ক্ষুব্ধ ডিএসইর কর্মীরা, এমডি-সিওও ঘেরাও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ১৯ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৩ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক আমিন ভূঁইয়া এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) এম সাইফুর রহমান মজুমদারের কার্যালয় ঘেরাও করেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ক্ষুব্ধ কর্মীরা এই দুই কর্মকর্তার রুমে সামনে অবস্থান নেন।
ক্ষুব্ধ কর্মীদের অভিযোগ, পরিচালনা পর্ষদ সভায় কর্মীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা প্রভাব খাটিয়ে কমিয়ে দিয়েছেন এই দুই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ডিএসইর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বুধবার (১৭ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৪ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কর্মীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পর্ষদ সভায়। তবে প্রভাব খাটিয়ে সিওও কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সিওওকে তার কার্যালয়ে ঘেরাও করে রাখেন। সেই সঙ্গে এমডির কাছেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কর্মীরা। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া বলেন, গতকালের পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এবার আমরা শেয়ারহোল্ডারদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবো। কর্মীদের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা এবং সিওওর কার্যালয় ঘেরাওয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন বিয়ষটি তেমন না। দুই বছর তারা ইনক্রিমেন্ট পাননি। তারা তাদের দাবি জানাতে এসেছিলেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গতকালের পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৪ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা কর্মীদের তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই। এসময় ডিএসইর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়, কর্মীদের অভিযোগ সিওও প্রভাব খাটিয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সিওওর কক্ষ ঘেরাও করেছেন। এটি শুনে তিনি বলেন, এমনটা তো হওয়ার কথা না। তারপরও বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি। তবে বোর্ডে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কমানোর কথা না। এরপর অফিসে খোঁজ নিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টা আসলে সেরকম না। গতকাল বোর্ডে কর্মীদের কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা জানতে কিছু কর্মী এমডির কাছে গিয়েছেন। তারা জানতে চাচ্ছেন তাদেরকে কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অনেক দিন ধরে ডিএসইর কর্মীদের ইনক্রিমেন্ট আটকে ছিল। এটা আমাদের আগের পর্ষদ দিয়ে যায়নি। আমরা এখন কর্মীদের তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে চাচ্ছি। কর্মীদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা না দিলে তারা কাজের প্রতি মনোযোগী হবেন না।
এদিকে ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডিএসইর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে আমাদের বেতন-ভাতাদি, সার্ভিস রুল, অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দফায় দফায় কমানো হয়েছে, যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৮(ছ) ধারার ব্যত্যয়। এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কয়েকদফা বৃদ্ধি করেছেন, সেই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বিভিন্ন সময়ে কর্মীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরিবর্তে বন্ধ করে দিয়েছে। যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৮(ছ) ধারার পরিপন্থী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মীদের যেসব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করেছে তার একটি চিত্রও তুলে ধরা হয় চিঠিতে। এর মধ্যে রয়েছে-
> ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পারফরমেন্স ইনক্রিমেন্ট বাতিল।
> ২০১৯-২০ অর্থবছরের ইনক্রিমেন্ট, পারফরমেন্স ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা।
> অর্জিত ছুটি বাতিল (কর্মীদের জমানো অর্জিত ছুটি)।
> অর্জিত ছুটির টাকা বাতিল। গুটিকয়েক কর্মকর্তাকে টাকা প্রদান এবং বাকিদের বিনা নোটিশে ছুটির টাকা প্রদান না করা।
> যাতায়াত ভাতা বাবদ মূল বেতনের ২০ শতাংশ কর্তন।
> খাদ্য ভাতা বন্ধ। মাসিক ১ লাখ টাকা ক্যান্টিন বাবদ এবং জুনিয়র কর্মীদের কর্মস্থলের বাইরে কাজের কারণে যে খাদ্যভাতা প্রদান করা হয়।
> প্রফিট বোনাস ৫ শতাংশ বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলমান।
> এলএফএ (লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট) বাবদ বেতনের ১০ শতাংশ কর্তন।