মেট্রোরেলের নিরাপত্তা
আসছে সাড়ে ৩০০ সদস্যের বিশেষ ইউনিট ‘এমআরটি পুলিশ’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২১ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৪৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ঢাকাবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট। নতুন এই ইউনিটটির নাম হবে- ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ’। এমআরটি পুলিশে ৩৫৭টি পদ সৃষ্টি এবং ২১টি যানবাহন টিওএন্ডইতে অন্তর্ভুক্তকরণ সম্বলিত প্রস্তাবটি জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে যাতায়াত করবে কয়েক হাজার যাত্রী। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশে পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। এর আওতায় থাকছে ১২৮ কিলোমিটার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগামী ডিসেম্বরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথমাংশ। এর নিরাপত্তায় ছাড় দিতে চায় না মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তাই চাহিদা অনুযায়ী গঠন করা হচ্ছে এমআরটি পুলিশ ইউনিট। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে যাতায়াত করবে কয়েক হাজার যাত্রী। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিএমটিসিএলের এ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল ও ৫৩টি পাতাল স্টেশনসহ মোট ১০৪টি স্টেশন তৈরি হবে। বিশাল এ স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হাতে দিতে এ বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে।
এমআরটি পুলিশের জনবলের জন্য ৩৫৭ জন সদস্যের যে নিয়োগটি হবে সেটি পুলিশ বাহিনী থেকে হবে। এ ইউনিটের সদস্যদের জন্য থাকবে আলাদা ইউনিফর্ম। তবে ইউনিফর্মটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পুলিশ সদর দফতর জানায়, এমআরটি পুলিশের জন্য একজন উপ-মহাপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৭ জন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), একজন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ৬ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৫১ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০ জন নায়েক, ২৭০ জন কনস্টেবল, একজন হিসাবরক্ষক, একজন উপ-সহকারী হিসাবরক্ষক ও একজন কম্পিউটার অপারেটরসহ মোট ৩৫৭ জন জনবলের একটি সাংগঠনিক কাঠামো মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও সামনে এসেছে। কারণ এরই মধ্যে মেট্রোরেলের পিলারে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার লাগানোসহ মেট্রোরেলের যন্ত্রপাতি চুরি হয়। সম্প্রতি মেট্রোরেলের পিলারে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহ আলী এলাকা থেকে মেট্রোরেল প্রকল্পের মালামাল চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় চোরাই ১৮টি আইবিমসহ একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও নগদ টাকা জব্দ করে র্যাব।
র্যাব জানায়, রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চোরাকারবারি চক্র দীর্ঘদিন ধরে মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আইবিম, অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরি করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চোরাই দল বিভিন্ন পন্থায় দ্রুত খন্ড খন্ড করে কেটে তা বিভিন্ন ভাঙারি ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। তাদের কাছ থেকে চোরাই ১৮টি আইবিম যার ওজন ৪০ টন (বাজারমূল্য ২৫ লাখ টাকা), একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, নগদ ৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা ও ১৬টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা একটি বিশেষ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গেও জড়িত। তারা পরস্পর যোগসাজশে কিছুদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আইবিমসহ অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন কৌশলে চুরির পর খন্ড খন্ড করে কেটে তা বিভিন্ন ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, মেট্রোরেল দেশের একটি নতুন ট্রানজিট প্রকল্প। তাই স্থাপনার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও যাত্রী সুরক্ষায় একটি বিশেষ ইউনিট দরকার। এছাড়া মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ওঅ্যান্ডএম) ফারুক আহমেদ বলেন, মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট। নতুন এই ইউনিট এমআরটি পুলিশের প্রস্তাবনাটি পুলিশ সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রস্তাবনাটি সচিব কমিটিতে রয়েছে। তিনি বলেন, এমআরটি পুলিশের জনবলের জন্য ৩৫৭ জন সদস্যের যে নিয়োগটি হবে সেটি পুলিশ বাহিনী থেকে হবে। এ ইউনিটের সদস্যদের জন্য থাকবে আলাদা ইউনিফর্ম। তবে ইউনিফর্মটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এমআরটি পুলিশ ইউনিট বাস্তবায়নে প্রস্তাবনাটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। অনুমোদনের পরই দ্রুত মেট্রোরেল পুলিশের কাজ শুরু হবে। এদিকে মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ থাকবে। মেট্রোরেলে মাসিক, সাপ্তাহিক, পারিবারিক এবং কার্ডে ভাড়া দেয়ার বিশেষ সুবিধা থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রতিবার ভ্রমণে বিশেষ ছাড় পাবেন। মেট্রোরেলের প্রতি কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। দিয়াবাড়ির ডিপো থেকে ধাপে ধাপে ট্র্যাকে উঠেছে মেট্রোর একেকটি ট্রেন সেট। শুরুটা হয়েছিল ডিপো থেকে স্টেশন এক পর্যন্ত। এরপর স্টেশন দুই, তিন হয়ে পল্লবী। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ট্রায়াল হয়ে গেছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎচালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। তবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।