যানজট ও গরমে নাকাল ঢাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৫ এএম, ২৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
অসহনীয় যানজট ও তীব্র গরমে সোমবার দিনভর অতিষ্ঠ ছিল ঢাকাবাসী। গার্মেন্টকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে উত্তরা ও মিরপুরে আন্দোলন করেছে। এছাড়া ডেনমার্কের রাজকুমারীও ঢাকায় চলাচল করেছেন। এসব কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট হয়। তীব্র গরম ও যানজটে নগরজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি হয়। মহানগরীর মতিঝিল, পুরান ঢাকা, পল্টন, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, গুলশান, মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডাসহ অনেক এলাকার সড়কে ভয়াবহ যানজট হয়েছে। রমজান মাস হওয়ায় সন্ধ্যায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ইফতার অনুষ্ঠান ছিল। বাসা বা কর্মস্থল থেকে তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয়েও মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। সড়কে গাড়িতে বসে পানি বা দোকানপাট থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে তারা ইফতার করেছেন।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজখবরে জানা যায়, ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরার জসীমউদ্দিন-আজমপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকরা। ফলে মিরপুর-১০ ও আশপাশের সড়ক এবং বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আর এই যানজটের রেশ গড়ায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে। ফলে তীব্র দাবদাহের মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, গুলশান থেকে দেওয়ান পরিবহণের একটি বাসে উঠেছিলাম বিকাল সোয়া তিনটায়। ফার্মগেট পৌঁছাতে বেজেছে সাড়ে ৬টা। সঙ্গে পানি ছিল পথে পানি দিয়েই ইফতার সেরেছি। তিনি আরও বলেন, এমনিতে তো যানজট প্রতিদিনের বিড়ম্বনা। কিন্তু আজ এ বিড়ম্বনার মাত্রা বহুগুণ ছাড়াল। কুড়িল থেকে রাইদা বাসে রামপুরা যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, কুড়িল থেকে শুরু করে উত্তর বাড্ডা, লিংক রোড, মধ্য বাড্ডা, মেরুল, রামপুরা ব্রিজ, রামপুরা বাজার-সর্বত্রই ব্যাপক যানজট। যারা হেঁটে চলেছেন, তারা গাড়ির আগে যেতে পেরেছেন। এমন চিত্র ছিল রাজধানীর প্রায় প্রত্যেকটি সড়কে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। আর দুুপুরে উত্তরায় অবস্থান নেন ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড এবং ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড নামে দুটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা। উত্তরার দুটি গার্মেন্টের মালিক একই ব্যক্তি।
এ দুই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা জানান, তাদের কারও ২ মাসের বেতন বকেয়া, কারও ৩ মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাস পাওনা। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেয় তারা। সোমবার দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলার পর পুলিশ টিয়ারশেল মেরে জসীমউদ্দিন-আজমপুর সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার তাপস কুমার সাহা জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণখানের ‘ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড’ এবং ‘ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড’ নামে দুটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক জসীমউদ্দিন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিছু শ্রমিক ইট নিয়ে যানবাহনের দিকে ছুড়ছিল আর গাড়ি ভাঙচুর করছিল। তাদের তখন বুঝিয়ে নিবৃত্ত করতে না পেরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা তাপস বলেন, শ্রমিকরা চলে যায় এবং দুপুর পৌনে ২টার দিকে যান চলাচল শুরু হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এদিকে মিরপুর প্রতিনিধি জানান, একদিন বিরতি দিয়ে ফের সড়ক অবরোধ করেছে কটন টেক্সটাইলের শ্রমিকরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে কয়েকশ গার্মেন্ট শ্রমিক মিরপুর সাড়ে এগারো (পূরবী) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ১০ দিন ধরে বেতন, ওভারটাইমের টাকা, ঈদ বোনাস, সার্ভিস চার্জ ও মালিক পক্ষকে হাজিরের দাবিতে সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা। এর আগে শনিবার সকাল ৯টায় মিরপুর সাড়ে এগারো (পূরবী) মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। রবিবার শ্রমিক পক্ষের ৯ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বৈঠকে বসেন কারখানার মালিকপক্ষ, বিজিএমই ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ঈদের বোনাস ও এপ্রিল মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা সোমবার ফের রাস্তায় নামেন।
এতে মিরপুর ১০, ১১, ১২ নম্বরসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আসা বিভিন্ন পরিবহন পূরবীর (সাড়ে এগারো) সামনে এসে আটকা পড়ে। এরপর ওই সব পরিবহণ মিরপুর ৭ নম্বর (গলির সড়ক) দিয়ে প্রবেশ করলে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। বিশেষ করে গুলশান, বাড্ডা ও উত্তরাগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ইসরাফিল বলেন, জরুরি কাজে উত্তরার উদ্দেশে বের হয়েছিলাম। এখানে এসে আটকে গেছি। ঘণ্টাখানেক ধরে যানজটে বসে আছি। বিকল্প সড়ক দিয়ে যে যাব সে উপায় নেই। গলির সড়কে ঢুকে দেখি বড় বড় বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। রোজা রেখে এত গরমে কি বসে থাকা যায়?
প্রজাপতি পরিবহনের চালক আলম বলেন, ১ সপ্তাহ ধরে পূরবীর মেইন রোডে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সকাল থেকে রাস্তা বন্ধ থাকে। ১২ নম্বর যেতে হলে গলির সড়কে ঢুকতে হয়। এতে অনেক সময় লাগে। যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যায়। আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হই। দুপুর ১২টার পর পল্লবী জোনের এসি (পেট্রোল) মাহবুব শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়ে রাস্তা থেকে সরে যেতে বললেও শ্রমিকরা তাতে কর্ণপাত করেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বে না বলে ঘোষণা দেন। বিকাল ৩টার দিকে শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল বিজিএমইতে গিয়ে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি বলে তারা জানান। এদিকে ইফতারের আগমুহূর্তে শ্রমিকরা মঙ্গলবারও অবরোধ করবেন এমন ঘোষণা দিয়ে রাস্তা ছাড়েন। বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা বলেছি, ২৮ তারিখের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করব।