চার মাসেও খোঁজ মেলেনি নজরুলের, মামলা নেয়নি পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৭ এএম, ২৫ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১০:০৩ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে গত ৭ জানুয়ারি ‘নিখোঁজ’ হন অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (আইজি) ভগ্নিপতি নজরুল ইসলাম। তার বোনদের দাবি, এ ঘটনায় মামলা নেয়নি যাত্রাবাড়ী থানা। অন্যদিকে নজরুলের স্ত্রী রুবিনা বলছেন, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকতে পারেন নজরুল ইসলাম।
নিখোঁজের বড় বোন মঞ্জু বলেন, গত ৩ এপ্রিল তিনি এই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম মামলা নেননি। তবে ডিএমপির উত্তরখান থানায় একটি জিডি করেছেন রুবিনা।
মঞ্জু বলেন, কোথাও কেউ সহযোগিতা করছেন না। মামলা দিতে গিয়েছি, পুলিশ মামলাও নিলো না। মামলা না নেয়ার বিষয়ে জানতে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, মামলা না নেয়ার কোনও কারণ নেই। অবশ্যই অভিযোগ নেয়া হবে। বিষয়টি আমি জানতাম না। এখন এলে এখনই অভিযোগ নেবো। নজরুল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিলের বি-ওয়াপদা শাখার সিনিয়র অফিসার। গত ৭ জানুয়ারি সকালে উত্তরখানে নিজের বাড়ির ভাড়া তোলার জন্য শনির আখড়ার বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের।
রুবিনা বলেন, নজরুল ইসলাম ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা-পৌনে ৯টার দিকে বের হন। তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইলের একটি সঙ্গে নিয়ে যান। তবে সেটিও রাতে বন্ধ হয়ে যায়। তার মোবাইল প্রায়ই এমন বন্ধ পাওয়া যেত। ওইদিন রাতে তিনি আর ফেরেননি। কয়েকবার কল দিয়ে নম্বর বন্ধ পাই। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়টি জানাই। তারাও কেউ খোঁজ দিতে পারছিল না। নজরুল ইসলাম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গেছেন বলে তার স্ত্রীর ধারণা।
তিনি বলেন, নিখোঁজের আগে তিনি ব্যাংকের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে এসেছেন। এছাড়া আমেরিকা প্রবাসী এক নারীর সঙ্গেও তার পরিচয় ছিল। নজরুলের বোন মঞ্জু বলেন, নজরুল যদি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনেও থাকে, তবু তাকে বের করা হোক। তাকে বের করে ঘটনা উদঘাটন করা হোক। পুলিশ তা করছে না কেন? কেন ধারণার ওপর নির্ভর করে মন্তব্য করা হচ্ছে?
নজরুলের ছোট বোন জেসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের বাবা নেই। বড় ভাই আমাদের বাবার মতো। সে চার মাস ধরে নিখোঁজ। আমরা ভাই-বোনরা পাগলের মতো ছোটাছুটি করছি। কোথাও হদিস পাচ্ছি না। ঘটনার পর পুলিশ, পিবিআই ও র্যাব তদন্ত করে। কেউ এখনও আপডেট দিতে পারেনি, বলেন তিনি। রুবিনা ও নজরুল দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ছোট ছেলে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় ১৩ বছরেরও বেশি সময় চাকরি করেছেন নজরুল ইসলাম। ব্যাংকের লকারের চাবি তার কাছেই থাকতো। কখনও কারও কাছে তিনি চাবি দিতেন না। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি অফিস থেকে আসার সময় চাবিটি সহকর্মীদের কাছে দিয়ে এসেছেন।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, ঘটনার পর আমরা অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে কথা বলেছি। সবাই বলেছেন, নজরুল ইসলাম হাসিখুশি মানুষ। সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। ব্যাংকের লকারের চাবি তার কাছেই ছিল। ৬ জানুয়ারি চাবিটি সহকর্মীদের কাছে দিয়ে যান। পরদিনই নিখোঁজ হন।
তিনি দেশের বাইরে গেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়েছি। দেশের বাইরে যাওয়ার কোনও তথ্য পাইনি। নজরুল ইসলাম উত্তরখান ও তুরাগ এলাকায় জমির ব্যবসাও করতেন বলে জানিয়েছেন রুবিনা। তিনি বলেন, তার সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। আমাদের কোনও শত্রুও নেই।