সরকার কয় দেশে গরিব নাই, এরা সবাই কি কোটিপতি?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪১ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজধানীর হাজারীবাগ গণকটুলির বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য কেনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। বৃদ্ধার এক হাতে তসবি আরেক হাতে পলিথিনের ব্যাগে হলুদ রঙের তরল কোনো খাবার। কী জন্য এখানে এসেছেন জিজ্ঞাসা করতেই বৃদ্ধা বলেন, আইছিলাম তো টিসিবির ট্রাক থাইক্যা চাউল, ডাল, তেল, চিনি কিনতে। মাগার টেরাকের তো দেহা নাই।
হাতের পলিথিনের খাবারটি নাড়িয়ে দেখিয়ে বলেন, ১০ ট্যাকা দিয়া কিনন্যা আনছি, এই যে ডাইলের পানি। কুত্তায় ভি খায় না। আমি আমাগো মতো গরিব খাইয়া বাঁইচ্যা আছি।
খেদোক্তি করে বৃদ্ধা বলেন, সরকার কয় দেশে গরিব নাই। এই যে ফুটপাতে লাইন ধইরা বইয়া আছে, এরা কি বড়লোক, কোটিপতি? সব কিছুর এত্তো দাম, এগুলো কিনন্যা খাওয়ার সামর্থ্য আমাগো মতো গরিবগো নাই, সরকাররে কন আমরা কম দামে খাবার চাই।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন রাজধানীর পলাশীর মোড়ে ওই বৃদ্ধা এসব কথা বলেন। এ সময় শতাধিক নারী ও পুরুষকে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাকের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রবীণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকেও দেখা যায়। দেশের বাজারে চাল, ডাল, চিনি ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। পরিবার-পরিজন নিয়ে দু বেলা দু মুঠো খেয়ে কায়ক্লেশে বেঁচে থাকাটাই তাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকারিভাবে অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে যে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক থাকে, সেখানেই উপচেপড়া নারী, পুরুষ ও শিশুর ভিড় দেখা যায়। হতদরিদ্র মানুষদের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়, এমনটা বলা হলেও বাস্তবে করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়ে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসান করে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে টিসিবির পণ্যের জন্য লাইনে দাঁড়ান। আজ বুধবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক আসার জন্য অপেক্ষমাণ ও ট্রাক থেকে পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়ানো নারী ও পুরুষদের সঙ্গে আলাপকালে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হাহাকার ও ক্ষোভ জানাতে দেখা গেছে।
বিশেষ করে বৃদ্ধ যারা শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না, তারা বলেছেন, বাজারের প্রচলিত দামে পণ্য কিনে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু টিসিবির পণ্য কিনতে এসেও বেশিরভাগ সময় পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। খাতা-কলমে প্রতিটি ট্রাকে কমপক্ষে ৩০০ মানুষের কাছে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বেশিরভাগ সময় দেড় থেকে দুইশ জনকে পণ্য দেওয়ার পর ট্রাক মালামালশূন্য হয়ে যায়। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য শেষ হওয়ায় ফিরে যান।
আজহার নামে এক প্রতিবন্ধী জানান, তাদের মতো গরিব-প্রতিবন্ধীদের জন্য সহজে পণ্য কেনার সুবিধা নাই। শারীরিকভাবে সুস্থদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়াতে হয়। তিনি অভিযোগ করেন, টিসিবির পণ্য বিক্রেতারা সিরিয়াল নম্বর দিলেও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক সময় সিরিয়ালে থেকে পণ্য কিনতে পারেন না।
মতিউর রহমান নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘সকাল থাইক্যা টিসিবির ট্রাকের জন্য বইয়া রইছি। কহন আহে ঠিক নাই। বৃদ্ধদের জন্য আলাদা লাইন করলে ভালো হতো। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি টিসিবির ট্রাকে প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১১০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৩০ কেজি টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারমূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দাম কম হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।