ক্ষমতাসীনরা পুলিশকে নিজেদের সম্পদ মনে করে : সাবেক আইজিপি শহীদুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৩ এএম, ২৯ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্র- এরা কখনো পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না। এ দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায়, তারা যা বলবে, পুলিশ তাই করবে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা মনে করে, পুলিশ তাদের নিজের সম্পদ। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কাজ করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।
আজ শনিবার (২৮ মে) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন তিনি।
সাবেক আইজিপি বলেন, আমি রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে কখনো মাথা নত করিনি। আমি চেয়ার ধরে চাকরি করিনি। বদলি হয়েছে, চলে গিয়েছি। চাকরিতে থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি। তবে আমার মতো তো সবাই পারবে না। এজন্য একটা সিস্টেম বা পদ্ধতি চালু করা উচিত, যাতে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।
বিচারব্যবস্থা নিয়ে শহীদুল হক বলেন, বিচারব্যবস্থার একটি অংশ পুলিশ। তারা যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম কখনো কার্যকর হবে না। পুলিশ যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। প্রথম রায়টা তো পুলিশ দিয়ে দিয়েছে যে, ঘটনা সত্য না মিথ্যা। পুলিশকে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়। তবে এটা রাজনৈতিক কথা, কিভাবে ঢেলে সাজাতে হয় সেটা আমি জানি না।
সাবেক এই পুলিশপ্রধান আরও বলেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আমি দায়িত্বে থাকাকালে ২০১৭ সালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু তা আর হয়নি। সেখানে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব যেমন ছিল, তেমনি পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব ছিল। পুলিশের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র সংস্থা সেটা তদন্ত করবে। কিন্তু সেটা হয়নি আমলাদের কারণে। আর রাজনীতিকরা তো চাইবেই না। যদি রাজনৈতিক ও আমলাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন না ঘটে তাহলে সুশাসন যে কথাটা সেটা শুধু স্লোগানের মধ্যেই থাকবে। পুলিশকে অনেক বৈরী পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই পুলিশের সেবা চায় কিন্তু কেউ পুলিশকে পছন্দ করে না। পুলিশকে ভয় পায়, কিন্তু পুলিশকে ভালো জানে না।
আমি বইতে লিখেছি, বাতাসের মধ্যে বসবাস করি বলে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করি না। তেমনি সমাজে পুলিশ আছে বলে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। শহীদুল হক বলেন, সরকার যদি ঘোষণা দেয় দুই ঘণ্টার জন্য পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না, তাহলে দেশে কি পরিস্থিতি হবে সেটা আমরা অনুভব করি না। পুলিশকে বুঝতে হলে পুলিশের কাছে যেতে হবে। পুলিশকে আস্থায় নিতে হবে। সেই সঙ্গে পুলিশকেও প্রচলিত ঔপনিবেশিক মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুটোরই পরিবর্তন দরকার।
বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি মো. নুরুল হুদা, বইটির সম্পাদক রাখাল রাহা, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি কামাল চৌধুরী ও দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দীন।