দুই প্রতিষ্ঠানের টানাহেঁচড়া, পান্থকুঞ্জ এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৮ পিএম, ১৮ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৬ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
২০১৮ সালে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার পান্থকুঞ্জ পার্কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যে কাজ বন্ধ করে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। জানানো হয়, পার্কে বসবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার। এরপর গত চার বছরেও সে পিলার বসেনি। এই চার বছরে অবহেলায় আর অব্যবস্থাপনায় সবুজে গোছানো পান্থকুঞ্জ এখন জঙ্গল, অপরাধের স্বর্গরাজ্য। গত ২০ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশন এ পার্কে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসাতে দেবে না। তারা নতুন করে পার্কটির কাজ শুরু করবেন। জানতে চাইলে পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো খায়রুল বাকের বলেন, আমরা পার্কের নকশা সংশোধন করছি। বড় অবকাঠামো যেমন লাইব্রেরি, খাবার দোকান পার্কে রাখছি না। আমরা পার্ককে খোলামেলা রাখবো। হাঁটার পথ থাকবে। শিশুদের খেলার জায়গাও থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে চাই। আমাদের নতুন দরপত্র করতে হবে না। পুরনো ঠিকাদারই কাজ করবে। কিন্তু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক এএইচএম সাখাওয়াত আখতার বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ওখান দিয়ে পুরনো ঢাকার সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে কানেক্ট করার। পার্কের মধ্যে ২/৩টি পিলার বসবে। এ এক্সপ্রেসওয়ে পলাশীতে গিয়ে নামবে।
তিনি আরও বলেন, ওনারা কি বলছে না বলছে তা আমার জানার কথা নয়। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ আগাচ্ছে। ওখানে কাজ এখনও শুরু হয়নি। কাজ যখন শুরু হবে তখন ওদিক দিয়েই করবো। সিটি করপোরেশনের সমস্যা হলে আমরা দেখবো। আমরা একদম পশ্চিম দিক দিয়ে যাবো পার্কের কোনও ক্ষতি হবে না। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, জল সবুজে ঢাকা নামে একটি প্রকল্পের আওতায় পার্কটির উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয় ২০১৮ সালে। পার্কটিতে লাইব্রেরি, ফুলের বাগান, খাবার দোকান করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শুরুর কয়েকদিন পরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার বসানোর জন্য কাজটি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় বন্ধ করা হয়।
বর্তমানে কী অবস্থা : সরেজমিনে পার্কটি পরিদর্শন করে দেখা যায় লম্বাকৃতির পার্কটি এখন একটি ছোটখাটো জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। তিন দিকে টিন দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে এনে পার্কটির মাঝখানে রাখা হয়েছে ভবনের ভাঙা অংশ। বড় বড় পাইপ। কিছু কিছু জায়গায় ছড়িয়ে আছে মল-মূত্র। পার্কটিতে এখন ভবঘুরে লোকজন বসবাস করে। ভেতরে একটি ঘর। সেখানে বসবাস করেন পার্কটির উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার দ্য আর্সেনাল বিল্ডার্স লিমিটেডের নিরাপত্তাকর্মী মো. আব্বাস।
তিনি বলেন, ছিনতাইকারী, গাঁজাখোর, হিজরা আর যৌনকর্মীদের আড্ডাখানা এ পার্কটি। রাতে এদের জন্য শান্তি ঘুমোতে পারি না। আর গাঁজাখোররা দিনেও এখানে আড্ডা দেয়। সবসময় পার্কের একপাশে পুলিশের গাড়ি থাকে তাও কাজ হয় না।
তিনি আরও বলেন, কী কী অপকর্ম হয় তা আমি মুখেও বলতে পারবো না। এখানে দিনে থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। আমি একা থাকছি কারণ আমাদের কোম্পানির ইট, পাথর ও টিনের বেড়া রয়েছে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এমনিতে ঢাকা শহরে খোলা জায়গা কম। তার মধ্যে এভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের টানা হেঁচড়াতে চার বছর ধরে নগরবাসী পার্কটি ব্যবহার করতে পারছে না। এটাকে এভাবে নষ্ট করার কোনও কারণ ছিল না। এখানে পার্কটি জনগণের ব্যবহারের উপযোগী করে খুলে দেয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, এখানে যদি পিলারও বসে তাহলে যে জায়গাটিতে বসবে সে জায়গাটি ছেড়ে দিয়ে বাকি জায়গায় তারা সমন্বয় করে কাজ করতে পারে। বড় প্রকল্পের পার্কগুলো দীর্ঘদিন ফেলে রাখা অন্যায্য।