ত করা। কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণা করে এবং প্রতারিত ব্যক্তিকে অসাধুভাবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তির অংশবিশেষ প্রণয়ন, পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করে অথবা অসাধুভাবে প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন কোনো স্বাক্ষরিত বা সিল মোহরযুক্ত বস্তুর সমুদয় অংশ বা অংশবিশেষ প্রণয়ন পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করে, যা মূল্যবান জামানতে রূপান্তরযোগ্য, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধমূলক ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ করে, যেমন মৃত্যুর হুমকি, যন্ত্রণা আঘাত এ ধরনের হয় হুমকি, তবে সে ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা অর্থদন্ডে অথবা অথবা জরিমানা অথবা উভয়বিধ দন্ডেই দন্ডিত হবে।