শব্দদূষণ সচিবালয়ের ‘নীরব’ এলাকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৪ এএম, ১০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নীরব এলাকা হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান সচিবালয়কে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঘোষণা করে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। সেই বছরেই ৯ দিন শব্দের দূষণ পরিমাণ করার জন্য স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষক দল বাস্তবতা যাচাই করতে সচিবালয়ের চারপাশে ১২টি স্থানে কাজ শুরু করে। সেই বছরের ফলাফল এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের শব্দদূষণ নিয়ে আজ শনিবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, সচিবালয়ের চারপাশে নীরব এলাকা ঘোষণার পর ১ সেকেন্ডও নীরব ছিল না বরং দূষণের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। নীরব এলাকা ঘোষণার আগে সেখানে শব্দের পরিমাণ ছিল ৮৭.৫৭, পরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৩ ভাগ। একইভাবে ২০২০ সালের ১৪-২২ ডিসেম্বর ৯ দিন ১২টি স্থানে শব্দের উচ্চমান পাওয়া গেছে যার মধ্যে সচিবালয়ে মধ্য-পূর্ব ১২৮.৮ ডেসিবেল এবং কদম ফোয়ারার পাশে সর্বোচ্চ ১২৭.৬ ডেসিবেল উচ্চশব্দ পাওয়া গেছে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া পল্টন মোড়, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়ের ১, ৩নং গেটের কাছে শব্দদূষণের পরিমাণ ভয়াবহ। গবেষণার ফলাফল বলছে, এর ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন সড়কে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। সেই সময় সচিবালয় এলাকায় পুলিশের দায়িত্ব পালন করার সময় ৯.৬ ভাগ পুলিশ সদস্যের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। ২৮.৬ ভাগ পুলিশ অন্যরা উচ্চস্বরে কথা না বললে তারা শোনেন না।
এ বিষয়ে সচিবালয়ের চারপাশে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, কেউ জোরে কথা না বললে তারা শুনতে পান না। একইভাবে প্রথমে এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করার সময় তাদের প্রচুর কষ্ট হয়েছিল। অন্য আরেকজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, বাসায় পৌঁছানোর পর কারো সাথে আস্তে কথা বলা সম্ভব হয় না। কারণ সব সময়ই উচ্চশব্দে থাকতে থাকতে এই অভ্যাস গড়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ বলছে, নগরীর মধ্যে অতিরিক্ত শব্দ তাদের বধির করে দিচ্ছে। যার ফলে বাসায় পৌঁছানোর পর মাথাব্যথা, ঝিমঝিম ধরা এমন নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা দলের প্রধান স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান জানান, করোনার সময় সড়কে গাড়ির উপস্থিত কম থাকলেও শব্দদূষণের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। সংস্থাটি বলছে, দূষণ প্রতিরোধে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি দাবি জানান, সচিবালয়ের চারপাশে অধিকসংখ্যক সবুজ গাছ লাগানোর। তিনি বলেন, সরকার নীরব এলাকা ঘোষণা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে তা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০১৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে, যার মধ্যে ২৬ শতাংশই শিশু। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদকসহ উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী।