ডিএসসিসির ভুয়া কার্যাদেশে ৫৫ লাখ টাকার কাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৬ এএম, ৮ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকারি সংস্থায় জরুরি প্রয়োজনে মালামাল কেনাকাটায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথডের (ডিপিএম) সুযোগ রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানের অনুমোদন লাগে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, এ বিভাগের প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তার (উপ-সচিব) বদলে পৃথক দুটি কার্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন এক ভান্ডার রক্ষক। এ ভান্ডার রক্ষকের নাম শেখ কামাল হোসেন। ১৪ গ্রেডের এই কর্মচারী ডিএসসিসি শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই ভুয়া কার্যাদেশ দিয়ে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে ওই কার্যাদেশ এবং স্বাক্ষর নিজের নয় বলে দাবি করেছেন কামাল হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব জানান, নিয়ম অনুযায়ী বিভাগের প্রধান কার্যাদেশের অনুমোদন (স্বাক্ষর) দেন। ভান্ডাররক্ষকের স্বাক্ষরে ভুয়া কার্যাদেশ দেয়ার ঘটনা তার জানা নেই। ডিএসসিসির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৬ জুন রহি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের ভুয়া (আট হাজার বেতের টুকরি ও ১৫০টি দা) কার্যাদেশ দেন ভান্ডাররক্ষক শেখ কামাল হোসেন। একই দিন মেসার্স জে এম ট্রেডিং নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৩৩৭টি হাতগাড়ি (রাস্তা ঝাড়– দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহে ব্যবহার হয়) সরবরাহের কার্যাদেশ দেন তিনি।
শেখ কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই দুটি কার্যাদেশ প্রায় ৫৫ লাখ টাকার। ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর সম্প্রতি এমন ভুয়া কার্যাদেশের বিষয়টি নগর ভবনে জানাজানি হয়। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রহি এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স জে এম ট্রেডিংয়ের ঠিকাদাররা। সংস্থাটির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই দুটি কার্যাদেশ দেয়ার আগে তাদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন কামাল হোসেন। কিন্তু ভুয়া কার্যাদেশের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই দুই ঠিকাদারকে চুপ থাকতে বলেছেন তিনি। ভবিষ্যতে অন্যান্য কাজ দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন কামাল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি আর কোনো কাজ দেননি। ঘুষের সাত লাখ টাকাও ফেরত দেননি। এখন টাকা ফেরত চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ঠিকাদাররা। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ কামাল হোসেন বলেন, ‘ওই দুটি কার্যাদেশ ভুয়া, এটা সত্য। কার্যাদেশে স্বাক্ষর আমার নয়। এখানে আমার স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে। যদিও ডিএসসিসির ভান্ডার ও ক্রয় বিভাগের অন্যান্য ফাইলে শেখ কামাল হোসেনের স্বাক্ষর আর ওই দুটি কার্যাদেশের স্বাক্ষরে মিল পাওয়া গেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসি সচিব দফতরের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কামালের বিরুদ্ধে তিনটি বিভাগীয় মামলা হয়েছিল। এর বাইরে আরেকটি ঘটনায় তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তারপরও সিটি করপোরেশন শাখা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের ক্ষমতা দেখিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে আছেন। এখন ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন কর্মকর্তার বদলি বাণিজ্য এবং হয়রানি করছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।